বুধবার ভোর ৩টে ২৭ মিনিট নাগাদ (ভারতীয় সময়) নভশ্চর সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে নিয়ে ফ্লরিডার সমুদ্রে অবতরণ করেছে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন ফ্রিডম’।
তার কিছু ক্ষণ পর ওই যানের মধ্যে থাকা ক্যাপসুল থেকে একে একে হাসিমুখে বেরিয়ে আসেন সুনীতা এবং বুচ। ২৮৬ দিন মহাকাশে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফেরায় তাঁদের নিয়ে খুশি গোটা বিশ্ব।
ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসার পর সুনীতা এবং বুচকে নিয়ে সোজা চলে যাওয়া হয় হিউস্টন জনসন স্পেস সেন্টারে। সেখানকার ক্রু-কোয়ার্টারই সুনীতাদের বর্তমান ঠিকানা।
সুনীতার ‘ঘরওয়াপসি’র পর সারা বিশ্বে আনন্দের ঢেউ। তার মধ্যেই নতুন করে কৌতূহল তৈরি হয়েছে নভশ্চর এবং তাঁর পরিবারকে নিয়ে।
সুনীতাদের পৈতৃক বাড়ি গুজরাতের ঝুলাসন। তাঁর বাবা দীপক পাণ্ড্য ছিলেন পেশায় চিকিৎসক। দীপক ১৯৫৩ সালে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারমিডিয়েট সায়েন্স (আইএস) নিয়ে ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৫৭ সালে তিনি এমডি শেষ করেন। এর পর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় চলে যান তিনি।
১৯৬৪ সালে কেস ওয়েস্টার্ন রিজ়ার্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি বিভাগে গবেষক হিসাবে যোগ দেন দীপক। মার্কিন মুলুকের বিভিন্ন হাসপাতাল এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেন দীর্ঘ সময়।
আমেরিকা যাওয়ার পর স্লোভেনীয়-আমেরিকান উরসুলিন বনি জালোকারের সঙ্গে আলাপ হয় দীপকের। তাঁদের বন্ধুত্ব হয়। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমে। এর পর দু’জনে বিয়ে করেন। তাঁদের সন্তান সুনীতা।
২০২০ সালে আমেরিকাতেই মৃত্যু হয় দীপকের। তার আগে কন্যার মহাকাশযাত্রা দেখে গিয়েছেন তিনি। সুনীতাকে নিয়ে গর্বের অন্ত নেই তাঁর মায়েরও।
সুনীতা মহাকাশে থাকাকালীন একসময় যখন সারা বিশ্ব তাঁকে নিয়ে উদ্বিগ্ন, তখন এক সাক্ষাৎকারে তাঁর মা উরসুলিন বলেন, “নভশ্চরেরা এটাই করেন। এটা করতেই পছন্দ করেন এবং এই রকম দীর্ঘ অভিযানে যেতে পেরে তাঁরা সম্মানিত বোধ করেন।’’ তিনি আরও বলেন, “মেয়ে যা ভালবাসে তা-ই করছে। তা হলে আমি কী ভাবে এটি বা অন্য কিছু নিয়ে দুঃখিত হতে পারি? আমি ওর জন্য খুশি।”
মার্কিন নৌবাহিনীর ৫৯ বছর বয়সি প্রাক্তন ক্যাপ্টেন এবং নাসার মহাকাশচারী সুনীতার ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি অস্বাভাবিক ঝোঁক। মার্কিন নৌ অ্যাকাডেমিতে একটি সফরের পর সে দিকেই ঝোঁক তৈরি হয় তাঁর। তবে তাঁর শৈশবের স্বপ্ন ছিল পশুচিকিৎসক হওয়ার।
১৯৯৮ সালে নাসার মহাকাশচারী হিসাবে নির্বাচিত হয়ে জনসন স্পেস সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেন সুনীতা।
২০০৬ সালের পর থেকে একাধিক বার মহাকাশ অভিযানে গিয়েছেন সুনীতা। মহাকাশে হাঁটার নজিরও রয়েছে তাঁর। মহাকাশে বেশ কিছু অবিস্মরণীয় ছবি রয়েছে তাঁর। ভারত সফরেও এসেছিলেন সুনীতা। ভারতে একাধিক সম্মানও পেয়েছেন।
সুনীতা বিয়ে করেছেন মাইকেল জে উইলিয়ামসকে। মাইকেল আমেরিকার এক জন ফেডারেল মার্শাল। সুনীতা এবং তাঁর স্বামী, উভয়েরই হেলিকপ্টার ওড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সেনাবাহিনীতে হেলিকপ্টার পাইলট হিসাবে কাজ করার সময় মাইকেলের সঙ্গে আলাপ হয় সুনীতার। এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৮৭ সালে মেরিল্যান্ডের অ্যানাপোলিসের নেভাল অ্যাকাডেমিতে তাঁদের প্রথম দেখা হয়েছিল। তাঁদের বন্ধুত্ব পরে প্রেমে বিকশিত হয়। বিয়ে হয় তাঁদের।
সুনীতা এবং মাইকেল ২০ বছর ধরে বিবাহিত। ২০১২ সালে অহমদাবাদ থেকে একটি মেয়েকে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন নিঃসন্তান সুনীতা।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাইকেল হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী। ২০২৪ সালের অগস্টে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে স্ত্রীর সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে মাইকেল বলেছিলেন, ‘‘মহাকাশ হল সুনীতার সুখের জায়গা।’’
উল্লেখ্য, গত বছর ৫ জুন সুনীতাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল বোয়িং স্টারলাইনার। আট দিনের সফরে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়।
ফলে সেখানেই আটকে পড়েন সুনীতারা। তার পর থেকে একাধিক বার তাঁদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়েছে।
কিন্তু বার বার তা পিছিয়ে গিয়েছে। আট দিনের সফর দীর্ঘায়িত হয়েছে ন’মাসে। এর পর বুধবার ভোরে আটলান্টিক মহাসাগরের ফ্লরিডা উপকূলে মহাকাশচারীরা নিরাপদে অবতরণ করেন।