তখনও অভিনয়জগতে পা রাখেননি তিনি। প্রেমিকার বয়স তখন মাত্র ১৭ বছর, আর তাঁর ১৮ বছর। ওইটুকু বয়সেই ভয়ঙ্কর মানসিক আঘাত পান। ভালবাসার মানুষটিকে চিরকালের মতো পৃথিবী থেকে বিদায় জানিয়েছিলেন এই অভিনেতা।
তিনি বিবেক ওবেরয়। তাঁর অনুরাগীদের মধ্যে অনেকেই ভাবেন তাঁর জীবনে প্রেম এসেছে অভিনয়জগতে আসার পরই। ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনই হয়তো তাঁর প্রথম প্রেমিকা। কিন্তু বাস্তবটা তা নয়।
খুব ছোটবেলাতেই প্রেমের বেদনাদায়ক মুহূর্ত সামলাতে হয়েছে অভিনেতাকে। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাঁর ভালবাসার মানুষ। এক সাক্ষাৎকারে বিবেক জানিয়েছিলেন, প্রথম প্রেমিকার চলে যাওয়ার যন্ত্রণা আজও মেনে নিতে পারেননি তিনি।
এক পডকাস্টে প্রথম প্রেম নিয়ে মুখ খুলেছিলেন বিবেক। তিনি জানিয়েছিলেন, স্কুলে পড়ার সময় তাঁর একটি মেয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। বয়সের মাত্র এক বছর ফারাক ছিল তাঁদের।
সেই অনুষ্ঠানে বিবেক জানিয়েছেন, “আমি যখন প্রেমে পড়েছিলাম সেই সময় আমার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। অন্য দিকে, আমার বান্ধবীর বয়স ছিল ১২ বছর। দু’জনে একসঙ্গে প্রচুর সময় কাটিয়েছি। অতটুকু বয়সেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলাম, ভবিষ্যৎ আমরা একসঙ্গে কাটাব।”
বন্ধু এবং প্রেমিকা— বিবেকের জীবনে দুই ভূমিকাতেই ছিল মেয়েটি। এক দিকে পড়াশোনাও চলছিল, অন্য দিকে চুটিয়ে প্রেমও করতেন তাঁরা। কিন্তু হঠাৎই একদিন বিবেক জানতে পারেন, তাঁর প্রেমিকা ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত এবং তিনি অন্তিম পর্যায়ে রয়েছেন। এমন খবর শোনামাত্রই ভেঙে পড়েছিলেন বিবেক।
অভিনেতার কথায়, “আমি ওর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। ওর ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। জানতে পারি, ও হাসপাতালে ভর্তি। আমি ছুটে যাই। আমাদের পাঁচ-ছয় বছরের সম্পর্ক ছিল। ওর অসুখের কথা জেনে আমি ভেঙে পড়েছিলাম। আমরা সকলে বহু চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু দু’মাসের মধ্যে ওর মৃত্যু হয়।”
বুকে পাথর রেখে ভবিতব্যের কাছে নতিস্বীকার করেছিলেন বিবেক। টানা ছ’বছর সম্পর্কে থাকার পরে প্রেমিকাকে বিদায় জানাতে হয়েছিল তাঁকে। এক সাক্ষাৎকারে মর্মান্তিক ঘটনার সেই সব কথা উজাড় করে দিয়েছেন অভিনেতা। সেখান থেকেই অভিনেতার অনুরাগীরা জানতে পারেন, তাঁর জীবনে ঐশ্বর্যাই প্রথম প্রেম নয়।
প্রেমিকার মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর পরে বলিউডে আগমন বিবেকের। ২০০২ সালে ‘কোম্পানি’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় তাঁর। হিন্দি, তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মলয়ালম, মরাঠী এবং ইংরেজি মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মোট সাতটি ভাষায় সিনেমা করেন বিবেক।
বিবেক অভিনীত ‘সাথিয়া’ ছবি বক্স অফিসে ভাল সাড়া ফেলেছিল। সেখানে রানি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনেতার রসায়ন দর্শকের মন জয় করেছিল। এর পর বেশ কিছু ভাল সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল বিবেককে।
২০০৪ সালে ঐশ্বর্যার সঙ্গে ‘কিউঁ! হো গয়া না’ ছবি করার সময় বলিপাড়ায় গুঞ্জন উঠেছিল বিবেক নাকি ঐশ্বর্যার সঙ্গে প্রেম করছেন। যদিও এই গুঞ্জনের জেরে বেশ ভোগান্তির শিকার হয়েছিলেন অভিনেতা।
‘কিউঁ! হো গয়া না’ ছবি যখন এই জুটি করছিলেন তখন ঐশ্বর্যা ছিলেন সলমনের প্রাক্তন প্রেমিকা। ঐশ্বর্যার সঙ্গে প্রেম করায় নাকি হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল বিবেককে। সে সময় এই নিয়ে বেশ কিছু সাক্ষাৎকারে মুখও খুলেছিলেন বিবেক।
যদিও সেই প্রেম টেকেনি বিবেকের জীবনে। ধীরে ধীরে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। পরে ঐশ্বর্যার বিয়ে হয়ে যায় অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে। বিবেক তখনও অবিবাহিত ছিলেন। প্রথম প্রেমিকার মৃত্যুশোক কাটিয়ে বহু বছর পর প্রেম এসেছিল বিবেকের জীবনে। সেটাও না টেকার পর বেশ কিছু দিনের জন্য প্রচারের আলো থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন বিবেক।
একটি প্রতিবেদন সূত্রে বিবেক জানিয়েছেন, একসময় প্রেম ভাঙার কারণে তিনি খুবই কষ্ট পেয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, প্রেম ভাঙার পর তিনি নাকি আর কোনও দিন সম্পর্কে জড়াতে চাননি। পরে পরিবারের চাপে বিয়ে করেছিলেন।
ঐশ্বর্যার সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জনের পর খুব বেশি সিনেমায় যে বিবেক অভিনয় করেছেন তা নয়। ২০১৯ সালে হিন্দি ছবি ‘পিএম নরেন্দ্র মোদী’তে বিবেক অভিনয় করেছেন। সেখানে মুখ্যচরিত্র অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর চরিত্রেই অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
যদিও ‘পিএম নরেন্দ্র মোদী’ সিনেমাটি বক্স অফিসে বিশেষ সাড়া ফেলতে পারেনি। ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কাদুভা’ এখনও পর্যন্ত বিবেকের শেষ ছবি। মলয়ালম ভাষার এই ছবিটি বক্স অফিসে বিপুল সাফল্য পায়।
অভিনয়ের চাইতে বিবেকের মন এখন ব্যবসায়। রিয়্যাল এস্টেট-সহ আরও ব্যবসা রয়েছে অভিনেতার। একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিবেক ১২০০ কোটি টাকার মালিক।
ব্যবসার পাশাপাশি পছন্দমতো স্ক্রিপ্ট পেলে সিনেমার পর্দায়ও মাঝেসাঝে দেখা যায় অভিনেতাকে। বলিপাড়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানও বিবেকের উপস্থিতি চোখে পড়ে। অভিনেতার জীবন কাটে এখন বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে।