নাক ডাকার সমস্যাকে নেহাতই বদভ্যাস বলে এড়িয়ে যাবেন না। ছবি: আইস্টক।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নাক ডাকেন? পরিবারের অভিযোগ ছাড়া তেমন করে কখনও মাথাই ঘামাননি এই সমস্যা নিয়ে? তা হলে এ বার কিন্তু সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।
আধুনিক জীবনযাত্রা ও পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাসের ফলে ঘুমের মধ্যেও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে বলে মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র। এমনিতেই মেদবাহুল্য, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা ইত্যাদি কারণে ঘুমের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকেই। সম্প্রতি নাক ডাকার অভ্যাসকেও খুব একটা ‘নিরাপদ’ বলে ভাবতে রাজি নন চিকিৎসকরাও। শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা ছাড়াও স্লিপ অ্যাপনিয়াকেও এই অতিরিক্ত নাক ডাকার কারণ হিসাবে চিহ্নিত করছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণেও নাক ডাকার এই সমস্যা আসতে পারে, যা বাড়িয়ে তুলছে হৃদরোগ। ডেকে আনছে মৃত্যুর ঝুঁকি।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক হেলথ জার্নালের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেখানকার প্রায় ৩ কোটি মানুষ এই স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত। জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের মত, স্লিপিং ডিসঅর্ডারের এই সমস্যা হৃদপিণ্ডের ডান এবং বাঁ দিকের ভেন্ট্রিকলেরখুব ক্ষতি করে, ফলে শ্বাসপ্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন: ভোল পাল্টে ‘অচেনা শত্রু’ শীতকালীন ইনফ্লুয়েঞ্জা, দেখে নিন ঠেকানোর উপায়
যখন-তখন ঘুম, ঝিমুনি এ সব লক্ষণ হঠাৎ দেখা দিলে সাবধান হোন।
স্লিপ অ্যাপনিয়া নিয়ে একই মত এ দেশের বিশেষজ্ঞদেরও। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের শারীরবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চিকিৎসক মণিকা সাধুর মতে, অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রভাবে অনেকে নাকও ডাকেন। তাই নাক ডাকাকেও একেবারেই অবহেলা করা উচিত নয়। বয়স হলেই নাক ডাকে মানুষ— এই মিথও তাই ভুলে যাওয়া উচিত।এবং স্লিপিং অ্যাপনিয়ার শিকার হচ্ছেন কি না, তা নিয়ে চিকিৎসকের শরণ নেওয়া উচিত।
উপসর্গ
স্লিপ অ্যাপনিয়ার মূল উপসর্গই নাক ডাকা। এ ছাড়াও সারা দিন একটানা ক্লান্তি, ঘুমঘুম ভাবের সঙ্গে আচমকাই খিটখিটে মেজাজের শিকার হলে এই অসুখ বাসা বাঁধছে কি না তা নিয়ে সাবধান হোন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমিয়ে পড়ার পর ঘাড় ও গলার পেশি শিথিল থাকে। ফলে স্লিপিং ডিজঅর্ডার থাকলে শ্বাসযন্ত্রে চাপ পড়ে ও শ্বাসপ্রক্রিয়া বাধা পায়। এতে মস্তিষ্ক ও শরীরের কোষগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহ হঠাৎ করেই অনেকটা কমে যায়। ফলে স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রভাবে আকস্মিক শ্বাসপ্রক্রিয়া ব্যহত হয়ে মৃত্যু হতে পারে।
আরও পড়ুন: পার্টিতে মদ খাবেন? তা হলে এ সব খাবার ছুঁয়েও দেখবেন না
নিয়ন্ত্রণ
স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা আছে বুঝলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। চিকিৎসার সঙ্গে ওজন নিয়ন্ত্রণে মন দিন। খাওয়ার ঠিক পরেই শুয়ে না পড়ে একটু হাঁটাহাঁটি করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রয়োজনীয় যোগব্যায়াম আয়ত্তে আনুন। হজমের সমস্যা কমলে নাক ডাকার সমস্যা থেকে কিছুটা মুক্ত হওয়া যায়। শোয়ার ভঙ্গি পরিবর্তন করুন। চিত হয়ে না শুয়ে এক পাশ ফিরে শুলে শ্বাসযন্ত্রের উপর চাপ কম পড়ে।
(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।)