Shubhanshu and Kamna Shukla

স্ত্রী পেশায় দন্তচিকিৎসক, আলাপ তৃতীয় শ্রেণিতে! রূপকথার চেয়ে কোনও অংশে কম নয় শুভাংশু-কামনার প্রেমকাহিনি

লখনউয়ের আলিগঞ্জ ক্যাম্পাসের সিটি স্কুলের ক্লাসরুমের বন্ধুত্ব থেকে শুভাংশু শুক্লের ঘরনি। কামনা একজন দন্তচিকিৎসক। সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে কামনা জানিয়েছিলেন, শুভাংশুর মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন ২০২০ সালে শুরু হয়েছিল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৫ ১৪:৫৮
Share:
০১ ১৪

ক্লাসের সবচেয়ে লাজুক ছেলেটিকেই সবচেয়ে ভাল বন্ধু হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে আলাপ শুভাংশু ও কামনার। তখন অবশ্য আরও একটি নামে পরিচিত ছিলেন শুভাংশু, সেটি হল গুঞ্জন। প্রাথমিক পাঠের সময় থেকে বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমে। শেষে সেই প্রেম পূর্ণতা পেয়েছে বিয়েতে। রয়েছে একটি ছয় বছরের সন্তান।

০২ ১৪

শুভাংশু শুক্ল ভারতীয় ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন। যুদ্ধবিমান চালান। রাকেশ শর্মার মহাকাশে পা রাখার চার দশক পর এই প্রথম মহাকাশে গেলেন কোনও ভারতীয়। বায়ুসেনার ক্যাপ্টেন হওয়ায় এর আগে এএন-৩২, জাগুয়ার, হক, মিগ-২১, সু-৩০-সহ নানা ধরনের যুদ্ধবিমান চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে শুভাংশুর। সে কারণে নাসার ‘অ্যাক্সিয়ম-৪’ অভিযানে পাইলটের ভূমিকায় রয়েছেন শুভাংশু।

Advertisement
০৩ ১৪

২৫ জুন, বুধবার ভারতীয় সময় বেলা ১২টা ১ মিনিটে শুভাংশু শুক্ল-সহ চার নভশ্চরকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে পাড়ি দেয় স্পেস এক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’। উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের বাসিন্দা শুভাংশুই প্রথম ভারতীয় যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে পা রাখলেন। মহাকাশযাত্রার জন্য ফ্লরিডার উদ্দেশে রওনার আগে শুভাংশু সমাজমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে স্ত্রী কামনা শুক্লের ছবি দিয়ে আবেগঘন একটি পোস্ট করেন।

০৪ ১৪

কাচের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা স্বামীকে বিদায় জানাতে দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন স্ত্রী। এই ছবিটি পোস্ট করে শুভাংশু বিশেষ বার্তাটি দিয়ে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী কামনাকে। তিনি লিখেছেন, “তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ। তুমি ছাড়া এর কিছুই সম্ভব ছিল না। তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তুমি না থাকলে এ সমস্ত কিছুই গুরুত্বপূর্ণ হত না।’’ স্বামীর হৃদয় উজাড় করা পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কামনা লেখেন, “তোমার জন্য আমি প্রতি দিন গর্ব অনুভব করি, তুমি আমার ভালবাসা।’’

০৫ ১৪

লখনউয়ের আলিগঞ্জ ক্যাম্পাসের সিটি স্কুলের ক্লাসরুমের বন্ধুত্ব থেকে শুভাংশুর ঘরনি। কামনা নিজে একজন দন্তচিকিৎসক। কামনা সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, শুভাংশুর মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন ২০২০ সালে শুরু হয়েছিল। ১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর, লখনউয়ের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম শুভাংশুর। বাবা শম্ভুদয়াল শুক্ল সরকারি কর্মী, মা আশা গৃহবধূ।

০৬ ১৪

নিম্ন মধ্যবিত্ত পারিবারিক কাঠামোয় বড় হয়ে ওঠা শুভাংশুর কাছে মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার মাঝের যাত্রাপথ মসৃণ ছিল না। এই অভিযানের জন্য দীর্ঘ প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। তার জন্য স্ত্রী, পুত্র, পরিবারের থেকে দিনের পর দিন বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়েছে শুভাংশুকে। স্বামীর এই স্বপ্নপূরণে সব সময় পাশে থেকেছেন কামনা।

০৭ ১৪

১৯৯৮ সালে কার্গিল যুদ্ধের সময় শুভাংশুর জীবনের মোড় সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। দেশের সেবা করার গভীর আকাঙ্ক্ষায় পরিবারকে না জানিয়ে তিনি চুপি চুপি ইউপিএসসির ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির (এনডিএ) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

০৮ ১৪

২০০৫ সালে এনডিএ থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং তার পর ভারতীয় বিমানবাহিনীতে প্রশিক্ষণ নেন শুভাংশু। ২০০৬ সালে তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানের চালক হিসাবে যোগদান করেন।

০৯ ১৪

অ্যাক্সিয়ম স্পেস নামে আমেরিকার একটি বেসরকারি সংস্থার মহাকাশ অভিযানে ছাড়পত্র দিয়েছে নাসা। সেই অভিযানেই গিয়েছিলেন শুভাংশুরা। ১৪ দিন তাঁরা আইএসএসে থাকবেন, বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালাবেন। নাসা এবং ইসরোর যৌথ উদ্যোগে দলটি এই কাজ করবে। ভবিষ্যতে ইসরোর গগনযান প্রকল্পের অধীনে যে অভিযান হবে, তার ভিত্তিও স্থাপন করবেন শুভাংশু। অভিযানের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, কী কী বিষয়ে গবেষণা করবেন শুভাংশু।

১০ ১৪

কামনা জানিয়েছেন, বাড়িতেও শান্ত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত শুভাংশু। মহাভারতের অর্জুনের মতো লক্ষ্য স্থির রেখেছেন তিনি। আদর করে শুভাংশুকে ‘শুক্স’ বলে ডাকেন স্ত্রী কামনা। কামনা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, আকাশ তাঁকে হাতছানি দিলেও পা মাটিতে রেখে চলতে ভালবাসেন শুক্স।

১১ ১৪

শুভাংশু পছন্দ করেন শরীরচর্চা করতে ও নন-ফিকশন বই পড়তে। বাড়িতে থাকলে ছয় বছরের ছেলের সঙ্গেই সময় কাটাতে পছন্দ করেন বায়ুসেনার আধিকারিক।

১২ ১৪

যুদ্ধবিমানের চালকের জীবন ছেড়ে মহাকাশযানের অজানা জগতে পা রেখেছেন শুভাংশু। মাইক্রোসেকেন্ডে সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে মাইক্রোগ্রামে সূক্ষ্ম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে জীবনের গতিপথ সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে শুভাংশুদের। প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও, পরোক্ষে ভারতের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে বুধবারের এই অভিযান একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। দেড়শো কোটি ভারতীয়ের চোখ এখন শুভাংশুর দিকেই।

১৩ ১৪

শুভাংশুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘‘শুভাংশু শুক্লই প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারী যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রাখবেন। নিজের কাঁধে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের ইচ্ছা, আশা, আকাঙ্ক্ষার ভার বহন করছেন তিনি।’’

১৪ ১৪

শুভাংশু শুক্ল-সহ চার নভশ্চরকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিল স্পেস এক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’। দীর্ঘ সফর শেষে শেষমেশ ২৬ জুন বিকেল ৪টে নাগাদ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পৌঁছোলেন শুভাংশুরা।

সব ছবি : সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement