সিগারেটে আসক্তি বাড়িয়ে তুলছে মেয়েলি সমস্যার জট। ছবি: আইস্টক।
অফিসের অবসরে মাঝে মাঝেই সিগারেটে টান। বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দেওয়ার অজুহাতে এই একচেটিয়া অধিকার আর একা পুরুষের নেই। মহিলারাও এই স্বভাবকে আপন করেছেন অনেক আগেই। ছেলে হোক বা মেয়ে ধূমপান উভয়ের জন্যই চরম ক্ষতিকর। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে এই স্বভাবকে ‘বেশি ক্ষতিকর’ বলে দাবি করছে চিকিৎসামহল। এমনকি, মেয়েদের মেনোপজের সময় এগিয়ে আসা-সহও অন্যান্য মেয়েলি জটিলতা বাড়িয়ে তুলছে এই স্বভাব।
মেয়েদের ক্ষেত্রে সিগারেটকে আপন করার নেপথ্যে সামাজিক পরিকাঠামো, সমানাধিকার নানা যুক্তিজাল রয়েছে। কোথাও বা কাজের চাপ সামলাতে সুখটানের শরণ নিয়েছেন মেয়েরা। কোথাও আবার নিছক ভাল লাগা ও শখ থেকেই এই স্বভাবকে আপন করে নেন অনেকেই। এই শহরেও কলেজ ছাত্রী থেকে কর্মরতা— আঙুলের ফাঁকে সিগারেটেই খুঁজে পাচ্ছেন অবসরের আরাম। সম্প্রতি গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা পৃথিবীতেই মেয়েদের সিগারেট খাওয়ার মাত্রা বাড়ছে— যা অত্যন্ত ভয়ের।
ধূমপান নিয়ে বহু সতর্কতা, চিকিৎসকের বারণ এ সব নারী-পুরুষ নির্বিশেষ রয়েছে। তার পরেও ধূমপায়ীদের স্বভাব বদলাচ্ছে না। চিকিৎসকদের মতে, ধূমপানের ক্ষতিকর দিকটি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। ফুসফুসের ক্যানসার, হার্টের অসুখ নানা ভয়াল সমস্যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হানা দেয় এই ধূমপানের হাত ধরেই। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে সমস্যা কেবল এই সব অসুখে সীমাবদ্ধ নেই।
আরও পড়ুন: শরীরচর্চা করার জন্য আলাদা করে সময় নেই? এ সব কৌশলে সে ক্ষতি পুষিয়ে নিন রোজ
গর্ভাবস্থায় ধূমপান ক্ষতি করে ভ্রূণের। ছবি: শাটারস্টক।
আমেরিকান কলেজ অব অবস্ট্রিশিয়ান অ্যান্ড গাইনোকলজিস্ট (আকোগ)-এর মত অনুয়ায়ী, ধূমপানের প্রভাবে সার্ভাইকাল ক্যানসারের প্রভাব বাড়ছে মেয়েদের। তাদের সমীক্ষা অনুসারে, ধূমপায়ী নন এমন মহিলাদের তুলনায় ধূমপানে আসক্তদের এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় প্রায় ছ’গুণ।
শুধু তাই-ই নয়, ধূমপানের প্রভাবে ঋতুচক্রের নানা জটিলতা বাসা বাঁধছে শরীরে। ধূমপানে আসক্তদের মেনোপজের সময় কেবল এগিয়ে তো আসছেই, সঙ্গে অস্বাভাবিক ঋতুচক্রের প্রবণতাও প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এমনকি, ধূমপানের অতিরিক্ত আসক্তি বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়েও দেখা দিতে পারে বলে গবেষকদের মত।
মেয়েলি সমস্যার ক্ষেত্রে যে ধূমপানের প্রত্যক্ষ একটি প্রভাব রয়েছে, সে কথা প্রকাশ্যে আসা নতুন নয়। এর আগেও ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ জানিয়েছিল এই সমস্যার কথা। মেয়েলি অসুখের বাড়বাড়ন্ত ছাড়াও হার্টের ক্ষতির কথাও উল্লেখ করে তারা। এ বার তাতেই সিলমোহর দিল আমেরিকান কলেজ অব অবস্ট্রিশিয়ান অ্যান্ড গাইনোকলজিস্ট। আরও বিস্তারিত তথ্য-সহ তারা জানিয়েছে, সিগারেটের কার্বন মনোক্সাইড কী ভাবে গর্ভস্থ ভ্রূণের ক্ষতি করে। সিগারেটে থাকা নিকোটিন প্ল্যাসেন্টার মধ্যে দিয়ে গিয়ে ভ্রূণের হৃদগতি বাড়ায়। শুধু তা-ই নয়, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ধূমপান প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রেই গর্ভপাতের সমস্যা ডেকে আনে।
আরও পড়ুন: আপনার মস্তিষ্ক কত জনের চেহারা মনে রাখতে পারে জানেন?
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ কাবেরী বরাটও এই গবেষণার সঙ্গে একমত। তাঁর মতে, ‘‘সিগারেট খাওয়া ছেলে বা মেয়ে দু’জনের ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর। তবে মেয়েদের শারীরিক গঠনের কারণে জটিলতা বাড়ে বেশি। এমনকি, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার যে সব মহিলা, তাঁদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি বেড়ে যায়। শরীরে থাকা ভ্রূণের কাছে এই ধোঁয়া কার্যত বিষ। শুধু তা-ই নয়, পিরিয়ডের নানা সমস্যা, অকালে মেনোপজ এই সব জটিলতা এড়াতেও ধূমপানে রাশ টানা উচিত মেয়েদের।’’