সীমান্তে শত্রুর আক্রমণ দ্রুত ঠেকাতে এবং ঝটিতি প্রত্যাঘাতের দক্ষতা বাড়ানোর বড় পদক্ষেপ হিসেবে ভৈরব লাইট কমান্ডো ব্যাটালিয়ন গঠন শুরু করল ভারতীয় সেনা। সেনার এই বিশেষ ‘স্ট্রাইক’ ইউনিট তৈরি হচ্ছে ভারতের উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তে গুরুত্বপূর্ণ অভিযান দ্রুত পরিচালনার জন্য।
সেনাবাহিনীর নতুন সশস্ত্র ব্রিগেড রুদ্রের অধীনে থাকবে নতুন ভৈরব কমান্ডো ইউনিটগুলি। উঁচু এবং জটিল ভূখণ্ডে দ্রুত প্রত্যাঘাত হানা এবং একাধিক জায়গায় একসঙ্গে অভিযান চালাতে কৌশলগত বাহিনী হিসাবেও কাজ করবে ভৈরব কমান্ডোরা।
রণকৌশল বদলানোর প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে পাল্টে ফেলা হচ্ছে পদাতিক (ইনফ্যান্ট্রি) ব্যাটালিয়নগুলির খোলনলচে। বাহিনীর গঠনে পরিবর্তনের পাশাপাশি বদল আসছে অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জামেও।
জানা গিয়েছে, ভারতীয় সেনার তরফে কমপক্ষে পাঁচটি ভৈরব ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে বা গঠনের অন্তিম পর্যায়ে রয়েছে। ভারতের উত্তর এবং পশ্চিম সীমান্তের পাশাপাশি পূর্ব সীমান্তেও মোতায়েন করা হবে এই বাহিনী।
‘অপারেশন সিঁদুর’ পরবর্তী পরিস্থিতিতে পাকিস্তান এবং চিন সীমান্তকে আরও নিশ্ছিদ্র করতে ভৈরব কমান্ডো ব্যাটালিয়ন তৈরি করছে ভারতীয় সেনা। সেনা সূত্রের খবর, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৮২টি পদাতিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত করা হবে ভৈরব কমান্ডো বাহিনী এবং অশ্বিনী ড্রোন প্ল্যাটুনের একটি করে ইউনিট।
২০১৬ সালে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর ভৈরব ব্যাটালিয়ন তৈরির ভাবনা ভারতীয় সেনার মধ্যে বিকশিত হতে শুরু করে। ২০২০ সালে চিনের সঙ্গে সীমান্তে অচলাবস্থার পরে সেই ধারণা আরও স্পষ্ট হয়। ‘আর্মি ট্রেনিং কমান্ড’-এর অধীনে সেনাবাহিনীর ‘ইন্টিগ্রেটেড ব্যাটল গ্রুপ (আইবিজি)’ কাঠামোর মধ্যে একটি চটপটে, দ্রুত পদক্ষেপে সক্ষম কমান্ডো ধাঁচের বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
আইবিজির গঠন পদাতিক, আর্টিলারি বা সাঁজোয়া ব্রিগেডের মতো নয়। নির্দিষ্ট অভিযানের ভিত্তিতে দ্রুত গঠিত হয় আইবিজি। ভৈরব ব্যাটালিয়নগুলি এই আইবিজির অংশ হিসাবে কাজ করবে বলে খবর।
ফলে রুদ্র ব্রিগেডগুলি প্যারা-স্পেশ্যাল ফোর্সের সহায়তা ছাড়াই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ইউনিটগুলি কৌশলগত স্তরে কঠিন অভিযানগুলিতে দ্রুত কাজ করবে বলে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন এক বর্ষীয়ান সেনাকর্তা।
জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় মোতায়েন সেনা ব্যাটালিয়নগুলির সঙ্গে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘ঘাতক’ বাহিনীকে জুড়ে পাক ফৌজের মোকাবিলায় নির্ণায়ক সাফল্য এসেছে ইতিমধ্যেই। সেই লক্ষ্যেই এ বার এমন পরিবর্তন।
সেনার পদাতিক বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল অজয় কুমার জানিয়েছেন, পদাতিক, সিগন্যাল এবং আকাশ প্রতিরক্ষা (এয়ার ডিফেন্স) ব্যাটালিয়নগুলির অফিসার ও জওয়ানদের আনা হচ্ছে নতুন কমান্ডো ব্যাটালিয়নগুলিতে।
প্রতিটি ভৈরব ব্যাটালিয়নে থাকবেন ৬০০-৬৫০ কর্মী, যাঁর মধ্যে ২৫০ জন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয়তা বুঝে আরও ব্যাটালিয়ন যুক্ত করা হবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, ভৈরব ব্যাটালিয়নের পদাতিক বাহিনীর অস্ত্রসম্ভারে সাবেকি অ্যাসল্ট রাইফেল, হালকা মেশিনগান ও মর্টারের পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে রকেট লঞ্চার, ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, ভারী মেশিনগান।
পুরনো রেডিয়োর বদলে আসছে আধুনিক সফ্টঅয়্যার সম্বলিত যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ ছাড়া সীমান্তে নজরদারি, শত্রুসেনার হামলা প্রতিরোধ এবং পাল্টা হামলা চালানোর দক্ষতা অর্জন করতে প্রতিটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে ‘অশ্বিনী’ ড্রোন বাহিনীর একটি করে প্ল্যাটুন।
প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে, দুর্গম জায়গায় দ্রুত পৌঁছোনোর জন্য উচ্চ-গতিযুক্ত হালকা যানবাহন থাকবে ব্যাটালিয়নগুলির কাছে। জলে অভিযানের জন্য থাকবে ছোট নৌকা।
অনুসন্ধান এবং নির্ভুল লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্য ড্রোন এবং লয়টারিং যুদ্ধব্যবস্থাও থাকবে। বাহিনীর সঙ্গে থাকবে যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম।
তবে প্যারা কমান্ডোর মতো ভৈরব কমান্ডোরা আকাশপথে চলা কোনও অভিযানে অংশ নেবে না। পরিবর্তে, মাটিতে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এবং জটিল ভূখণ্ড জুড়ে শত্রুদমন অভিযান চালাবে তারা।
যুদ্ধের সময় দ্রুত অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি শত্রুদের রসদ এবং যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার দায়িত্বও থাকবে ভৈরব কমান্ডোদের কাঁধে। ধ্বংস করবে শত্রুর ঘাঁটিও।
এই বছরের শুরুতে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী রুদ্র ব্রিগেডগুলির কথা ঘোষণা করেন। ভারতীয় বাহিনী আধুনিকীকরণের পরবর্তী পর্যায় হিসাবেও চিহ্নিত করা হয় এই ব্রিগেডকে।
কার্গিল বিজয় দিবস উপলক্ষে তাঁর ভাষণে জেনারেল দ্বিবেদী বলেছিলেন, ‘‘ভৈরব এবং রুদ্রের গঠন একটি আধুনিক, বহুমুখী স্থলবাহিনীর দিকে ভারতের পদক্ষেপের প্রতিনিধিত্ব করে। ভূখণ্ড জুড়ে দ্রুত অভিযান চালাতে সক্ষম হবে এই বাহিনী।’’