‘বাসন্তী, ইন কুত্তোকে সামনে মাত নাচনা’ কিংবা ‘গব্বর সিংহ, আ রাহা হু ম্যায়’— ‘শোলে’ সিনেমার এই সংলাপগুলির সঙ্গে কমবেশি সকলেই পরিচিত। সিনেমায় এই সংলাপগুলি বলেছিলেন বীরু ওরফে ধর্মেন্দ্র। পর্দার বীরু কিন্তু বাস্তব জগতেও সত্যিকারের ‘হিম্যান’।
অপরাধ জগতের হুমকিকে এক ফোনে উড়িয়ে দিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। দর্শকের কাছে তিনি আজও ‘হিম্যান’। বেশির ভাগ সিনেমাতেই বিপজ্জনক দৃশ্যে অভিনয় করার জন্য কোনও ‘ডামি’ লাগত না তাঁর। তিনি নিজেই সে সব দৃশ্যে অভিনয় করতেন।
এই ধর্মেন্দ্রেরই অপরাধ জগতের সঙ্গে এক নির্ভীক কথোপকথন তাজ্জব করে দিয়েছিল সকলকে। দাপুটে এই অভিনেতা হুমকি পেয়েছিলেন খোদ গ্যাংস্টারের থেকে। ভয় না পেয়ে পাল্টা তর্জন হেঁকেছিলেন ধর্মেন্দ্র।
সময়টা তখন সত্তরের দশকের আশপাশ। মুম্বইয়ে রাজত্ব করছেন হাজি মস্তান, করিম লালা, দাউদ ইব্রাহিমরা। তিন জনই যে অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সে সময় ব্যাঙ্কের তরফে সিনেমা তৈরির জন্য ঋণ পাওয়া যেত না। তাই বেশির ভাগ সিনেমার প্রযোজনাই নাকি অন্ধকার জগৎ থেকে আসা কালো টাকা দিয়ে হত।
এমনকি, অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালকদের থেকেও বলিউডের বেশির ভাগ বিষয়ই তদারকি করত গ্যাংস্টারেরা। সে সময় অন্ধকার জগৎ থেকে কোনও গ্যাংস্টার ফোন করা মানে, সে যতই বড় মাপের নায়ক বা নায়িকা হোন না কেন, তাঁকে পাড়ি দিতে হত দুবাইয়ে।
পরিচালক, প্রযোজকেরাও ছাড় পেতেন না এমন ফোন থেকে। আর যদি কেউ সেই ফোন বা গ্যাংস্টারের কথা উপেক্ষা করতেন তা হলে মিলত প্রাণে মেরে ফেলার মতো হুমকি।
বেশ কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী নাকি বাধ্য হতেন গ্যাংস্টারদের কথা শুনতে। না শুনলে তাঁদের পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবন, দু’টিই নাকি নষ্ট করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হত। অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীই নাকি উপেক্ষা করার মাসুল গুনেছেন।
সে সময় গ্যাংস্টারদের নানা হুমকির ভয়ে একেবারে তটস্থ হয়ে থাকত বলিউড। দিলীপ কুমার, সুনীল দত্ত-সহ অনেক নামজাদা অভিনেতাকেই নাকি যোগাযোগ রাখতে হত অপরাধ জগতের সঙ্গে।
তবে ব্যতিক্রম ছিলেন ধর্মেন্দ্র। তাঁর কাছেও এসেছিল হুমকির ফোন। কিন্তু, ভয়ে গুটিয়ে যাওয়া বা ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুবাই চলে যাওয়া, এমন কিছুই করেননি এই অভিনেতা।
বাস্তবেই ‘হিম্যান’ ছিলেন তিনি! বিপজ্জনক দৃশ্যগুলিতে যেমন একাই অভিনয় করতেন, তেমন ভাবেই গ্যাংস্টারের হুমকিও একাই সামলেছিলেন। পাল্টা এমন জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন যে আর কোনও দিন অন্ধকার জগৎ থেকে অভিনেতাকে বিরক্ত করা হয়নি।
ধর্মেন্দ্রের জন্ম, বড় হওয়া সবটাই পঞ্জাবের লুধিয়ানায়। যখন গ্যাংস্টারের ফোন এসেছিল তখন নিজের জন্মভূমির কথা বলেছিলেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক সত্যজিৎ পুরী ধর্মেন্দ্রের এই সাহসিকতার কথা দর্শককে জানিয়েছিলেন।
ধর্মেন্দ্র কুখ্যাত এক গ্যংস্টারকে জব্দ করতে বলেছিলেন, ‘‘আমাকে ভয় দেখিও না। বিপদে পড়ে যাবে।’’ এখানেই থেমে থাকেননি অভিনেতা, পাল্টা জবাবও দিয়েছিলেন।
আসলে ওই সময় গ্যাংস্টারদের পার্টির জৌলুস বৃদ্ধি করতেন বলি অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। আর সত্তরের দশক মানেই ধর্মেন্দ্রের একের পর এক হিট ছবি। তাঁর অভিনয়ের জেরে দর্শকের মনে তো জায়গা করেই নিয়েছিলেন, পাশাপাশি গ্যাংস্টারদেরও নজরে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি।
গ্যাংস্টারদের আমন্ত্রণ এসেছিল তাঁদের পার্টিতে যাওয়ার জন্য। সেই আমন্ত্রণকেই খারিজ করে দিয়েছিলেন অভিনেতা। তার জেরে অপরাধ জগৎ থেকে পাল্টা হুমকি এসেছিল ধর্মেন্দ্রকে তুলে নিয়ে যাওয়ার।
আর গ্যাংস্টারের ফোনের হুমকি পেয়েই অভিনেতা পাল্টা বলেন, ‘‘তুমি আমাকে নিয়ে যেতে ১০ জনকে পাঠাবে। আর আমি একটা ফোন করলে পঞ্জাব থেকে ট্রাকভর্তি লোক চলে আসবে। তাই সাবধান, আমায় বিরক্ত করলে তোমরাই বিপদে পড়বে!’’
এমন কথা বলার জন্য যে কোনও বিপদ হতে পারে সে সব তোয়াক্কাই করেননি অভিনেতা। বরং ধর্মেন্দ্রের মুখ থেকে এমন কথা শোনার পর আর এক বারও কোনও হুমকি আসেনি অভিনেতার কাছে। গ্যাংস্টারেরা আর কোনও দিনও ধর্মেন্দ্রকে বিরক্ত করার সাহস পাননি।
যদিও অনেকেই সেই সময় বলেছিলেন এই জবাবের জন্য ধর্মেন্দ্রের পেশাগত জীবনে প্রভাব পড়বে। কিন্তু আদতে তেমন কিছুই হয়নি। ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’ সিনেমা দিয়ে অভিষেক হয়েছিল অভিনেতার। তখন তাঁর ২৪ বছর বয়স ছিল।
সেই অভিনেতাই এখন ৯০ ছুঁই ছুঁই। তবুও কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখেননি কখনও। সদ্য প্রকাশিত হতে চলেছে ধর্মেন্দ্র অভিনীত ‘ইক্কিস’ সিনেমাটি। এই বয়সে এসেও সর্বদা নিজেকে কাজের মধ্যেই রাখতে পছন্দ করেন ‘হিম্যান’।