Bollywood Gossip

দুই অভিনেত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, অমিতাভ-নাসিরুদ্দিনের ‘গুরু’! সোনালি যুগের নায়কের শেষ জীবন কেটেছিল দুর্দশায়

এক দশকে ৬০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। কখনও ‘দেবদাস’-এর চুনীলাল, কখনও ‘ছোটি ছোটি বাতেঁ’ সিনেমার মোতিলাল। তাঁর অভিনয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন অমিতাভ বচ্চন থেকে নাসিরুদ্দিন শাহ। তিনি বলি তারকা মোতিলাল রাজবংশ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৫ ১১:২৮
Share:
০১ ২০

লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন! এই তিনটি শব্দ কখন যে জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে যাবে তা কল্পনার বাইরে ছিল তাঁর। ইচ্ছা ছিল নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়ার, কিন্তু তা আর হয়নি। ভাগ্যে ছিল সিনেমায় অভিনয়। শুটিং দেখতে গিয়ে মিলেছিল সিনেমায় অভিনয় করার প্রস্তাব! সাদা-কালো পর্দায় ১৯৩৪ থেকে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি, নাম মোতিলাল রাজবংশ।

০২ ২০

এক দশকে ৬০টির বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন মোতিলাল। সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছেন ‘দেবদাস’ ছবি থেকে। চুনীলাল চরিত্রে তাঁর অভিনয় তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। একাধিক ছবিতে দর্শক তাঁকে কখনও দেখেছেন নায়ক হিসাবে, আবার কখনও খলনায়কের চরিত্রে।

Advertisement
০৩ ২০

১৯১০ সালের ৪ ডিসেম্বর শিমলায় জন্ম মোতিলালের। এক বছর বয়সেই বাবাকে হারান। বাবার মৃত্যুর পর পরিবার বলতে ছিলেন এক কাকা, তাঁর কাছেই বড় হওয়া মোতিলালের।

০৪ ২০

শিমলায় প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা করেন। তার পর উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথমে উত্তরপ্রদেশে এবং পরে দিল্লিতে চলে যান। দিল্লির এক কলেজে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা শুরু করেন।

০৫ ২০

স্নাতক হওয়ার পর নৌবাহিনীতে কাজ করার ইচ্ছা ছিল মোতিলালের। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয় বিনোদন জগতে। শারীরিক অসুস্থতার জন্য নৌবাহিনীর পরীক্ষা দিতে পারেননি। তবে সিনেমা কী ভাবে তৈরি হয় তা জানতে বরাবরই বিশেষ আগ্রহী ছিলেন মোতিলাল।

০৬ ২০

শুটিং কেমন ভাবে হয় তা দেখতে এক দিন সাগর স্টুডিয়োয় ঢুঁ মারেন মোতিলাল। সে সময় সেখানে পরিচালক কেপি ঘোষের সিনেমার শুটিং চলছিল। মোতিলালের চেহারা প্রথম থেকেই নায়কসদৃশ ছিল। তাঁর চেহারা দৃষ্টি আকর্ষণ করে পরিচালকের।

০৭ ২০

‘শহর কা জাদু’ সিনেমায় কেপি ঘোষ মোতিলালকে অভিনয় করার সুযোগ দেন। বরাবরই অভিনয়ের প্রতি টান ছিল তাঁর। তাই প্রথম সুযোগই লুফে নেন তিনি। ১৯৩৪ সালে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম ছবি ‘শহর কা জাদু’।

০৮ ২০

প্রথম ছবিতে বাজিমাত করতে পারেননি মোতিলাল। কিন্তু তাতে থেমেও থাকেননি। ১৯৩৮ সালে মহবুব খানের ‘জাগিরদার’ ছবিতে অভিনয় করে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন মোতিলাল।

০৯ ২০

ব্যস! তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি মোতিলালকে। ‘সিলভার কিং’, ‘দো ঘড়ি কি মৌজ’, ‘দেবদাস’-সহ একের পর এক সিনেমায় অভিনয় করে গিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছিলেন ‘দেবদাস’-এর চুনীলাল চরিত্র করে।

১০ ২০

১৯৫৫ সালের ‘দেবদাস’ ছবির প্রধান চরিত্রগুলিতে অভিনয় করেছিলেন দিলীপ কুমার, সুচিত্রা সেন এবং বৈজয়ন্তীমালার মতো প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা-অভিনেত্রী। তাঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিনয় করেন মোতিলাল।

১১ ২০

একের পর এক সিনেমায় তাঁর দুর্দান্ত অভিনয় দর্শকের মন কেড়েছিল। ১৯৫৫ সালের ‘দেবদাস’ এবং ১৯৬০ সালে ‘পরখ’ সিনেমার জন্য সেরা সহ-অভিনেতার পুরস্কার পান। শুধু অভিনয়ই না, প্রযোজনা এবং পরিচালনার কাজও করেছেন মোতিলাল।

১২ ২০

দর্শক তাঁকে কখনও রোম্যান্টিক নায়ক হিসাবে, কখনও মিষ্টি স্বভাবের পার্শ্বচরিত্রে, আবার কখনও ভয়ঙ্কর খলনায়কের চরিত্রে দেখেছেন। প্রত্যেকটি চরিত্রেই তিনি ছাপ রেখে গিয়েছেন। নাসিরুদ্দিন শাহ, অমিতাভ বচ্চন এবং দিলীপ কুমারের মতো কিংবদন্তি অভিনেতারাও মোতিলালের অভিনয় থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন বলে জানা যায়।

১৩ ২০

অমিতাভ বচ্চন তাঁর লেখা ‘দ্য হান্ড্রেড লাউমিনারি অফ ইন্ডিয়ান সিনেমা’ বইয়ে মোতিলাল সম্পর্কে লিখেছেন। সেখানে লেখা রয়েছে— “এই অসাধারণ ও সহজাত অভিনেতাকে নিয়ে খুব বেশি লেখা হয়নি। মোতিলাল তাঁর সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা অভিনেতা। তিনি যদি এখনও বেঁচে থাকতেন এবং কাজ করতেন, তাঁর বহুমুখী প্রতিভা এবং অভিনয় দক্ষতা আজও দর্শকের মনে জায়গা করে নিত। হয়তো আমাদের সবার চেয়ে বেশি ভাল কাজ করতেন।’’

১৪ ২০

নাসিরুদ্দিন শাহ ২০২৩ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “তরুণ প্রজন্মের অভিনেতারা যেমন এখন ওম পুরী, আমি, শাবানা আজ়মি, স্মিতা পাটিল, ফারুখ শেখের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দেখানো পথ ধরে এগিয়ে চলেছে, ঠিক তেমনই আমরা একসময় বলরাজ সাহনি ও মতিলালের মতো কিংবদন্তি অভিনেতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলতাম।”

১৫ ২০

জনপ্রিয়তা এবং প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও জীবনের শেষ দিকে মোতিলালকে দারিদ্র্যের মধ্যেই দিন কাটাতে হয়েছিল। প্রথম দিকে ভাল টাকা উপার্জন করলেও তা ধরে রাখতে পারেননি।

১৬ ২০

অনেকেই বলেন বলিউডে তিনি প্রাপ্য স্বীকৃতি পাননি কখনওই। একটা সময়ের পর কাজ আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একাকিত্বে ভুগতে শুরু করেছিলেন মোতিলাল।

১৭ ২০

একাকিত্বের জেরে মদের নেশা ক্রমশ গ্রাস করতে থাকে তাঁকে। বিয়ে করেননি মোতিলাল। তবে দু’জন অভিনেত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বলেও শোনা যায়।

১৮ ২০

শোনা যায়, অভিনেত্রী নার্গিসের মা জদনবাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন মোতিলাল। আবার অভিনেত্রী নাদিরার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার গুঞ্জনও ছিল।

১৯ ২০

শেষ জীবনে আত্মীয় বলতে কেউই ছিল না মোতিলালের। সিনেমাজগতের হাতেগোনা কিছু মানুষই জীবনের শেষ দিকে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৬৫ সালের ১৭ জুন মাত্র ৫৫ বছর বয়সে মারা যান মোতিলাল।

২০ ২০

মৃত্যুর কিছু দিন আগে পর্যন্ত নিজের লেখা, প্রযোজিত এবং পরিচালিত সিনেমা ‘ছোটি ছোটি বাতেঁ’র কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সেই সিনেমা মুক্তি পায় মোতিলালের মৃত্যুর পর। এই সিনেমার জন্য ১৯৬৬ সালে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান তিনি। মরণোত্তর সেরা অভিনেতা হিসাবে এই পুরস্কারটি পেয়েছিলেন। এটিই তাঁর অভিনয়জীবনে শেষ পুরস্কার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement