eye sight

কম্পিউটারে এক টানা কাজ, 'ভিশন সিনড্রোম' থেকে বাঁচতে এই সব মানতেই হবে

লাগাতার সমস্যায় দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে

Advertisement

 সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২০ ১১:০৯
Share:

এক টানা ল্যাগপটপে কাজে চোখে চাপ বেড়েছে। ফাইল ছবি।

নভেল করোনার অতিমারি পরিস্থিতিতে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মানুষের দিনযাপন আমূল বদলে গেছে। ছোট থেকে বড় অজস্র মানুষ পড়াশোনা থেকে কাজকর্ম সব কিছুর জন্যেই অনলাইনে নির্ভরশীল। এই জন্যে দিনের অনেকটা সময় কাটাতে হয় কম্পিউটার বা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে। এর ফল চোখ লাল হয়ে জল পড়া, চোখে আর ঘাড়ে ব্যথা সঙ্গে চোখে চুলকানি ও চোখে করকর করছে কিছু একটা, এমন একটা ভাব। এই সমস্যার নাম ‘সিভিএস’ অর্থাৎ ‘কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম’। এই ব্যাপারটা খুব গুরুতর নয় ঠিকই কিন্তু লাগাতার সমস্যায় দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে কয়েকটা নিয়ম মেনে চললেই কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোমের হাত এড়ানো যায় বললেন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ শুভাশিস দাস।

Advertisement

বিশ্বের নানা দেশের সঙ্গে আমাদের দেশেও বৃহস্পতিবার পালিত হয়েছে ২০তম ‘ওয়ার্ল্ড সাইট ডে’ বা বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। লায়নস ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন, ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর দ্য প্রিভেনশন অফ ব্লাইন্ডনেস ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ২০০০ সালে অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে দৃষ্টিশক্তি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

‘ওয়ার্ল্ড সাইট ডে’-তে দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখার পাশাপাশি অন্ধত্ব নিবারণে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয় বলে জানালেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ জিতেন্দ্র শাহ। এ বছরের ‘ওয়ার্ল্ড সাইট ডে’-র থিম ‘হোপ ইন সাইট’। এই মুহূর্তে বিশ্বের ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষের স্বল্প দৃষ্টিশক্তির কারণে চশমার প্রয়োজন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষেরই চশমা কিনে পরার সামর্থ্য নেই। তাই তাঁদের দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ অস্বচ্ছ হয়ে পড়ছে। আবার প্রতি ৪ জন স্বল্প দৃষ্টির মানুষের মধ্যে ৩ জনেরই সমস্যার সমাধান করা যায় সহজে। অথচ সচেতনতার অভাবে তাঁরা ক্রমশ দৃষ্টিহীন হয়ে পড়ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ঘরবন্দি বাচ্চা বুঁদ টিভি-মোবাইলে, সামলাতে কী কী করতেই হবে

চোখে সমস্যার মূলে আছে কম্পিউটার আর মোবাইল ব্যবহার। কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম (সিভিএস)-এর প্রধান কারণ নাগাড়ে এক দিকে ঘাড় কাত করে বা সোজা করে রাখা। এর ফলে ঘাড়ের পেশিতে রক্ত চলাচল কমে শক্ত হয়ে যায়। তাই ঘাড়ে-মাথায় ব্যথা করে। তবে শুধু ঘাড় মাথা আর চোখেই সমস্যা আটকে থাকে না, পিঠে, কাঁধে আর হাতেও ব্যথা করে। এ সবের মূলেই কিন্তু এক ভঙ্গিমায় অনেক্ষণ ধরে বসে থাকা জানালেন চক্ষু চিকিৎসক জিতেন্দ্র শাহ। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথের সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে যাঁরা দিনে গড়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা কম্পিউটারে কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৯০% এই সমস্যায় ভুগছেন।এঁদের মধ্যে আবার বেশিরভাগের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছর।

