coronavirus

যাতায়াত গণপরিবহণে, ভিড় রাস্তাতে, কী করবেন কী করবেন না

একেই দূরত্ব বিধির বালাই নেই, তার সঙ্গে মাস্ক না থাকলে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সকলেরই উচিত ব্যাগে বাড়তি মাস্ক নিয়ে বাইরে বেরনো।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৪:১০
Share:

সামাজিক দূরত্ব এড়িয়ে চলুন যথাসম্ভব। ভিড় করলেই সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়বে। ছবি: পিটিআই

নভেল করোনার সংক্রমণ কমছে, এই দাবি নিয়ে শুরু হল আনলক-৪। কয়েক দিনের মধ্যেই চালু হবে মেট্রো, হয়ত বা লোকাল ট্রেনও। এই পরিস্থিতিতে সাবধান না হলে আরও এক বার কোভিড-১৯ সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।

Advertisement

সরকারি ভাবে যে পরিসংখ্যান জানা যাচ্ছে, তার বাইরেও অনেক উপসর্গহীন সংক্রমিত মানুষ আছেন যাঁরা পরীক্ষা করানোর কথা ভাবেননি। এছাড়া উপসর্গ সহ অনেকে আছেন ডিনায়াল মোডে যাঁরা নিজেরাই ভেবে নিয়েছেন, তাঁদের কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ হতেই পারে না। এঁদের থেকে এখনও কিন্তু রোগ ছড়াচ্ছে। প্রকৃত আক্রান্তের হিসেব নিয়ে এখনও কিছু ধোঁয়াশা আছে বলে জানালেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী।

গণপরিবহণ চালু হলে অত্যন্ত ছোঁয়াচে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল ভাবে বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই যতটা সম্ভব নিজেদের সাবধান থাকতে হবে, একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে বিবেচনা করে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে সুবর্ণবাবু মনে করেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি নেই মানেই কি করোনা, কী বলছেন চিকিৎসকরা

মেট্রো রেলই হোক বা লোকাল ট্রেন কিংবা বাস, অনেক দিন পর চললে ভিড় বেশি হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই সরকার থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ট্রেন, বাসের সংখ্যাও বাড়িয়ে দেওয়া দরকার। বাস স্ট্যান্ডে মানুষ অনেক সময় অপেক্ষা করার পর বাস এলে সকলে তাতে হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়েন। দূরত্ববিধি মেনে চলার কোনও বালাই থাকে না। আর থাকবেই বা কী ভাবে, সকলেরই সময়ের দাম আছে। নির্দিষ্ট সময় অফিস বা বাড়ি পৌছনোর তাড়া সবারই আছে। গণপরিবহণ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই সব ব্যাপার মাথায় রাখা দরকার।

শপিং মলের প্রবেশদ্বারে নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়োজন। জরুরি নিয়মিত স্যানিটাইজেশনের। ছবি:পিটিআই

মেট্রো রেলই হোক বা বাস, আধ ঘণ্টা-৪৫ মিনিট বিরতির পরিবর্তে ১০–১৫ মিনিট পর পর চালানোর ব্যবস্থা করলে দূরত্ব মেনে চলা অসম্ভব হবে না। একই সঙ্গে বাসের কন্ডাক্টরদেরও যাত্রীদের দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিতে হবে। নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রীর বেশি উঠতে দিলে চলবে না। মেট্রো রেলের প্রবেশ দ্বারেও নিয়ন্ত্রণ রাখা দরকার। কোভিড-১৯ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখা, ভিড় এড়িয়ে চলা। কিন্তু জনসংখ্যার নিরিখে গণপরিবহণ বাড়াতে না পারলে দূরত্ববিধি মেনে চলা অসম্ভব ব্যাপার।

আরও পড়ুন: রাতে জেগে, দিনে ঘুম? কোভিড আবহে কতটা ক্ষতি করছেন জানেন

ভিড়ে মাস্ক ছিঁড়েও যেতে পারে। একেই দূরত্ব বিধির বালাই নেই, তার সঙ্গে মাস্ক না থাকলে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সকলেরই উচিত ব্যাগে বাড়তি মাস্ক নিয়ে বাইরে বেরনো।

বাস বা অন্যান্য বেসরকারি পরিবহণ কম যাত্রী নিয়ে চললে যে ক্ষতির কথা বলা হয়, তার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারি স্তরে।

বাস ড্রাইভার বা কন্ডাক্টরদের যাত্রী পিছু কমিশনের সিস্টেম বাড়তি ভিড়ের জন্যে দায়ী। এই সিস্টেম বদলানো দরকার।

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ব্যাপারটা সঠিক ভাবে কার্যকর করা গেলেও অনেক সমস্যার সুরাহা হতে পারে।

