(বাঁ দিকে) শুভাংশু শুক্ল। নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে) — ফাইল চিত্র।
ভারতীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে নাগাদ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পৌঁছেছেন শুভাংশু শুক্ল-সহ চার নভশ্চর। আইএসএস-এ আগে থেকেই থাকা সাত মহাকাশচারী তাঁদের স্বাগত জানান। তার পর ৪৮ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। ইতিমধ্যে পুরোদমে গবেষণার কাজ শুরু করে দিয়েছেন শুভাংশুরা। শনিবার বিকেলে ভিডিয়ো কনফারেন্সে ভারতীয় নভশ্চরের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নভশ্চরের স্বাস্থ্য, গবেষণার অগ্রগতি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন তিনি।
মার্কিন মহাকশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এই মুহূর্তে ১১ জন নভশ্চর রয়েছেন। সকলেই নানাবিধ গবেষণামূলক কাজে ব্যস্ত। ‘এক্সপিডিশন ৭৩’-এর সাত জন ক্রু সদস্য আগে থেকেই মহাকাশ স্টেশনে ছিলেন। তাঁরা শুভাংশু-সহ ‘অ্যাক্স-৪’-এর চার নভশ্চরকে অরবিটাল ল্যাব সিস্টেমের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করছেন। আগামী দু’সপ্তাহ ধরে মাইক্রোগ্র্যাভিটি সংক্রান্ত গবেষণা চলবে। সে জন্য নবাগত চার নভশ্চরকে প্রস্তুত হতেও সাহায্য করছেন তাঁরা। আইএসএস-এ প্রথম প্রথম মাথা ধরেছিল লখনউয়ের ছেলে শুভাংশুর। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘মাথাটা ঝিমঝিম করছে। কিন্তু আগামী ১৪ দিন আমরা এখানে যা করব, তার তুলনায় এই বিষয়টা কিছুই নয়। এটা গর্ব এবং উত্তেজনার মুহূর্ত, মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে আমাদের ব়ড় পদক্ষেপ।’’
শনিবার বিকেলে ভিডিয়ো কনফারেন্সে শুভাংশুকে মোদী প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি যে গাজরের হালুয়া নিয়ে গিয়েছিলেন, তা সকলকে খাইয়েছেন?’’ উত্তরে শুভাংশু হেসে বলেন, ‘‘হ্যাঁ! আমি এখানে গাজরের হালুয়া, মুগের হালুয়া, আম রস নিয়ে এসেছিলাম, যাতে আমার সহযাত্রীরা ভারতের বিভিন্ন ঐতিহ্যশালী খাবার চেখে দেখতে পারেন। মহাকাশ স্টেশনে থাকা বাকিরাও আমার সঙ্গে তৃপ্তি করে সে সব খেয়েছেন। সকলের খুব ভাল লেগেছে।’’
মহাকাশে কেমন কাটল শুভাংশুদের ৪৯ ঘণ্টা?
বৃহস্পতিবার দুপুরে স্পেসএক্সের ‘ড্রাগন’ মহাকাশযানের ‘হ্যাচ’ খুলতেই বেরিয়ে আসেন প্রবীণ নভশ্চর তথা ‘অ্যাক্স-৪’ অভিযানের কমান্ডার পেগি হুইটসন। প্রথমে মহাকাশ স্টেশনে প্রবেশ করেন তিনিই। এর পর একে একে বেরিয়ে আসেন পাইলট শুভাংশু শুক্ল, স্লায়োস উজ়নানস্কি-উইসনিউস্কি এবং টিবর কাপু। শুক্রবার শুরু হয় ড্রাগনের ভিতর থেকে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা, যন্ত্রপাতি এবং পোর্টেবল সায়েন্স ফ্রিজ়ার নামানোর কাজ। এর পর ‘এক্সপিডিশন ৭৩’-এর সদস্যেদের কাছ থেকে অরবিটাল আউটপোস্টে কোনও রকম আপৎকালীন পরিস্থিতিতে তাঁদের দায়িত্ব এবং মিশন নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে যোগাযোগের পদ্ধতি সম্পর্কে বিশদ জেনে নেন শুভাংশুরা। এর মাঝেই নিজেদের গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ‘এক্সপিডিশন ৭৩’-এর সাত সদস্য। কাজ শুরু করে দিয়েছেন শুভাংশুরাও।
ভারতীয় সময় অনুযায়ী বুধবার বেলা ১২টা ১ মিনিট নাগাদ আমেরিকার ফ্লরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ফ্যালকন ৯ রকেটে চেপে মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন অ্যাক্স-৪ অভিযানের চার সদস্য। ২৮ ঘণ্টার দীর্ঘ সফরের পর বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছোন। শুভাংশুর হাত ধরে মহাকাশ স্টেশনে প্রথম পা পড়ে ভারতের। ইতিহাসে প্রথম বার! ১৪ দিনের এই অভিযানের গোটা সময়টা আইএসএস-এই থাকবেন চার নভশ্চর। সেখানে অন্তত ৬০টি পরীক্ষানিরীক্ষা চালাবেন তাঁরা, যার মধ্যে সাতটি ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর।