ফের পাকিস্তানের উপগ্রহ উড়ল চিনের মাটি থেকে! রবিবার চিনের জিউকুয়ান উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র (জিউকুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টার বা জেএসএলসি) থেকে মহাকাশে উপগ্রহ পাঠাল পাকিস্তান। জেএসএলসি থেকে পাকিস্তান যে উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে সেটি একটি হাইপারস্পেকট্রাল উপগ্রহ। নাম, এইচএস-১।
পাকিস্তানি মহাকাশ সংস্থা ‘স্পেস অ্যান্ড আপার অ্যাটমোস্ফিয়ার রিসার্চ কমিশন (সুপারকো)’ জানিয়েছে, তাদের করাচি কমপ্লেক্স থেকে উৎক্ষেপণটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিল।
সংস্থাটি এ-ও জানিয়েছে, পাকিস্তানি বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদদের উপস্থিতিতে উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। সুপারকোর একজন মুখপাত্র পাক সংবাদমাধ্যম জিয়ো নিউজ়কে জানিয়েছেন, হাইপারস্পেকট্রাল উপগ্রহটি সফল ভাবে তার কক্ষপথে প্রবেশ করেছে।
সুপারকোর মুখপাত্র এ-ও জানিয়েছেন, কক্ষপথে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে উপগ্রহটির মাস দুয়েক সময় লাগতে পারে। দু’মাস পর, এইচএস-১ সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হবে। এইচএস-১ কক্ষপথে মাটি, গাছপালা, জল এবং নগর এলাকার বিশদ বিশ্লেষণ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
‘জার্নাল অফ কম্পিউটেশনাল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড নিউরোসায়েন্স’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাকে উদ্ধৃত করে পাক সংবাদমাধ্যম ‘ডন’ জানিয়েছে, হাইপারস্পেকট্রাল ইমেজিং হল এক ধরনের উন্নত ক্যামেরা প্রযুক্তি যা পৃথিবী এবং মহাকাশ অধ্যয়নের জন্য উপগ্রহে ব্যবহৃত হয়।
হাইপারস্পেকট্রাল ক্যামেরা অনেক দূর থেকে খুব হালকা কোনও রঙকেও চিহ্নিত করতে সক্ষম। অর্থাৎ, আলোর ক্ষুদ্র পার্থক্য, যা মানুষের চোখ বা এমনকি সাধারণ উপগ্রহ ধরতে পারে না, তা শনাক্ত করতে সক্ষম হাইপারস্পেকট্রাল উপগ্রহ।
সুপারকোর দাবি, সুনির্দিষ্ট ছবি তুলতে সক্ষম উন্নত উপগ্রহটি সবুজ ধ্বংস, দূষণ এবং হিমবাহ গলে যাওয়ার উপর নজরদারি করতে সক্ষম। কৃষি পরিকল্পনা এবং পরিবেশগত পর্যবেক্ষণেও উপগ্রহটি বিপ্লব ঘটাবে বলে আশা করছেন পাক বিজ্ঞানীরা।
একই সঙ্গে উপগ্রহটি চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর বা সিপিইসি প্রকল্পগুলিতে ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকি শনাক্ত করতে সহায়তা করবে বলেও আশা ইসলামাবাদের।
পাকিস্তানের ‘আশার আলো’ সেই উপগ্রহই চিন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। সুপারকো দাবি করেছে, অভিযানটি পাকিস্তানের জাতীয় মহাকাশ নীতি ‘’ন্যাশনাল স্পেস পলিসি অ্যান্ড ভিশন ২০৪৭’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রকও সে বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চিনের উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে এইচএস-১ উৎক্ষেপণ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং মহাকাশে শান্তিপূর্ণ অনুসন্ধানে পাকিস্তান-চিনের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বকে তুলে ধরে।
পাক বিদেশমন্ত্রক এ-ও উল্লেখ করেছে, উপগ্রহটি ভূমি সংক্রান্ত ঝুঁকি চিহ্নিত করে সিপিইসি প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় এবং টেকসই পরিকাঠামোগত উন্নয়নে সাহায্য করবে। পাকিস্তানের অন্য অনেক প্রকল্পও লাভবান হবে এই উপগ্রহের জন্য। তেমনটাই দাবি ইসলামাবাদের।
উল্লেখ্য, এইচএস-১ উপগ্রহ চলতি বছর মহাকাশে পাঠানো পাকিস্তানের তৃতীয় উপগ্রহ। এর আগে ইও-১ এবং কেএস-১ উপগ্রহ দু’টি সফল ভাবে উৎক্ষেপণ করেছিল পাকিস্তান। বর্তমানে কক্ষপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই দু’টি উপগ্রহ।
পাক মহাকাশ সংস্থার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে মহাকাশচর্চার দিক দিয়ে পাকিস্তানকে শীর্ষ দেশগুলির তালিকায় পৌঁছে দিতে জাতীয় মহাকাশ নীতি চালু করেছে পাকিস্তান। আর সেই অভিযানের আওতাতেই একের পর এক উপগ্রহ মহাকাশে পাঠাচ্ছে সুপারকো।
তবে সুপারকো যা-ই দাবি করুক না কেন, চিনের মাটি থেকে উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য কটাক্ষের শিকার হতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, বিষয়টি ইসলামাবাদের দৈন্য এবং চিন-নির্ভরতার ছবিই তুলে ধরছে।
সমরাস্ত্র থেকে শুরু করে সিপিইসি প্রকল্পের জন্য আর্থিক সাহায্য— বিগত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে উঠে এসেছে পাকিস্তানের বেজিং-নির্ভরতার ছবি। পাকিস্তানের হাত শক্ত করতে মরিয়া হতে দেখা গিয়েছে চিনকেও।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, উপগ্রহ তৈরির টাকাও হয়তো বেজিংয়ের থেকেই নিয়েছে শহবাজ় শরিফের সরকার। অথবা, চিনই উপগ্রহটি তৈরি করে ইসলামাবাদের হাতে তুলে দিয়েছে। আর সে কারণেই চিন থেকে উপগ্রহ ওড়াতে হচ্ছে পাকিস্তানকে।