আরও পড়ুন: ক্যানসার ঠেকাতে সঙ্গে থাকুক বিশেষ এই ফল-সব্জি

আমাদের দেশে লক ডাউন এবং আনলক, দুটোই করা হয়েছে একেবারে অবৈজ্ঞানিক ভাবে। এই কারণে কোভিড-১৯ সংক্রমণের দাপট এখনও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান সুবর্ণবাবু। আমাদের দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণে মৃতুহার কম বলে স্বস্তি পেলেও আদৌ যে কম, তা বলা যাচ্ছে না। ইউরোপ বা আমেরিকার তুলনায় মৃত্যু হার কিছুটা কম হলেও পাকিস্তানের তুলনায় কোভিডে মারা যাওয়ার হার অনেক বেশি, বললেন সুবর্ণবাবু।

মেট্রো বা লোকাল ট্রেন খুললে সংক্রমণের হার বাড়বে কি না সে বিষয়ে অপেক্ষা করতে হবে, সময়ই জানিয়ে দেবে কোন দিকে যাচ্ছে পরিস্থিতি। চিকিৎসকরা হাত গুণে তা বলতে পারেন না, অভিমত সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর। তবে ভিড় জায়গায় কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ে, তাই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা যায়। গণপরিবহণ খুলে দিলে ভিড় বেড়ে যাবে, ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবে। একই সঙ্গে এটাও ঠিক যে, কত দিনই বা মানুষ কাজকর্ম ছেড়ে বাড়িতে বসে থাকবে, অনন্ত কাল সব বন্ধ রাখা যায় না।

তাঁর কথায়, "যা করা যেত, সাধারণ মানুষকে সচেতন করে আমরা সেই কাজটাও করতে পারিনি। এখনও কলকাতা সহ বিভিন্ন শহর-শহরতলিতে মানুষ মাস্ক ছাড়া পথে ঘাটে ভিড় জায়গায় ঘুরছে। আবার অনেকে থুতনির তলায় মাস্ক পরে এক ছদ্ম আত্মবিশ্বাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নিয়ম-কানুনের কোনও তোয়াক্কা করছেন না এক শ্রেণির মানুষ। সরকার নির্বিকার, এই সব কারণের জন্যই রোগ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ছে।"

বাস, মেট্রো সহ অন্যান্য গণপরিবহণ চালু হলে নিয়ম মেনে সঠিক মাস্ক পরার পাশাপাশি হাত সাবান বা স্যানিটাইজ করার বিধি চালু রাখতেই হবে। নইলে সংক্রমিত হয়ে পড়ার ঝুঁকি ষোল আনা। এই মুহূর্তে কোভিড-১৯-এর টিকা আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ বলে মনে করেন অমিতাভবাবু। আরএনএ ভাইরাসের টিকা এত সহজে তৈরি করা সম্ভব নয়। এদিকে টিকা নিয়ে এত মাতামাতি হচ্ছে অথচ ভাল হত সার্স কোভ ২-র নির্দিষ্ট ওষুধ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে। অনেকেই এই বিষয়ে কোনও গুরুত্ব দিতে নারাজ। ওষুধ এসে গেলেও অতিমারি নিয়ন্ত্রণ করতে এতটা বেগ পেতে হত না বলে অমিতাভবাবু মনে করেন।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মরাপাই সেন্ট প্যাট্রিক স্কুলের শিক্ষিকা বেবি চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর সহকর্মীদের কেউ কেউ স্কুলে যাচ্ছেন অটো ভাড়া করে। বেবির মত, কলকাতা সহ শহরাঞ্চলে কিছু গণপরিবহণ থাকলেও মগরাহাট বা এই ধরনের গ্রামাঞ্চলের কর্মরতরা এই মুহূর্তে খুব সমস্যায় পড়েছেন।

সামাজিক দূরত্ব বিধি লাইন করে দাঁড়াতে হবে। গা ঘেঁষে দাঁড়ানোর অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। ছবি: পিটিআই

অটো বা গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া আসা করতে গিয়ে বেহাল দশা। লোকাল ট্রেন চালু না হলে এই অবস্থার থেকে মুক্তি সম্ভব নয়। এদিকে লোকাল ট্রেন চললে তাতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারটা সোনার পাথর বাটি বলে মনে করেন বেবি। খোলামেলা প্লাটফর্ম চত্বরে ইচ্ছে মতো ভিড় করে ট্রেনে চড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।

সরকারি কর্মী তাপস চক্রবর্তীর অফিস মির্জা গালিব স্ট্রিটে। অনেক মেহনত করে ভিড় বাসে অফিস যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। দূরত্ববিধি দূর অস্ত, দাঁড়ানোর জায়গা পেতেই কালঘাম ছুটে যায়। ইতিমধ্যে অফিসের কয়েক জন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় ২ সপ্তাহ ছুটি ছিল, স্যানিটাইজ করার জন্যে। তাপসবাবুর মত, পর্যাপ্ত বাস বা ট্রেন না চললে ভিড় কমানো অসম্ভব। এই পরিস্থিতে বেশির ভাগ মানুষই নিরূপায় হয়ে বেরচ্ছেন, তাই পরিবহণের ব্যাপারে সরকারের নজর দেওয়া উচিত বলে তাঁর মত। মাস্ক পরে, হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাকে দূরে রাখুন, ভাল থাকুন।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন