কোন মরসুমে কোন রুটি খাওয়া ভাল, কী বলছেন রন্ধনশিল্পী পঙ্কজ ভাদুরিয়া? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
রুটি বললেই গমের আটার তৈরি হাত রুটির কথাই মনে আসে। ভারতের যে কোনও প্রান্তেই গমের রুটি খাওয়ার চল রয়েছে। তবে শুধু গম নয়, উত্তর ভারতে জোয়ার, বাজরা থেকে ভুট্টার আটার রুটিও খাওয়া হয়। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজন ইদানীং তাঁদের ডায়েটে জুড়ছেন এই সব কিছুই। অনেকেই খাচ্ছেন রাগির আটাও।
জোয়ার, বাজরা হোক বা রাগি— সব মরসুমেই কি সব রুটি খাওয়া যায়? কেউ বলতেই পারেন বিষয়টি নির্ভর করবে ব্যক্তি বিশেষের স্বাদ-পছন্দের উপরে। তবে স্বাদ বদলের জন্যও রুটি বদলানো যায়। জনপ্রিয় রন্ধনশিল্পী পঙ্কজ ভদোরিয়া বাতলে দিলেন, কোন উপকরণ কোন মরসুমি খাওয়ার উপযোগী। শীতে কোনটি খাবেন আবার গরমের জন্য ভাল হবে কোন রুটি?
জোয়ার
জোয়ারের রুটি মোটা হওয়ার কারণে এক সময়ে অনেকে তা খেতেন না। কিন্তু পুষ্টিগুণের বিচারে জোয়ারের আটা বেশ এগিয়ে। প্রচুর ফাইবার থাকে এতে। হজমেও তেমন সমস্যা হয় না। এতে অল্প প্রোটিন মেলে। এ ছাড়া রয়েছে পটাশিয়াম, ফসফরাসের মতো একাধিক খনিজও। রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়তে পারে না এই রুটি খেলে। ফলে ডায়াবেটিকদের জন্যও ভাল। রন্ধনশিল্পী বলছেন, এতে থাকা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটের দরুন খাদ্য পরিপাক ধীরে হয় এবং ধীরে শক্তি নির্গত হয়। আবার গ্রীষ্মে জোয়ারের আটা ঠিক ভাবে হজম করতে, শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। ফলে গ্রীষ্ম এবং শীত বা বছরের যে কোনও মরসুমে তা খাওয়া যায়। জোয়ারের রুটি নরম করতে হলে এটি ঈষদুষ্ণ জলে ভাল করে মাখতে হবে।
বাজরার রুটি
বাজরার রুটি গ্লুটেন ফ্রি, ডায়াবেটিক বান্ধব। যথেষ্ট ফাইবার মেলে এতে। ক্যালশিয়াম, ম্যাগনিশয়াম, আয়রনের মতো খনিজও পাওয়া যায় এতে। রন্ধনশিল্পী বলছেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই ধরনের খনিজ গুরুত্বপূর্ণ, তা ছাড়া শীতের শুষ্ক মরসুমে ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও সাহায্য করে। শীতের দিনে বাজরার রুটি দারুণ কার্যকর। বিশেষত একটু ঘি দিয়ে সেঁকে নিলে বা ঘি মাখিয়ে সর্ষে শাক দিয়ে খাওয়া হলে স্বাস্থ্যের পক্ষে তা আরও ভাল হবে।
মক্কি রুটি
পঞ্জাব, হরিয়ানা-সহ উত্তর প্রদেশে ‘মক্কি দি রোটি’ আর ‘সর্ষো কা শাক’ খুব জনপ্রিয় খাবার। মক্কি হল ভুট্টার আটা। তা থেকে হালকা হলুদ রুটি তৈরি হয়। রুটি একটু মোটা হয় বটে, তবে ঠিক ভাবে বানাতে পারলে তা স্বাদুও হয়। পঙ্কজ জানাচ্ছেন, মক্কি রুটি শীতের জন্য আদর্শ। এতে রয়েছে বি-ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। সামগ্রিক ভাবে শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করে এটি।
রাগি রুটি
ফিঙ্গার মিলেট বা রাগির আটা থেকেও রুটি খাচ্ছেন অনেকে, কারণ পুষ্টিগুণ। ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে এতে। রাগির রুটি গরমকালেই খাওয়ার পরামর্শ রন্ধনশিল্পীর। এতে ক্যালশিয়াম এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। রন্ধনশিল্পীর পরামর্শ, রাগির রুটি যতটা সম্ভব পাতলা করে বেলে নিতে হবে। তার পর সেটি সেঁকে নিলেই চলবে। রাগির রুটির সঙ্গে ঠান্ডা টক দই এবং স্যালাড পরিবেশন করুন। রুটি খেয়ে অম্বল বা গ্যাস হলে, এতে কমবে।
গমের রুটি
জোয়ার, বাজরা, রাগির রুটির চেয়ে আটার রুটি হয় অনেক নরম এবং পাতলা। আটায় গ্লুটেন থাকে, যেটি হজম করতে কারও কারও সমস্যা হয়। তবে গ্লুটেন নিয়ে অসুবিধা না থাকলে আটার রুটি সকলের জন্য ভাল। এটি যে কোনও মরসুমেই খাওয়া যায়। পাতলা হয় বলে বয়স্করা, শিশুরা সহজে খেতে পারে।