ওজন কমানোর জন্য ইদানীং অনেকেই বেছে নিচ্ছেন হাই প্রোটিন ডায়েট, যে ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা থাকে কম। এ ধরনের ডায়েটে কীভাবে কমে ওজন? এই ডায়েটের পিছনে মূল ভাবনাটি হল, কার্ব কমানোর মাধ্যমে ইনসুলিন লেভেলও নামতে থাকে। তার ফলে শরীর বেশি করে গ্লুকাগন উৎপন্ন করে, যা জমে থাকা ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে। ফলে আপনারও ওজন কমে।
কী-কী খাবার থাকতে পারে এই ডায়েটে?
চিকেন, টার্কি, ল্যাম, হ্যাম, পর্ক, টুনা-স্যামন ও নানা রকম ছোট মাছ কোনওটাই আপনার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়বে না। কিন্তু যে সব মাংসে, যেমন পর্ক ও ল্যাম, স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে, তা যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়। মাটন ও চিংড়ি পারলে বাদ দিন। এর বদলে খান বিভিন্ন ধরনের মাছ, চিকেন এবং ডিম।
অনেকেরই প্রশ্ন থাকে, লো কার্ব ডায়েট মানে কি ভাত বাদ? বাঙালির ডায়েট চার্ট কি ভাত বিহনে করা উচিত? ভাত খাবেন। তবে অল্প পরিমাণে। কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট খাবেন, যাতে ফাইবার কনটেন্ট বেশি। যেমন ব্রাউন ব্রেড, ওটস, ব্রাউন রাইস ইত্যাদি। সন্ধে সাতটার পর কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাবেন না।
স্ন্যাক্সে তো আর চিকেন বা ফিশ ভাল লাগে না, তখন চাই হালকা কিছু। তাই থাকুক নানা রকম বাদাম, কুমড়ো, ফ্লাক্সসিড, সানফ্লাওয়ার সিড। তবে বাদামের পরিমাণ কিন্তু খুব বেশি হবে না এবং সিড বা বীজও যেন ছোট-ছোট হয়, কারণ তাতেও প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট থাকে। আর চা ছাড়া অনেকেরই দিন কাটে না, বিশেষ করে বিকেলে। তখন মিষ্টি ছাড়া চা। গ্রিন টি-ও চলতে পারে।
সব্জির মধ্যে খেতে পারেন পালংশাক, ব্রকোলি, ফুলকপি, গাজর। এ ছাড়াও জুকিনি, মাশরুম, সেলেরি, স্কোয়াশেও কার্বের পরিমাণ কম। ফলে শুধু মাছ মাংস ডিম খেয়ে স্বাদ নষ্ট হওয়ার ভয়ও নেই। এর সঙ্গে আপেল, কমলালেবু, তরমুজ, কালোজাম, স্ট্রবেরিও কিন্তু এ সময় খাওয়া যায়।
ডেয়ারি প্রডাক্ট যেমন চিজ, দই, ছানাতেও খুব ভাল প্রোটিন থাকে। বিশেষ করে দই আপনার হজমশক্তিকে বাড়াতেও সাহায্য করে এবং চিজের মধ্যে থাকা ক্যালশিয়াম হাড় ভাল রাখে। দুধেও রয়েছে প্রচুর ক্যালশিয়াম। তাই বিশেষ করে মহিলাদের হাড়ের ক্ষয় রোধ করার জন্য দুধ খাওয়াটা খুব দরকার। আপনার রোজকার ডায়েটে একটি ডেয়ারি প্রডাক্ট যেন অবশ্যই থাকে।
এ ধরনের ডায়েটে অপশন হিসেবে রাখতে পারেন টোফু, কিনোয়া, পিনাট বাটার, সেদ্ধ ডিম। এগুলো দিয়ে স্যালাড বানিয়েও খেতে পারেন। প্রয়োজনীয় প্রোটিনের পাশাপাশি এর মধ্যে পুষ্টি উপাদানও রয়েছে।
কার্বোহাইড্রেট কম খেলে সমস্যা হবে না তো?
আমাদের রোজকার শারীরিক কাজকর্মের জন্য যে ফুয়েল দরকার হয়, সেটা আসে এই কার্বোহাইড্রেট থেকে। তাই এই উপাদানটি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিলে শরীরে তার প্রভাব তো পড়বেই। সুতরাং কিং কর্তব্য? তাই কার্ব পুরোপুরি বাদ দেবেন না। হোল গ্রেন, ব্রাউন রাইসের মতো কার্বের হেলদি সোর্স রাখুন খাদ্যতালিকায়। শরীরের চাহিদা পূরণ হচ্ছে কি না, সেটাও মাথায় রাখা খুব দরকার। এর সঙ্গে হাই প্রোটিন ডায়েট সম্পর্কে আরও কয়েকটি কথা বলে রাখি।
• হাই স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত প্রোটিন খাবেন না। খাবেন ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন। এর সঙ্গে ফল ও সবজি থাকবে, যাতে কার্ব ও প্রোটিনের ব্যালেন্স যথাযথ থাকে। কার্ব-সমৃদ্ধ সবজি যেমন, আলু, মিষ্টি আলু, বিট, কর্ন মাঝেমধ্যে রাখুন ডায়েটে।
• শুধু ডায়েটে পরিবর্তন আনলেই হবে না, বেস্ট রেজাল্ট পেতে গেলে এক্সারসাইজ মাস্ট।
• কোনও রোগ থাকলে বা ব্রেস্ট ফিড করালে, ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে ডায়েট করবেন না।
পরিশেষে বলি, যথাযথ ভাবে এই ডায়েট করা গেলে ওজন কমবে, পাশাপাশি শরীরও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাবে। তাই না খেয়ে আর রোগা হওয়া নয়।