Kota student

আইআইটি-র স্বপ্নপূরণ হয়নি, কোটায় দমবন্ধ হওয়া যুবকই আকাশে উড়ে রোজগার করেন বছরে এক কোটি

কোটায় গিয়ে জয়েন্টের প্রবেশিকার প্রস্তুতি নিলেও আইআইটি-র শিকে ছেঁড়েনি দীপকের। তা সত্ত্বেও ভেঙে পড়েননি তিনি। ‘অন্য আকাশে’ উড়ে বছরে এক কোটিরও বেশি আয় করছেন দীপক।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কোটা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৭
Share:
০১ ২০

দশমের পরীক্ষার দুর্দান্ত নম্বর পাওয়ায় সহপাঠীদের অনেকেই মত ছিল, এ বার আইআইটি-তে পড়াশোনার জন্য রাজস্থানের কোটায় গিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত তাঁর। কিশোর বয়সে সে স্বপ্নই বুনেছিলেন হরিয়ানার দীপক রাঠী।

০২ ২০

কোটায় গিয়ে জয়েন্টের প্রবেশিকার প্রস্তুতি নিলেও আইআইটি-র শিকে ছেঁড়েনি দীপকের। তা সত্ত্বেও ভেঙে পড়েননি তিনি। ‘অন্য আকাশে’ উড়ে বছরে এক কোটিরও বেশি আয় করছেন দীপক।

Advertisement
০৩ ২০

দীপকরা থাকতেন রেওয়াড়ি জেলার সবন গ্রামে। স্কুলের বন্ধুদের মতো দীপকের বাবারও ইচ্ছা ছিল, ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হোক। তার প্রস্তুতিতে কোটার একটি কোচিং সেন্টারে ছেলেকে ভর্তি করাতে উদ্যোগী হন তিনি।

০৪ ২০

গ্রামের এক টুকরো জমিতে চাষবাস করে বছরে প্রায় তিন লক্ষ টাকা আয় হত দীপকের বাবার। তবে দীপককে পড়ানোর জন্য টাকাপয়সাও জোগাড় করে ফেলেছিলেন তিনি। মূলত বাবার উৎসাহেই কোটায় গিয়ে জয়েন্টের প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দীপক। সেটা ছিল ২০১১ সাল।

০৫ ২০

আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং হোক বা সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অথবা ডাক্তারি পড়ার জন্য ‘নিট’-এর প্রস্তুতি— কোটার কোচিং সেন্টারগুলির দেশজোড়া খ্যাতি রয়েছে। প্রতি বছর আড়াই লক্ষের বেশি পড়ুয়া কোটার যান সাফল্যের সন্ধানে।

০৬ ২০

আরও একটি কারণে প্রায়শই সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম উঠে আসে কোটা। জয়েন্টের প্রবেশিকা বা অন্যান্য পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে কোটার কোচিং সেন্টারগুলির বহু পড়ুয়া আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।

০৭ ২০

পুলিশ সূত্রে খবর, চলতি বছরের অগস্ট পর্যন্ত কোটায় ২৩ জন পড়ুয়ার আত্মঘাতী হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ২০২২ সালে কোটার ১৫ জন পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছেন।

০৮ ২০

২০২০ বা ২০২১ সালে আত্মহননের ঘটনা না হলেও তার আগের বছরগুলিতে পড়ুয়াদের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কোটায় ৯৫ জন পড়ুয়া আত্মঘাতী হয়েছেন।

০৯ ২০

পড়ুয়ামৃত্যু রুখতে গত মাসে কোটার সমস্ত হস্টেলে স্প্রিং দেওয়া পাখা লাগানোর নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসন মতে, এ ধরনের পাখায় ঝুলে পড়ে কোনও পড়ুয়া আত্মহত্যার চেষ্টা করলে পাখাটি নীচে খুলে পড়ে যাবে। যদিও এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে।

১০ ২০

কোচিং সেন্টারগুলির তরফে পড়ুয়াদের উপর অত্যধিক চাপ দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তা ছাড়া, বাড়ি থেকে দূরে থাকার জন্য বহু পড়ুয়া মানসিক অবসাদে ডুবে যান বলেও দাবি।

১১ ২০

কোটায় গিয়ে দমবন্ধ লাগত বলে সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন দীপক। আইআইটি-তে ঢোকার জন্য জয়েন্টের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন তিনি। দ্বাদশের পরীক্ষার পর জয়েন্টের মেন পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে।

১২ ২০

দীপক জানিয়েছেন, কোটায় গিয়ে একটি মেসে উঠেছিলেন। ছোট্ট ঘরে একটি খাট, চেয়ার-টেবিল ছাড়া সিলিং ফ্যান ছিল। তবে সেখানে বেশি দিন টিকতে পারেননি।

১৩ ২০

কোটায় থাকাকালীন দু’বছরে ১০-১৫টি মেস বদলেছিলেন দীপক। মেসের খাবারও মুখে রুচত না তাঁর। মেস বদলালেও প্রতি বারই সেখানকার খাবারে অরুচি হত।

১৪ ২০

ধীরে ধীরে হতাশা গ্রাস করতে লেগেছিল দীপককে। সহপাঠীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার চাপ ছাড়াও একঘেয়ে পরিবেশে দমবন্ধ হয়ে উঠেছিল। এ বার চিন্তাও বাড়তে শুরু করেছিল। জয়েন্টের পরীক্ষায় উতরোতে পারবেন তো?

১৫ ২০

দীপক বলেন, ‘‘কোটায় একটা চল রয়েছে। সকলেই বলতেন, ১৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করলে তবেই আইআইটি-তে সফল হওয়া যাবে। সে জন্য সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠামাত্রই চোখের সামনে একটা বই থাকা উচিত।’’

১৬ ২০

দীপক জানিয়েছেন, জয়েন্টের প্রস্তুতিতে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে গিয়ে সিনেমা দেখা বা ঘোরাফেরা করার কথা ভাবতেই পারতেন না পড়ুয়ারা। তাঁর কথায়, ‘‘সিনেমা দেখা বা ঘোরাফেরা করলে প্রশ্ন উঠত, জয়েন্ট পাশ করবে কী ভাবে?’’

১৭ ২০

মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলেও জয়েন্টের (মেইন) পরীক্ষায় উতরোতে পারেননি দীপক। তিনি বলেন, ‘‘রেজাল্ট বেরোনোর দিন খুব ভয় লাগছিল। বাবার পাশে বসে ঠকঠক করে কাঁপছিলাম। সমস্ত চেষ্টা জলে গিয়েছিল। জয়েন্টের (মেইন) পরীক্ষায় পাশ করতে পারিনি।’’

১৮ ২০

ব্যর্থ হলেও বাবার উৎসাহে খামতি ছিল না। ২০১৩ সালে কোটা ছাড়েন দীপক। পরের বছর দিল্লিতে গিয়ে কলা বিভাগে স্নাতক স্তরে ভর্তি হন। সেই পরীক্ষার পর অন্য স্বপ্নের পিছু ধাওয়া শুরু।

১৯ ২০

বিমানচালক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন দীপক। ছেলের জন্য বড়সড় ঋণ নেন বাবা। বিমানচালনা শিখতে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি দেন। সেখানে ৪৩টি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।

২০ ২০

বিমানচালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০২৩ সালের ২৭ এপ্রিল চাকরিতে যোগ দিয়েছেন দীপক। একটি খ্যাতনামা বিমান সংস্থায় বছরে এক কোটিরও বেশি টাকা বেতন পান তিনি।

সব ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement