NUKES

Missing Nuclear Weapon: সেনাবাহিনীর হাত থেকেই খোয়া গিয়েছে পরমাণু বোমা! চিরকালের মতো হারিয়ে গিয়েছে ৩টি

বিশ্বের সামরিক ইতিহাসে এমন নিদর্শনও রয়েছে, যেখানে সেনাবাহিনীর হাত থেকেই খোয়া গিয়েছে পরমাণু বোমা।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২২ ০৯:২০
Share:
০১ ১৮

পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই সামরিক বাহিনীর কাছে থাকা অস্ত্রভান্ডারের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব সেই বাহিনীর নির্দিষ্ট বিভাগের কাছে থাকে। এর মধ্যে একটি সাধারণ রাইফেল হারিয়ে গেলেও হুলস্থুল পরে যায়। কিন্তু বিশ্বের সামরিক ইতিহাসে এমন নজিরও রয়েছে, যেখানে সেনাবাহিনীর হাত থেকে খোওয়া গিয়েছে পরমাণু বোমাও। এর মধ্যে কয়েকটির খোঁজ মিললেও বেশ কিছু পরমাণু বোমা চিরকালের মতো হারিয়ে গিয়েছে।

০২ ১৮

এই তালিকার প্রথমেই যে ঘটনার উল্লেখ করা যায়, সেটি যেমন রোহমর্ষক তেমনই রহস্যময়। দু'টি পারমাণবিক অস্ত্র-সহ আমেরিকার একটি বি-৪৭ স্ট্রাটোজেট বিমান ১৯৫৬-র ১০ মার্চ ফ্লোরিডার ম্যাকডিল এয়ার ফোর্স বেস থেকে মরক্কোর দিকে যাত্রা শুরু করে। যাত্রাপথে মাঝ আকাশেই দু'টি বিমান থেকে জ্বালানি ভরার কথা ছিল বি-৪৭ স্ট্রাটোজেট বিমানটির।

Advertisement
০৩ ১৮

নির্ধারিত জায়গায় জ্বালানি ভরার জন্য অন্য বিমানগুলি পৌঁছলেও বি-৪৭ স্ট্রাটোজেট বিমানটির দেখা পাওয়া যায়নি। মাঝ আকাশেই উধাও হয়ে যায় এই বিমান। আন্তর্জাতিক স্তরে অনুসন্ধান করেও কোনও খোঁজ মেলেনি। বিমানের ধ্বংসাবশেষ এবং বিমানের ভিতরে থাকা অস্ত্র বা কোনও সদস্যের খোঁজ না পেয়ে আমেরিকার সামরিক কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত অনুসন্ধান বন্ধ করে দেন।

০৪ ১৮

১৯৫৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে ফ্লোরিডা থেকে রাশিয়ার উদ্দেশে উড়ে যায় কয়েকটি বি-৪৭ বোমারু বিমান। লক্ষ্য ছিল, রাশিয়ার শহরে একটি নকল বোমা হামলা চালানো এবং রাশিয়ার বিমানবাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে বেরিয়ে আসা। প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যেই এই অভিযান পরিকল্পিত হয়েছিল।

০৫ ১৮

জানা যায়, জর্জিয়া উপকূলের কাছে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী একটি বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় রাশিয়ার বিমানবাহিনীর একটি বিমানের। পরিস্থিতি বিচার করে পারমাণবিক বোমা সঙ্গে নিয়েই প্যারাসুটে করে অবতরণের চেষ্টা করেন ওই বিমানের চালক। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। তবে অবতরণের আগে বোমাটিকে সমুদ্রে ফেলে দেন তিনি। অল্পের জন্য বোমা বিস্ফোরণ রুখে দেন ওই চালক।

০৬ ১৮

১৯৬১-র ২৪ জানুয়ারি আমেরিকার যুদ্ধবিমান বি-৫২ দু'টি মার্ক-৩৯ পরমাণু বোমা নিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। এই পরমাণু বোমা দু’টির শক্তি ছিল হিরোশিমায় বিস্ফোরণ ঘটানো ‘লিটল বয়’ পারমাণবিক বোমার প্রায় ২৫৩ গুণ বেশি। ভয়ানক ঝড়ের ফলে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং বিমানে থাকা বোমা দু’টি মাঝ আকাশ থেকে পড়ে যায়।

০৭ ১৮

দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন পাইলট দ্রুত বিমানবাহিনীকে এই ঘটনা সম্পর্কে জানান। প্রথম বোমাটিকে একটি গাছ থেকে প্যারাসুটে আটকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। মাটি ছুঁয়ে ছিল এই বোমা। বিস্ফোরণ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সাতটি পদক্ষেপের মধ্যে ততক্ষণে ছ’টি পার হয়ে গিয়েছিল। তবে ভাগ্যক্রমে, সেফটি সুইচটি অকেজো হয়ে যাওয়ায় এই বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটেনি।

০৮ ১৮

দ্বিতীয় বোমাটির সুইচ কাজ করার পরও ভাগ্যক্রমে ওই বোমার বিস্ফোরণ হয়নি। বিস্ফোরণ না হওয়ার ফলে বেঁচে যায় হাজারো প্রাণ।

০৯ ১৮

১৯৬৫ সালের ৫ ডিসেম্বর একটি সামরিক মহড়া চলাকালীন আমেরিকার নৌবাহিনীর বিশেষ যুদ্ধবিমান এ-৪ স্কাইহক হঠাৎই বিকল হয়ে পড়ে। এই যুদ্ধবিমানটিকে 'ইউএসএস টিকন্ডেরোগা' নামক একটি যুদ্ধজাহাজে রাখার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তবে বিমানের যন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ায় পাইলট এবং একটি বি-৪৩ পারমাণবিক অস্ত্র-সহ বিমানটি দ্রুত সমুদ্রের ১৬ হাজার ফুট গভীরে তলিয়ে যায়।

১০ ১৮

এখনও পর্যন্ত এই অস্ত্রের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই অস্ত্র সন্ধানে বহু ব্যর্থ চেষ্টার পর ধরে নেওয়া হয়, জলের নীচেই ব্যাপক চাপের কারণে এই বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটেছে। আর যদি এর বিস্ফোরণ না-ও ঘটে থাকে, তবে এটি জলের এত গভীরে হারিয়ে গিয়েছে যে এটিকে আর উদ্ধার করা সম্ভব নয়। বোমাটি যদি এখনও অক্ষত থাকে, তা হলেও এটি খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব, কারণ খুব কম ডুবোজাহাজই সমুদ্রের এত গভীর পর্যন্ত যেতে পারে।

১১ ১৮

১৯৬৬ সালের ১৭ জানুয়ারি, আমেরিকার একটি বি-৫২ যুদ্ধবিমান জ্বালানি ভরার লক্ষ্য নিয়ে অন্য একটি যুদ্ধবিমান কেসি-১৩৫ এর দিকে উড়ে যাচ্ছিল। বি-৫২ পৌঁছনোর আগেই বোমার আঘাতে খণ্ড-বিখণ্ড হয় কেসি-১৩৫। বিস্ফোরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বি-৫২ বিমানটিও। এই বিস্ফোরণে কেসি-১৩৫-এ থাকা সব সেনা সদস্য এবং বি-৫২ বিমানে থাকা তিন জন সেনা মারা যান।

১২ ১৮

বি-৫২ বিমানটি চারটি বি-২৮ থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা নিয়ে আছড়ে পড়ে স্পেনের পালোমারেস গ্রামের কাছে। দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এর ভিতরে থাকা তিনটি বোমা উদ্ধার করা হয়। এই তিনটি বিমানের মধ্যে একটি নিরাপদে অবতরণ করলেও বাকি দু’টি বোমা থেকে তেজস্ক্রিয় প্লুটোনিয়াম ছড়িয়ে পড়ে দুই বর্গ কিলোমিটার জুড়ে। রাতারাতি এই সব এলাকা থেকে পালিয়ে যান স্থানীয়েরা।