আরও পড়ুন: সব সময় শাসন নয়, ‘স্পেস’ দিন শিশুদেরও

কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোমের পিছনে কয়েকটি কারণ আছে, যা একটু চেষ্টা করলেই এড়িয়ে চলা যায়। স্বাভাবিক নিয়মে আমাদের ঘন ঘন চোখের পলক পড়ে। চোখের পাতার তলায় থাকে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম গ্রন্থি। পলক পড়লে এর থেকে বিশেষ ধরনের জল বেরোয়। এটি চোখের মণিকে ভিজিয়ে রাখে।

চোখ ভাল রাখতে ভিজে থাকা দরকার। কিন্তু কম্পিউটার বা মোবাইলে কাজ বা চ্যাট করার সময় বেশিরভাগ মানুষই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। চোখের পলক পড়ে না। তাই লুব্রিক্যান্ট বেরতে পারে না। এর ফলে চোখ যায় শুকিয়ে।

গেম খেলার বা সিরিজ দেখার সময় বেঁধে দিন বয়স অনুযায়ী। ফাইল ছবি।

চোখ শুকিয়ে গেলেই যত সমস্যার উৎপত্তি। চোখ করকর করে, লাল হয়ে জল পড়ে, ঝাপসা দেখায়, কখনও কখনও ডাবল ভিশন হয়, তার সঙ্গে ঘাড়ে মাথায় আর পিঠে ব্যথা করতে পারে। কাঁধে আর কব্জিতেও ব্যথা করে। কম্পিউটারের স্ক্রিন বেশি উজ্জ্বল হলে বা কম আলোয় কাজ করলে অথবা খুব কাছে বা অনেকটা দূরে স্ক্রিন থাকলে সমস্যা বেশি হয়। শুধু কম্পিউটারই নয়, মোবাইল, ট্যাবলেট বা আই প্যাড ব্যবহার করেও একই সমস্যা দেখা যায়।

আরও পড়ুন:

আজকের দুনিয়া কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ছাড়া অচল। কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহারে কয়েকটা নিয়ম মেনে চললে আর সমস্যা পড়তে হবে না, ভরসা দিলেন শুভাশিস দাস। এই বিষয়ে প্রথমেই আমরা বলি ২০-২০-২০ রুল এর কথা। ২০ মিনিট কম্পিউটারে কাজ করার পর ২০ ফুট দূরে তাকাতে হবে ২০ সেকেন্ডের জন্যে। খুব ভাল হয় উঠে দাঁড়িয়ে দু-তিন মিনিট জানলার পাশ থেকে ঘুরে এলে। সবুজের দিকে তাকালে চোখের আরাম হয়। কিছুক্ষণ কাজ করার পর উঠে গিয়ে চোখে জল দিয়ে এলেও ভাল হয়। প্রয়োজন হলে আইটোন বা রিফ্রেশ জাতীয় ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে যাঁদের চোখে অল্পস্বল্প পাওয়ার আছে তাঁদের চশমা ছাড়া কাজ করলে সমস্যা বেড়ে যায়। কম্পিউটার যদি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের কাছাকাছি থাকে এর ঠান্ডা বাতাসে চোখ আরও শুকিয়ে যায়। এ ছাড়া নিয়ম করে ঘাড় ও চোখের ব্যায়াম করা দরকার।

আরও পড়ুন: বাইরে বেরচ্ছেন রোজ? করোনা ঠেকাতে এই সব মানতেই হবে নিউ নর্ম্যালে

এক নজরে জেনে রাখুন

• কম্পিউটার ও মোবাইলের স্ক্রিন যেন অতিরিক্ত উজ্জ্বল না হয়, আলো কমিয়ে রাখুন।

• স্ক্রিন থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

• সঠিক ভঙ্গিমায় বসে কাজ করতে হবে। কম্পিউটারের মনিটরের উপরের দিক চোখের সোজাসুজি থাকলে ভাল হয়।

• চশমা পরে কাজ করলে অ্যান্টিগ্লেয়ার লেন্স ব্যবহার করলে ভাল হয়।

• ২০– ২০–২০ নিয়ম মেনে চলতেই হবে, এমনই মত চিকিৎসকদের। ২০ মিনিট পর পর চোখকে অন্তত ২০ সেকেন্ডের জন্যে বিশ্রাম দিতে হবে।

• চোখে লুব্রিক্যান্ট আই ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন