লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন, অভিনয়, গ্ল্যামার, খ্যাতি— বলিউডের কথা বললেই মনে পড়ে যায় এই শব্দগুলো। মুম্বইয়ের এই গ্ল্যামারাস জগৎ হাজার হাজার তরুণ-তরুণীকে আকৃষ্ট করে। বলিজগতে নাম করার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যান তাঁরা। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ চেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম এবং ভাগ্যের উপর ভর করে দর্শকের মনে জায়গা করে নেন। কেউ আবার সারা জীবন চেষ্টা করেও তেমন নাম করতে পারেন না।
আবার অভিনেতাদের মধ্যে কেউ কেউ বলিউডে প্রথম সারিতে নাম না করতে পেরে অন্য কোনও পেশা বেছে নেন। নিজ গুণে প্রতিপত্তি করেন। এমন অনেক উদাহরণই বলিউডে রয়েছে।
কিন্তু যে অভিনেতার কথা হচ্ছে তিনি কিশোর বয়সে আম বিক্রি করতেন। বলিউডে আসেন হঠাৎই। দর্শকদের কোনও একক বড় হিট ছবি উপহার দিতে না পারলেও শাহরুখ খান, আমির খানের মতো তারকাদের হিট ছবির অংশ তিনি। বলিউডের অন্যতম স্বনামধন্য বচ্চন পরিবারের জামাইও বটে। আর এখন ১১০ কোটি টাকার সংস্থার মালিক।
কথা হচ্ছে কুণাল কপূরের। শাহরুখ খান, আমির খান, মাধুরী দীক্ষিত, সইফ আলি খান, সঞ্জয় দত্তের মতো নামী তারকাদের সঙ্গে বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন কুণাল। প্রশংসাও কুড়িয়েছেন বিস্তর। অনেকেই কুণালকে তাঁর মনোমুগ্ধকর এবং বহুমুখী ভূমিকার জন্য মনে রেখেছেন।
কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, বলিউডের এই অভিনেতার শুরুটা ছিল খুবই সাধারণ। ১৯৭৭ সালের ১৮ অক্টোবর মুম্বইয়ে জন্ম কুণালের। তাঁর বাবা কিশোর কুমার এক জন নির্মাণ ব্যবসায়ী। মা কানন কপূর ছিলেন গায়িকা।
খুব কম বয়সে ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন কুণালও। জানা যায়, মাত্র ১৮ বছর বয়সে হংকংয়ে আম রফতানির ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
অভিনয়ের প্রতিও ভালবাসা ছিল কুণালের। সেই ভালবাসা থেকেই কিংবদন্তি অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের নাট্যদল ‘মোটলি থিয়েটার গ্রুপে’ যোগ দেন।
থিয়েটারের অভিনেতা-পরিচালক ব্যারি জনের কাছেও প্রশিক্ষণ নেন কুণাল। অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘অক্স’ ছবিতে সহকারী পরিচালকের কাজ করেন তিনি। অভিনেতা হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেন ২০০৪ সালে।
কুণাল অভিনীত প্রথম ছবির নাম ছিল— ‘মীনাক্ষী: আ টেল অফ থ্রি সিটিজ়’। সেই ছবির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন অভিনেত্রী তব্বু। তাঁরই বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল কুণালকে।
তবে কুণাল প্রথম নজর কাড়েন ২০০৬ সালে, রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার ছবি ‘রং দে বসন্তী’ ছবিতে অভিনয় করে। আমির খান, সিদ্ধার্থ, শরমান জোশী এবং আর. মাধবনের মতো একঝাঁক তারকার মাঝে আলাদা করে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন কুণাল। প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন সমালোচকদেরও।
এর পর ‘হ্যাটট্রিক’, ‘আজা নাচলে’, ‘লাগা চুনারি মে দাগ’, ‘ওয়েলকাম টু সজ্জনপুর’, ‘লমহা’র মতো ছবিতে অভিনয় করেন কুণাল। অভিনয় করেন নামীদামি তারকাদের সঙ্গে।
শাহরুখ খান অভিনীত সুপারহিট ছবি ‘ডন ২’-তেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এমনকি, দক্ষিণ ভারতের ছবিতেও অভিনয় করেছেন কুণাল।
গত ২১ বছরে কোনও একক হিট না থাকা সত্ত্বেও, কুণালের প্রতিভা সমাদৃত হয়েছে বহু বার। তবে খুব বেশি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাননি তিনি। যদিও পর্দার বাইরে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছেন।
২০১২ সালে সামাজিক, চিকিৎসা এবং পরিবেশগত কারণে সহায়তার জন্য তৈরি একটি ‘ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম’-এর সহ-প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কুণাল। সংস্থাটি বর্তমানে ১১০ কোটি টাকারও বেশি আয় করে বলে জানা গিয়েছে।
এর পাশাপাশি একটি নির্মাণ সংস্থারও মালিক তিনি। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুণালের মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১৭০ কোটি টাকা।
কুণালের ব্যক্তিগত জীবনে বিতর্ক জায়গা পায়নি। ২০১৫ সালে বচ্চন পরিবারের কন্যা তথা অমিতাভ বচ্চনের ভাইঝি নয়না বচ্চনকে বিয়ে করেন তিনি। নয়না পেশায় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার। ২০২২ সালে কুণালের পুত্রসন্তানের মা হন তিনি।
ব্যবসায়িক উদ্যোগের পাশাপাশি বর্তমানে কুণাল তাঁর পরবর্তী ছবি ‘বিশ্বম্ভরা’র প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। তেলুগু এই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন চিরঞ্জীবী।
আম বিক্রি থেকে শুরু করে বলিউড সুপারস্টারদের সঙ্গে অভিনয় থেকে, কোটি কোটি টাকার সংস্থার মালিক। কুণালের যাত্রা বহুমুখী প্রতিভা এবং অধ্যবসায়ের প্রমাণ।