১৩ ১৮

তিনটি বোমা খুঁজে পাওয়া গেলেও, পাওয়া যায়নি চতুর্থ বোমাটি। স্থানীয় এক মৎস্যজীবী দাবি করেন, তিনি এই বোমা সমুদ্রের জল ডুবে যেতে দেখেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা সত্ত্বেও, প্রায় ১০০ দিনের অক্লান্ত চেষ্টার পর উদ্ধার করা সম্ভব হয় এই বোমা।

১৪ ১৮

পালোমারেস দুর্ঘটনার মতো, ১৯৬৮ সালের ২১ জানুয়ারিতেও একটি বি-৫২ যুদ্ধবিমানের দুর্ঘটনা ঘটে। এই বিমানেও চারটি বি-২৮ পরমাণু বোমা ছিল। এই বিমান যখন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তখন সেটি গ্রিনল্যান্ডের উপর দিয়ে উ়়ড়ছিল। এর ফলে কমপক্ষে তিনটি বোমা নষ্ট হয়ে যায়। আশ্চর্যজনক ভাবে গায়েব হয়ে যায় চতুর্থ বোমাটি। অনেক চেষ্টা করেও এই হারিয়ে যাওয়া বোমাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

১৫ ১৮

দুর্ঘটনাস্থলের কাছে বরফের উপর কালো দাগ দেখে তদন্তকারীরা অনুমান করেন, এই বোমার সামনের এবং মাঝের অংশ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জ্বলতে শুরু করে। সেই বোমা বরফের উপর পড়ার ফলে ওই জায়গার বরফ গলিয়ে দেয় এবং উত্তর মহাসাগরের জলের মধ্যে ডুবে চিরতরে হারিয়ে যায়। এখনও অবধি এই বোমাটি উদ্ধার করা যায়নি।

১৬ ১৮

১৯৬৮ সালে ৫ জুন হঠাৎই হারিয়ে যায় আমেরিকার নৌবাহিনীর পারমাণবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ ‘ইউএসএস স্করপিয়ন’। ‘ইউএসএস স্করপিয়ন’-এর হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যাওয়ায় আমেরিকা সরকার চিন্তায় পড়ে যায়। কারণ উধাও হওয়ার সময়, স্কর্পিয়ান ডুবোজাহাজটি দু'টি পারমাণবিক অ্যান্টিসাবমেরিন টর্পেডো মার্ক-৪৫ নিয়ে যাচ্ছিল। আমেরিকার গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, এই ডুবোজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার কিছু দিন আগে থেকেই রাশিয়ার এক গবেষক দল এই ডুবোজাহাজটির বিষয়ে খোঁজখবর চালাচ্ছিল।

১৭ ১৮

অনেক দিন নিখোঁজ থাকার পর ১৯৬৮ সালের অক্টোবর মাসে এই ডুবোজাহাজের খোঁজ পাওয়া যায়। অতলান্তিক মহাসাগরের ৩ হাজার মিটার গভীরে দেখা মেলে ‘ইউএসএস স্করপিয়ন’-এর। তবে এই ডুবোডাহাজ কেন তলিয়ে গিয়েছিল, তার কারণ এখনও অজানা।

১৮ ১৮

মনে করা হয়, এই ডুবোজাহাজের মধ্যে পারমাণবিক টর্পেডোগুলি এখনও অক্ষত অবস্থায় আছে। তবে এই বিষয়ে আমেরিকার নৌবাহিনী নিশ্চিত ভাবে বলতে পারে না। টর্পেডো পুনরুদ্ধার করার কাজটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে মনে করে আমেরিকার তরফে এই ডুবোজাহাজ উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়নি। তবে নৌবাহিনী নিয়মিত ভাবে সমুদ্রের এই বিশেষ জায়গার বিকিরণের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে। এখনও অবধি ডুবোজাহাজের ভিতরের টর্পেডো বা তার চুল্লি ফুটো হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি বলেই নৌবাহিনী জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement