সম্প্রতি দেশের সেরা পুলিশ স্টেশনগুলির তালিকায় নবম স্থান অর্জন করেছিল। মধ্যপ্রদেশের সেই থানাই এ বার লজ্জার মুখে। ১৮ বছরের পড়ুয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মাদক মামলা চালিয়ে বরখাস্ত হলেন মধ্যপ্রদেশের মলহারগড় থানার কয়েক জন পুলিশকর্মী।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৯ অগস্ট। মলহারগড়ের বাসিন্দা ১৮ বছর বয়সি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সোহন পড়াশোনা শেষে বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। তখনই সাদা পোশাকে সেই বাসে উঠে পড়েন কয়েক জন পুলিশকর্মী।
সোহনকে জোর করে চলন্ত বাস থেকে নামিয়ে আনেন তাঁরা। কয়েক ঘণ্টা পরে পুলিশ ঘোষণা করে, সোহন মাদক পাচার করছিলেন। ২.৭ কেজি আফিম-সহ ধরা হয়েছে তাঁকে। পরের দিন আদালতেও হাজির করা হয় সোহনকে। দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াকে জেলে পাঠানো হয়।
ছেলে গ্রেফতার হতেই প্রতিবাদ করেন সোহনের বাবা-মা। দাবি করেন, তাঁদের ছেলে নির্দোষ। পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে তাঁকে। সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইলে তোলা ভিডিয়ো এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানেও অন্য কথা উঠে আসে। সব কিছু খতিয়ে দেখার পরও সোহনের কাছে মাদক থাকার কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোহনের কাছে কোনও মাদক দেখেননি তাঁরা। কেবল সাদা পোশাকে একদল পুলিশ হুড়মুড়িয়ে বাসে উঠে পড়েন এবং পড়ুয়াকে টেনে নিয়ে যান।
এর পরেই সোহনের পরিবার গত ৫ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের ইনদওর বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়। পুত্রকে অপহরণ, অন্যায় ভাবে গ্রেফতার এবং প্রমাণ জাল করার অভিযোগ তোলেন ওই পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে।
আদালতে জেলা প্রশাসন দাবি করে, সোহনকে যাঁরা বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে এসেছিলেন, তাঁরা আদতে পুলিশ নন। দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াকে গ্রেফতারের বিষয়ে মলহারগড় পুলিশের হাত নেই বলেও প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয় আদালতে।
পুরো বিষয়টি শুনে হাই কোর্ট মন্দসৌরের পুলিশ সুপার বিনোদকুমার মিনাকে আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়। নির্দেশ মেনে আদালতে পৌঁছোন মিনা।
আদালতে মিনা স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, সোহনকে যাঁরা বাস থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা মলহারগড় থানার পুলিশকর্মী। মুখ পোড়ে জেলা প্রশাসনের। এর পর আরও সত্য প্রকাশ্যে আসে।
দেখা যায়, সোহনকে আসলে যেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং এফআইআরে যে জায়গার উল্লেখ ছিল, তা সম্পূর্ণ আলাদা। গ্রেফতারির সময় নিয়েও অসঙ্গতি দেখা যায় এফআইআর-এ।
এর পরেই প্রকাশ্যে আসে কয়েক জন পুলিশের অসাধু কার্যকলাপ। দেখা যায়, সোহনের বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত যে মামলা করা হয়েছিল তা ভুয়ো। ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় তাঁকে অবৈধ ভবে হেফাজতে রাখার পরে। আইনি প্রক্রিয়া মেনে তদন্ত হয়নি বলেও তদন্তে উঠে আসে।
এ-ও জানা যায়, সোহনকে গ্রেফতারির অভিযানটি পরিচালনা করেছিলেন মলহারগড়ের হেড কনস্টেবল। তাঁর উদ্যোগেই সোহনকে তুলে এনে অবৈধ ভাবে আটক করে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়।
সোহনকে যে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছে, সে কথা স্বীকার করেন মন্দসৌরের পুলিশ সুপার মিনাও। তিনি এ-ও জানান, মলহারগড়ের ওই ছয় পুলিশকর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
পুরো বিষয়টি শুনে ওই পুলিশকর্মীদের নিন্দা করে হাই কোর্ট। যদিও মামলার রায় এখনও ঘোষণা হয়নি। সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞদের দাবি, কঠোর সাজা দেওয়া হতে পারে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের।
মামলা প্রসঙ্গে মধ্যপ্রদেশের আইনজীবী হিমাংশু ঠাকুর বলেন, ‘‘আদালত সমস্ত প্রমাণ দেখেছে। আদালত মেনে নিয়েছে যে সোহনকে বাস থেকে অবৈধ ভাবে অপহরণ করা হয়েছিল এবং মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। সোহন এক জন মেধাবী পড়ুয়া। এসপি আদালতে স্বীকার করেছেন যে মলহারগড় পুলিশ অবৈধ এবং আইন-বহির্ভূত কাজ করেছে।’’
মলহারগড় থানা সম্প্রতি জাতীয় স্বীকৃতি অর্জন করেছিল। ভারতের সেরা থানাগুলির মধ্যে নবম স্থানে ছিল থানাটি। কিন্তু এ বার সেই থানার কয়েক জন কর্মীর জন্য মুখ পুড়ল কর্তৃপক্ষের।