চিকিৎসক না পেলে হাতের কাছেই রাখুন জরুরি ওষুধ। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।
উৎসবের মরসুমে হাতের কাছে বা ফোনের নাগালে সব সময় চিকিৎসক পাওয়া যায় না৷ তখন কষ্ট কমাতে কিছু ব্যবস্থা নিতে হয় নিজেকেই৷ চটজলদি কিছু পদক্ষেপও করতে হয় অসুস্থতা কমাতে। বিশেষ করে বাড়িতে কোনও শিশু ও বয়স্ক থাকলে কিছু ব্যবস্থা অবশ্যই মজুত রাখতে হবে হাতের কাছে।
যা যা ব্যবস্থা নিজে থেকে নিতে পারেন, তার একটা নির্দেশিকা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অভিজিত চন্দ্র৷ কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুজোর সময় চিকিৎসক না পাওয়ার সমস্যা নতুন নয়। আবার পেলেও যানজট। ভিড় এড়িয়ে তাঁর কাছে যাওয়াও কম ঝক্কির নয়। তবে কিছু অসুখ বাড়িতেও সামলে নেওয়া যায়। পুজোর মুখে কী করে সামলাবেন হঠাৎ হানা দেওয়া সে সব বিপদ— জেনে নিন।
কখন কী করবেন
রক্তচাপ কমে মাথা ঝিমঝিম করছে মনে হলে নুন–চিনির শরবত খান৷ সুগার বেশি থাকলে জলে শুধু নুন মিশিয়ে খাবেন৷ অনিয়মে রক্তচাপ খুব বেড়ে গেলে খান ৪০ মিগ্রা ফ্রুসেমাইড৷ গাউটের ব্যথা বাড়লে বরফ সেঁক দিন৷ নিয়মিত যে ওষুধ খান তা তখনকার মতো বন্ধ করে আইবুপ্রফেন, ইন্ডোমিথাসিন বা ন্যাপ্রক্সেন খেয়ে নিন, খানিক ক্ষণের মধ্যে কষ্ট কমে যাবে৷ সুগার কমেছে বুঝতে পারলে নুন–চিনির শরবত, গ্লুকোজ বা মিষ্টি, লজেন্স বা কোল্ডড্রিঙ্ক খান৷ গ্লুকোমিটারে যদি দেখেন সুগার বেড়েছে, ভাত–রুটি–আলু–চিড়ে– ইত্যাদি খাওয়া একেবারে কমিয়ে বিশ্রামে থাকুন৷ প্রথম সুযোগেই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নিন৷ মাইগ্রেনের তীব্র ব্যথা শুরু হলে ভরা পেটে এনসেড গোত্রের ব্যথার ওষুধ খান৷ অম্বলের ধাত থাকলে অম্বলের ওষুধ খেয়ে নেবেন আগে৷
আরও পড়ুন
হার্ট অ্যাটাক এড়াতে চান? আজ থেকেই মেনে চলুন এ সব
কাশি হলে নুন–গরম জলে গার্গল করুন৷ গরম জলের ভাপ নিন৷ ছবি: শাটাকস্টক।
দাঁত ব্যথা হলে গরম জলে নুন ফেলে কুলকুচি করুন৷ তুলোয় সামান্য লবঙ্গ তেল নিয়ে ব্যথার দাঁতে লাগিয়ে দিন৷ কান ব্যথায় গরম সেঁক দিন৷ না কমলে ১ গ্রাম প্যারাসিটামল খান৷ সিওপিডি বা হাঁপানির রোগীর ক্ষেত্রে যা যা ক্ষতিকারক— যেমন, আইসক্রিম, ঠান্ডা নরম পানীয় বা ঠান্ডা জল খেয়ে কিংবা দেদার সিগারেট–হুঁকো টেনে শ্বাসকষ্টে ভুগলে সাহায্য নিন সালবুটামল ইনহেলারের৷ উপোস করা, ভুলভাল খাওয়া ইত্যাদি কারণে গ্যাস–অম্বলের বাড়াবাড়ি হলে ৪–৬ চামচ লিকুইড অ্যান্টাসিড খান৷ এরপর কষ্ট না কমা পর্যন্ত ঠান্ডা জল ছাড়া আর কিছু খাবেন না৷ তাতে না কমলে পিপিআই গ্রুপের অম্বলের ওষুধ আর ডমপেরিডন গ্রুপের ওষুধ খেয়ে নিন৷ বদহজম হয়ে বমি হলে প্রথম দু’–একবার হতে দিন৷ খাবার সব বেরিয়ে যাওয়ার পরও বমিভাব না কমলে ডমপেরিডন জাতীয় ওষুধ খান৷ পেট খারাপ হলে প্রতিবার মোশনের পর বড় এক গ্লাস নুন–চিনির শরবত বা ওআরএস খান৷ বিশ্রামে থাকুন৷ খিদে পেলে হালকা ঝোল–ভাত খান৷ এক বেলা বা এক দিনের মধ্যে রোগের প্রকোপ কমতে শুরু না করলে দুটো আইমোডিয়াম ট্যাবলেট খেতে হবে৷ তার ৪–৬ ঘণ্ঢা পরও কষ্ট একই রকম থেকে গেলে আরও একটা খেতে পারেন৷ পেটব্যথায় খান ডাইসাইক্লোমিন৷ ইউরিনে জ্বালা হলে জল খান ঘণ্টায় ঘণ্টায়৷ শরবত, ডাবের জল, ফলের রস ইত্যাদি খেতে পারেন দু’–এক বার৷ দিনে ৩–৪ বার অ্যালকালি মিক্সচার খান জলে মিশিয়ে৷
আরও পড়ুন
অজান্তেই সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছেন না তো? জানেন এর লক্ষণ?
অ্যালার্জি হাঁচি বা নাক দিয়ে জল পড়লে ১২০ মিগ্রা ফেক্সোফেনাডিন বা ১০ মিগ্রা সেটিরিজিন খান৷ কাশি হলে নুন–গরম জলে গার্গল করুন৷ গরম জলের ভাপ নিন৷ না কমলে, শুকনো কাশিতে খান কোডিন। কাশির সঙ্গে কফ উঠলে ব্রোমোহেক্সিন মেশানো কাফ সিরাপ খান৷ তবে কাফ সিরাপে সমস্যা থাকলে তা এড়িয়ে চলাই ভাল। সর্দি–কাশি–জ্বর হলে গরম জলের ভাপ টানুন, নুন–গরমজলের গার্গল করুন, ৬৫০ মিগ্রা প্যারাসিটামল খান দিনে ৩ বার, নাক দিয়ে জল পড়লে অ্যান্টিঅ্যালার্জিক খান৷ নাক বন্ধ হয়ে গেলে নর্মাল স্যালাইন ড্রপ দিন নাকে৷ পা মচকালে ব্যথার মলম লাগিয়ে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে রাখুন৷ পা বালিশ বা টুলের উপর রেখে বিশ্রাম নিন৷ প্যারাসিটামল খেতে পারেন দু’–একটা৷ পায়ে ফোসকা পড়লে টেপ ব্যান্ডেজ লাগান৷ ঘাড় বা কোমর ব্যথা হলে ব্যথার মলম লাগিয়ে গরম সেঁক দিন৷ কেটে গেলে উষ্ণ জলে ধুয়ে পরিষ্কার করে মুছে সোডিয়াম ফিউসিডেট আছে, এমন মলম লাগান৷ পোকা কামড়ালে সামান্য একটু টপিকাল স্টেরয়েড জাতীয় মলম লাগান৷
আরও পড়ুন
স্বাধীন হয়ে বাঁচতে চাইলেও বার্ধক্যজনিত পরাধীনতা
হাতের কাছে তৈরি রাখুন ফার্স্ট এড বক্স। ছবি: শাটারস্টক।
পুড়ে গেলে জায়গাটা ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত জল ঢালতে থাকুন৷ হাত–পা পুড়লে বালতির পরিষ্কার জলে ডুবিয়ে রাখুন৷ পাটভাঙা পরিষ্কার কাপড়ে জায়গাটা আলতো হাতে মুছে পভিডন আয়োডিন দ্রবণ বা মলম লাগিয়ে পাটভাঙা কাপড় বা জীবাণুমুক্ত গজ চাপা দিন৷ প্রচণ্ড জ্বর, বুকে কফ, মারাত্মক পেট খারাপ, প্রস্রাবে জ্বালা ইত্যাদি কারণে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷ জটিল কোনও উপসর্গ দেখা দিলে কাছাকাছি যে হাসপাতাল পাবেন, সেখানে ভর্তি হয়ে যান৷ তারপর প্রয়োজনে অন্য হাসপাতালে যেতে হবে৷