Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
flu

ভোল পাল্টে ‘অচেনা শত্রু’ শীতকালীন ইনফ্লুয়েঞ্জা, দেখে নিন ঠেকানোর উপায়

নতুন চেহারার এই ফ্লুয়ের কারণ কী? কী কী উপসর্গ দেখা যায় এতে? আছে না কি কোনও চটজলদি সমাধান? ভোল বদলের এই ফ্লু নিয়েই কথা বললেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী।

চরিত্র বদলে ঘরে ঘরে হানা দিচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা। ছবি: আইস্টক।

চরিত্র বদলে ঘরে ঘরে হানা দিচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা। ছবি: আইস্টক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:৩৬
Share: Save:

আবহাওয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে ভোল বদলে আমার-আপনার ঘরে হানা দিচ্ছে তীব্র তাপমাত্রা, হাঁচি-কাশি ও মাথা যন্ত্রণার উপদ্রব। সাধারণ জ্বরজারি বা শ্লেষ্মাজনিত কারণে হওয়া সারা বছরের চেনা ফ্লু-কে চিনতে পারছেন না চিকিৎসকরাই! চারিত্রিক বদল ঘটিয়ে শরীরে হানা দেওয়া এই ফ্লু নিয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে রোগী থেকে চিকিৎসক সকলকেই।

ইনফ্লুয়েঞ্জার ভয় কেবল শীতে নয়, একপ্রকার সারা বছরই এই অসুখের জুজু তাড়া করে বেড়ায় আমাদের। তবে শীতে যে সব অসুস্থতার প্রকোপ ইদানীং খুবই বাড়ছে, তাদের মধ্যে অন্যতম ইনফ্লুয়েঞ্জা। সাধারণত, শীতকালের জ্বর মানেই আমরা ধরে নিই, সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা লাগার সংক্রমণ থেকে ছড়িয়ে পড়া জ্বর। অচেনা চেহারায় হানা দেওয়া ফ্লুয়ের শুরুটাও অনেকটা এরকমই। কিন্তু তার পরেই নিজের চরিত্র বদলে আচমকাই কোপ বসাচ্ছে আক্রান্তের শরীরে।

নতুন চেহারার এই ফ্লুয়ের কারণ কী? কী কী উপসর্গ দেখা যায় এতে? আছে না কি কোনও চটজলদি সমাধান? ভোল বদলের এই ফ্লু নিয়েই কথা বললেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী।

আরও পড়ুন: এই সব উপায়ে কিডনির অসুখ থেকে মুক্ত থাকুন সহজেই

কেন হয়?

সুবর্ণবাবুর কথায়, ‘‘ইনফ্লুয়েঞ্জা মূলত ভাইরাসের আক্রমণে ঘটে। এন এবং এইচ এই দুই উপাদানের নানা প্রকারভেদেই অসুখের চরিত্রবদল ঘটে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, এই এন ও এইচ দুই উপাদানের (প্রোটিনের গঠনভিত্তি উপাদানের নাম) বিন্যাস ও সমন্বয়গত তফাতই নতুন নতুন ভাইরাসের জন্ম দিচ্ছে। পরিবেশের দূষণও শ্লেষ্মাজনিত কারণে ঘটা সংক্রমণ এর প্রধান কারণ। যার প্রভাবে ফ্লুয়ের জন্য আলাদা করে সরিয়ে রাখা ভ্যাক্সিনও কোনও কাজে আসছে না।’’

বিষয়টা অনেকটা চেনা শত্রুর অচেনা শক্তির মতো। যাকে শায়েস্তা করতে বহ্মাস্ত্র সরিয়ে রেখেছেন, সেই অস্ত্রের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষমতা আয়ত্তে এনে সে হাজির হল সামনে! ফলে চিকিৎসা করতে গিয়েও সমস্যায় পড়ছেন চিকিৎসকরা। ‘শিফ্‌ট’ ও ড্রিফ‌্ট’ দু’রকম পদ্ধতিতে চরিত্র বদলায় ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস। দ্রুত বদলে যাওয়ার ধরনকে শিফ্‌ট ও ধীরে ধীরে বদলালে তা ড্রিফ‌্ট পদ্ধতিতে বদলায়। কিন্তু এই নতুন চরিত্রের ফ্লু ভাইরাসরা ক্রমাগত শিফ‌্ট পদ্ধতিতে বদলে যাওয়ায় তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না প্রতিষেধক। যে কারণেই এই ফ্লু সারতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। ওষুধ কাজ করতে না পেরে আরও জটিল হচ্ছে সমস্যা।

আরও পড়ুন: সারা বিশ্বে দম্পতিদের যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়ার মূলে রয়েছে এই কারণ!

উপসর্গ

সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই এই অসুখেরও প্রাথমিক হানা জ্বর দিয়েই হয়। সঙ্গে গা-হাত-পায়ে ব্যথার সঙ্গে পেশীতে ব্যথা, অনেক সময় পেশীর খিঁচও দেখা দেয়। চরিত্র বদলের ফলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা বেড়ে যায় এবং প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধে সাময়িক কমলেও তা একেবারে ছেড়ে যায় না। ওষুধের প্রভাব কমলেই আবার কামড় বসায় জ্বর।

চিকিৎসা

জ্বরের ভ্যাকসিন দিয়েও এই অসুখ সারানো সমস্যা। তবু ভ্যাকসিন, প্যারাসিটামল ও পূর্ণ মেয়াদকাল জুড়ে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়াই এর চিকিৎসা। এ সব ছাড়া খুব একটা বিকল্পও কিছু নেই। জ্বর খুব বেড়ে গেলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। শ্বাসকষ্ট এলে অক্সিজেন দিতে হবে।

এড়ানো যায় কী ভাবে

ধুলো থেকে দূরে থাকুন। চার পাশে কারও হাঁচি-কাশি হলে তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। এই হাঁচি-কাশির সংক্রমণ থেকেই এই অসুখ সবচেয়ে বেশি ছড়াচ্ছে। শুধু মাত্র মুখ বা নাক চাপা দিয়ে হাঁচলে-কাশলেই এর থেকে রেহাই মেলে না। ওই হাত দিয়ে কেউ কিছু স্পর্শ করার পর আপনিও তা ধরলে সেখান থেকেও ছড়াতে পারে অসুখ। ​

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

নিজের ঠান্ডা লাগলে, হাঁচি-কাশির সময় হাত বা রুমাল ব্যবহার করলে তা দিয়ে অন্য কিছু ধরবেন না। বার বার হাত বা রুমাল ধুয়ে নিন। ঠান্ডা লাগলে বাড়ির অন্য সদস্যদের ব্যবহার করা জিনিস ব্যবহার করবেন না। পুষ্টিকর খাবার, সবুজ শাক-সব্জি ও মরসুমি ফল রাখুন ডায়েটে। শরীরকে প্রয়োজনীয় জল দিন। শীতকালে এমনিতেই জল কম খাওয়া হয়। সে দিকে নজর রাখুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Influenza Fitness Tips Health Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE