তেলুগু ছবিতে অভিষেক। মাত্র তিন বছরেই বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এই অভিনেত্রী। শাহরুখ খান, সঞ্জয় দত্ত-সহ তাবড় নায়কের বিপরীতে একের পর এক সুপারহিট ছবি করেন।
তবে নব্বই দশকের ‘ক্রাশ’ বেশি দিন খ্যাতি ধরে রাখতে পারেননি। অকালেই মৃত্যু হয় দিব্যা ভারতীর। মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্রাণ যায় এই উঠতি তারকার।
দিব্যার মৃত্যু ঘিরে রয়েছে একাধিক জল্পনা। কারও মতে দিব্যা আত্মহত্যা করেছিলেন, কেউ বলেন তাঁকে খুন করা হয়েছিল। বলিপাড়ায় গুঞ্জন, দিব্যার না কি অন্ধকার দুনিয়ার সঙ্গে যোগসাজশ ছিল।
দিব্যা মারা গিয়েছেন ৩২ বছর আগে। তবুও বিনোদন জগতে তিনি এখনও বেশ আলোচিত। দুর্ঘটনায় বহু বলি তারকাই মারা গিয়েছেন, কিন্তু দিব্যার মতো চর্চা তেমন হয়নি।
১৯৭৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ে জন্ম দিব্যার। পড়াশোনা করেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই মডেলিং করতেন তিনি। হঠাৎই পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে যোগ দেন অভিনয়ে।
১৯৯০ সালে তেলুগু ছবিতে দগ্গুবতী ভেঙ্কটেশের বিপরীতে শুরু হয় অভিনয়ের যাত্রা। ওই সিনেমার নাম ছিল ‘বোবিলি রাজা’। সেখানে অভিনয়ের পরই ডাক আসে হিন্দি সিনেমার জন্য।
১৯৯২ সালে তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি ‘বিশ্বাত্মা’। ব্যাস! তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘শোলা অউর শবনম’, ‘দিওয়ানা’, ‘দিল কা কেয়া কসুর’, ‘আন্দাজ’-সহ একের পর এক হিট ছবি করেন।
দ্রুতই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন দিব্যা। ‘দিওয়ানা’-তে শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। ওই ছবিতেই তাঁর সঙ্গে প্রয়াত অভিনেতা ঋষি কপূরও ছিলেন।
এর মাঝে বিয়েও করে ফেলেছিলেন। ১৯৯২ সালে ‘শোলা অউর শবনম’ ছবির শুটিং চলছিল। সে সময়ই প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার সঙ্গে প্রেম করেন।
তবে সাজিদ কিন্তু ‘শোলা অউর শবনম’ সিনেনার প্রযোজনা করছিলেন না। তিনি অন্য সিনেমার কাজ করছিলেন তখন। দিব্যার সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব হয় তাঁর। পরে তা প্রেমে পরিণত হয়।
এক দিকে ছবির শুটিং, অন্য দিকে সময় পেলেই চুটিয়ে প্রেম করছিলেন এই অভিনেত্রী। তবে কিছুদিন প্রেম করার পরই এই জুটি লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলেন।
শোনা যায়, ১৯৯২ সালের ১০ মে মুম্বইতে লুকিয়ে বিয়ে করেছিলেন তাঁরা। পরিবারের তরফ থেকেও তেমন কেউ ছিলেন না, আর সংবাদমাধ্যম তো ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি বিয়ের কথা!
হাতেগোনা বন্ধুরাই উপস্থিত ছিল দিব্যা-সাজিতের বিয়েতে। তবে ওই ১৯৯০ এ শুরু হল কেরিয়ার। ১৯৯২ এ একের পর এক ভাল সিনেমা করলেন, বিয়ে করলেন। আর ১৯৯৩-এই চলে গেলেন সব ছেড়ে!
ওই বছরের ৫ এপ্রিল, হঠাৎ খবর আসে দিব্যার মৃত্যুর। মদ্যপ অবস্থায় পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর। পা পিছলে ২০ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতা থেকে সেদিন পড়ে গিয়েছিলেন দিব্যা।
অনেকেই বলেন, দিব্যার বাড়িতে তখন নৈশ্যপার্টি চলছিল। তাই ঘটনার সময় কিছু অতিথি (বন্ধু) তাঁর বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু দিব্যার পড়ে যাওয়ার সময় নাকি বারান্দায় কেউই ছিলেন না।
দিব্যা একাই মদের গ্লাস হাতে নিয়ে বারান্দার রেলিং ধরে হাঁটছিলেন। পড়ে যাওয়ার পর আওয়াজ শুনে বন্ধুরা ছুটে যান। হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অভিনেত্রী। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর।
দিব্যার মৃত্যু ঘিরে তদন্তও চলে। পরে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছিল, এটি নিছক একটি দুর্ঘটনা। কিন্তু অনেকেই এটা মানতে নারাজ ছিলেন। তারপর থেকেই বলিউডের অন্দরে এই নিয়ে অনেক গল্প শোনা যায়।
অনেকের মতে, এটা ছিল ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুন। এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেই নাকি দিব্যার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগসূত্র রয়েছে এই ঘটনার সঙ্গে, এমন কথাও ওঠে।
দিব্যার রহস্যমৃত্যু নিয়ে বই লিখেছিলেন ট্রয় রিবেইরো। ঘটনাস্থলে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। রিবেইরো নিজেও এক জন সাক্ষী।
ট্রয়ের লেখা থেকে জানা যায়, দিব্যার বাবা ও ভাইকে সামলানো যাচ্ছিল না। বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলল!’’ ভোর বেলা দিব্যার মা হাসপাতালে পৌঁছন। তিনি বিশ্বাসই করছিলেন না। তবে হাসপাতালেই দিব্যার বাবা ও ভাই দিব্যার মা’কে দোষারোপ করছিলেন।
আদৌ দিব্যার মৃত্যু আত্মহত্যা না খুন, কেন তাঁর বাবা দিব্যার মাকে অমন কথা বলেছিলেন সেই সবের কারণ আজও অজানা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বলি তারকা নিজের জায়গা করে নিচ্ছিলেন বিনোদন জগতে। এক বছরের মধ্যেই নামী পরিচালকদের সঙ্গে কাজ, এই সবও অনেকের রোষের কারণ হতে পারে বলেই গুঞ্জন শোনা যায়।