মুখে বুলি ফোটার আগে থেকেই বড় পর্দায় অভিনয়। বলিপাড়ায় কেরিয়ার তৈরি করবেন বলে শৈশব থেকেই স্থির করেছিলেন। সেইমতো প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের চাকা সেই পথে এগোয়নি। অক্ষয় কুমার, গোবিন্দ, সলমন খান, মোহনলালের মতো নায়কদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেলেও বলিউড থেকে বহু বছর আগেই ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছেন বলি অভিনেত্রী করিশ্মা কপূরের ‘বোন’।
১৯৭০ সালের এপ্রিল মাসে জন্ম কাঞ্চনের। তাঁর যখন মাত্র এক বছর বয়স, তখন থেকেই হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ‘সীমা’ এবং ‘মন মন্দির’ নামে দু’টি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। মাত্র সাত বছর বয়সে ‘দো শোলে’ নামের একটি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
শিশু অভিনেত্রী হিসাবে তিনটি ছবিতে অভিনয় করার পর কাঞ্চন স্থির করে ফেলেছিলেন যে, বলিউডেই কেরিয়ার গড়বেন। কাঞ্চনের পরিবারও তাঁর এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন।
স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন কাঞ্চন। কলেজে পড়াকালীন মডেলিং শুরু করেছিলেন তিনি। কম সময়ের মধ্যেই মডেলিংয়ের ক্ষেত্রে নাম করে ফেলেছিলেন। সেই সময় কাঞ্চনের প্রতি নজর পড়েছিল বলিপাড়ার এক ছবিনির্মাতার।
মডেল কাঞ্চনের ছবি হাতে গিয়ে পড়েছিল বলিউডের ছবিনির্মাতা সাওয়নকুমার টাকের। হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের জন্য অডিশনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন কাঞ্চনকে। অডিশন দিয়ে নির্বাচিতও হয়েছিলেন।
১৯৯১ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘সনম বেওয়াফা’। সলমন খান অভিনীত এই ছবিতে অভিনয় করে বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন কাঞ্চন। বলিপাড়ার নামকরা প্রযোজকদের নজরে পড়েছিলেন তিনি। তার পর একের পর এক হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে শুরু করেছিলেন।
‘দো হংসো কা জোড়া’, ‘অওলাদ কে দুশমন’, ‘কসম তেরি কসম’ নামের একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন কাঞ্চন। ‘আমানত’ ‘পাণ্ডব’ নামের ছবিতে বলি অভিনেতা অক্ষয় কুমারের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
হিন্দি ভাষার পাশাপাশি তেলুগু এবং মালয়ালম ভাষার ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন কাঞ্চন। তবে বলিউডেই মন পড়েছিল তাঁর। ১৯৯৫ সালে ডেভিড ধওয়ানের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কুলি নম্বর ওয়ান’। এই ছবিতে গোবিন্দ এবং করিশ্মা কপূরের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
‘কুলি নম্বর ওয়ান’ ছবিতে করিশ্মার বোনের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন কাঞ্চন। বক্স অফিসে সফল হওয়া ছবিতে অভিনয় করলেও ভাগ্য ফিরল না কাঞ্চনের। কেউ তাঁকে আর মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিচ্ছিলেন না বলে কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে।
নব্বইয়ের দশকে একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেলেও কখনও নায়িকার বোনের চরিত্রে, কখনও আবার খলনায়কের কন্যার চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতেন কাঞ্চন। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্রী ছিলেন না তিনি।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে ‘জুরমানা’, ‘আর্মি’, ‘রাম অউর শ্যাম’, ‘ইতিহাস’, ‘মহব্বত অউর জঙ্গ’ নামের একাধিক হিন্দি ছবিতে কেবল পার্শ্বচরিত্রেই অভিনয় করেছেন কাঞ্চন। ২০০২ সালে ‘গাঙ্গোবাই’ ছবিতে শেষ অভিনয় দেখা গিয়েছিল তাঁর।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, বলিউডের ছবিনির্মাতারা তখন এমন অভিনেত্রীদের সন্ধানে ছিলেন যাঁরা সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করতে অথবা স্বল্পপোশাক পরে অভিনয় করতে রাজি ছিলেন। সে ক্ষেত্রে কাঞ্চন নাকি একেবারেই বিপরীত স্রোতে বয়ে যাচ্ছিলেন।
বলি ইন্ডাস্ট্রিতে কাঞ্চন পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে সকলের নজর কাড়লেও তিনি সুন্দরী এবং মিষ্টি নায়িকা হিসাবে পরিচিতি পেয়ে গিয়েছিলেন। সাহসী দৃশ্যে অভিনয়ের প্রস্তাব কাঞ্চনকে দিতেই চাইতেন না ছবিনির্মাতারা।
অন্য দিকে বলিপাড়ার একাংশের দাবি, কাঞ্চন যে সময় ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছিলেন সেই সময় শ্রীদেবী, মাধুরী দীক্ষিত, করিশ্মা কপূরের মতো বলি নায়িকারাও তাঁদের কেরিয়ার গড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কম সময়ের মধ্যে অন্য অভিনেত্রীদের জনপ্রিয়তার ছটায় হারিয়ে যান কাঞ্চন।
বহু বছর কাঞ্চনকে বড় পর্দায় দেখা যায়নি। অধিকাংশের মতে, কাজের সুযোগ পাননি বলে বলিপাড়া থেকে ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছেন তিনি। এখন তিনি কী করছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। বলিউডের গুঞ্জন, মুম্বইয়ের এক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে নাকি অভিনয় শেখান কাঞ্চন।