থার্টি সিক্স-এইট্টিন-থার্টি থ্রি

গ ত ৫৬ বছর ধরে দুনিয়া-জোড়া ব্যবসা ফেঁদেছে মার্কিন খেলনা নির্মাণকারী সংস্থা ম্যাটেল। শ-দেড়েক দেশে দেদার বিকিয়েছে হট-স্লিম-সেক্সি ‘বারবারা মিলিসেন্ট রবার্টস’। আমাদের চেনা ‘বার্বি’। কিন্তু, যত সে কচিকাঁচাদের নয়নের মণি হয়েছে, তত চোখের বালি হয়েছে বিশ্বের নারীবাদীদের।36-18-33! বার্বির গড়পড়তা ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স।

Advertisement

সুস্নাত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৫ ০০:০৪
Share:

গ ত ৫৬ বছর ধরে দুনিয়া-জোড়া ব্যবসা ফেঁদেছে মার্কিন খেলনা নির্মাণকারী সংস্থা ম্যাটেল। শ-দেড়েক দেশে দেদার বিকিয়েছে হট-স্লিম-সেক্সি ‘বারবারা মিলিসেন্ট রবার্টস’। আমাদের চেনা ‘বার্বি’। কিন্তু, যত সে কচিকাঁচাদের নয়নের মণি হয়েছে, তত চোখের বালি হয়েছে বিশ্বের নারীবাদীদের।

Advertisement

36-18-33! বার্বির গড়পড়তা ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স। নারীত্ব ও নারীর সৌন্দর্যের প্রোটোটাইপ প্রতিষ্ঠায় ম্যাটেল-এর এই পাটিগণিত অনেক আগেই নিন্দিত হয়েছে। উন্নত বক্ষ, ক্ষীণ কটি, গুরু নিতম্ব— এই ছাঁদে গড়ে বার্বিকে করে তোলা হয়েছে টিনএজ-আইকন। ‘আদর্শ’ নারী-শরীরের এই সমাজ ও বাজার-চলতি ধারণা আসলে নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখানোর প্রয়াস, এ ক্ষেত্রে যা যৌনতার বীজ পুঁতে কচি মেয়েদের কাঁচা মাথা চিবোনোরই নামান্তর— খানিকটা এমনই বক্তব্য বার্বি-বিরোধীদের। শুধু তা-ই নয়, বার্বির এই শারীরিক গঠন একটি ‘আইডিয়া’ মাত্র, আদপেই বাস্তবানুগ নয়। কিন্তু ছোটরা তো তাকেই ‘আইডিয়াল’ ঠাওরে নকল করতে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছে। ‘ডলপুতুল’-এর মতো সুন্দরী হতে চাওয়া মেয়েদের বয়ঃসন্ধির এই সমস্যাটিকে তাই বলাও হয়েছে ‘বার্বি সিন্ড্রোম’!

কেমন সেই সমস্যা? ১৯৬৩-তে প্রকাশিত হয়েছিল বার্বি-বিষয়ক একটি খুদে পুস্তিকা, ‘হাউ টু লুজ ওয়েট?’ তার ব্যাক-কভারে স্ট্রেট বাতলানো ছিল সেরা উপায়টি— ‘খেয়ো না!’ কাজেই, ডায়েট কন্ট্রোলের ভূত ক্রমশ জাঁকিয়ে বসেছিল আট-দশ বছরের মেয়েদের মাথাতেও। ‘অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা’— যে রোগের জেরে আন্ডারওয়েট হয়েও কেউ কেবলই ভাবতে থাকে ‘মোটা হয়ে যাচ্ছি, মোটা হয়ে যাচ্ছি’, খাওয়াদাওয়া নিয়ে বাই-তোলা বিচিত্র সেই রোগটির কবলে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছিল অনেকের মধ্যে। তা তো হবেই, কারণ ১৯৬৫ সালে দেখা গেল, আনুপাতিক হারে বার্বি নিজেই অন্তত ৩৫ পাউন্ড আন্ডারওয়েট! হেলসিঙ্কির এক গবেষণা জানাল, বার্বির শরীরে ১৭-২২% ফ্যাটের অভাব রয়েছে। তারা বলল, এক জন কিশোরীর ঋতুমতী হতে গেলে এটুকু স্নেহপদার্থ অবশ্য প্রয়োজনীয়। ঢের পরে, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে অবশ্য বার্বির কোমরে খানিক চর্বি জমে। যদিও ম্যাটেল-এর মত ছিল, এই কিঞ্চিৎ পৃথুলা কোমরের নেপথ্যে হাল ফ্যাশনই একমাত্র কারণ।

Advertisement

আবার সত্তরের দশকে শরীরে ভেলকি দেখাতে গিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বার্বির ছোট বোন স্কিপার রবার্টস। তার হাত ঘোরালেই সে খানিক লম্বা হয়ে যেত, বুকে ফুটে উঠত স্তনের আভাস। দ্যাখো আমি বাড়ছি, মামি! বার্বির বেস্ট ফ্রেন্ড মিজ হ্যাডলি-কে নিয়েও বিতর্ক। সে বিবাহিত তো বটেই, উপরন্তু অন্তঃসত্ত্বা। পুতুলটির ম্যাগনেটিক গর্ভে খুদে সন্তান নিকি! সমালোচকদের মতে, মিজ-এর বয়স বিবাহ ও সন্তানধারণের জন্য মোটেই যথেষ্ট ছিল না।

নব্বইয়ের দশকে ‘টিন টক বার্বি’ কথা বলে উঠল। নানা কথার মধ্যে একটি— ‘ম্যাথ ক্লাস ইজ টাফ!’ মেয়েরা অংক পারে না— এই মার্কামারা ধারণার প্রতিবাদে হয়েছিল। তড়িঘড়ি বাক্যটি কেড়ে নেওয়া হয় বার্বির মুখ থেকে। আবার গত বছরেই বার্বি-বিষয়ক ‘আই ক্যান বি আ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’ বইয়ে দেখানো হয়েছে, কম্পিউটারের কাজকম্ম সামলাতে নাজেহাল বার্বি! শেষে দুই পুরুষ-বন্ধুর সাহায্য নিতে হচ্ছে তাকে। সমালোচনার ঠেলায় শেষমেশ আমাজন থেকে বইটি সরিয়ে নিতে হয়। সমালোচকরা তুলে ধরছেন ইংল্যান্ডের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাও। ২০০৫-এর যে গবেষণা বলছে, একটা পর্যায়ে এসে বাচ্চারাও নাকি প্রায়ই বার্বির প্রতি ক্ষোভে-ঘেন্নায় ফেটে পড়ে। তার মুন্ডু কেটে দেয় কিংবা মাইক্রোওয়েভ আভেনে ঢুকিয়ে চরম শাস্তি দিতে চায়। হয়তো বান্ধবীর ওপর শোধ নিতে চায়, কারণ তার মতো হতে চেয়ে তারা যে অসম্ভব একটা শরীর পাওয়ার চেষ্টা করেছিল, তার খাজনা অনেকটা জীবন জুড়ে তাদের দিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন