Light Coming from Human Brain

মানুষের মাথা থেকেও ঠিকরে বেরোয় ক্ষীণ আলোর ‘সঙ্কেত’! আলোর খেলা দেখেই মস্তিষ্কের অন্দরের কার্যকলাপ বুঝবে বিজ্ঞান

জোনাকি, ঈল মাছ, জেলিফিশ— এদের দেহেও আলো জ্বলে। একে বলা হয় বায়োলুমিনিসেন্স। তবে মস্তিষ্ক থেকে আলো ঠিকরে বেরনোর ঘটনাকে কিন্তু বায়োলুমিনিসেন্স বলা চলে না! বরং এর নেপথ্যে রয়েছে অন্য রহস্য। কোথা থেকে আসছে এই আলোকসঙ্কেত?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৫ ০৯:০৫
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

মানবমস্তিষ্ক থেকে সারাক্ষণ নির্গত হচ্ছে ক্ষীণ আলোর সঙ্কেত! শুধু তা-ই নয়, মানসিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে নাকি বদলাতে থাকে সেই সঙ্কেতের প্রাবল্যও। এমনটাই জানা গেল কানাডা ও আমেরিকার বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।

Advertisement

‘আইসায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে প্রমাণ করে দেখানো হয়েছে, মানুষের মস্তিষ্ক থেকে সর্বক্ষণ অত্যন্ত ক্ষীণ আলোকসঙ্কেত নির্গত হয়। মাথার খুলি ভেদ করে ঠিকরে বেরোয় সেই ‘আলো’। গবেষকরা বলছেন, এই আলো অতি দুর্বল হওয়ায় খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু সম্পূর্ণ অন্ধকারে যন্ত্রের সাহায্যে এই আলোকসঙ্কেত রেকর্ড করা যেতে পারে। শুধু তা-ই নয়, মানসিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে আলোর প্রাবল্যেরও তারতম্য হতে থাকে। চোখ বন্ধ করা, আচমকা কোনও শব্দ শোনা— প্রতিটি কাজের সময় নির্গত আলোর পরিমাণ আলাদা আলাদা। ফলে এই আলোকে ভাল করে খতিয়ে দেখলে মস্তিষ্কের অন্দরের কার্যকলাপ সম্পর্কেও নানা অজানা তথ্য মিলতে পারে। খুলে যেতে পারে মস্তিষ্ক সম্পর্কে গবেষণার একটি নতুন দরজাও— যার নাম ‘ফটোএনসেফালোগ্রাফি’।

কোথা থেকে আসছে রহস্যময় এই আলোকসঙ্কেত? কে পাঠাচ্ছে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, জোনাকি, ঈল মাছ, জেলিফিশ— এদের দেহেও আলো জ্বলে। জৈবিক এই ঘটনাকে বলা হয় বায়োলুমিনিসেন্স। তবে মস্তিষ্ক থেকে আলো ঠিকরে বেরনোর ঘটনাকে কিন্তু বায়োলুমিনিসেন্স বলা চলে না! বরং এর নেপথ্যে রয়েছে অন্য রহস্য। স্বাভাবিক বিপাকের সময় সমস্ত জীবন্ত কলা থেকেই ক্ষীণ আলোর কণা নির্গত হয়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অতি-দুর্বল ফোটন নির্গমন। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে উত্তেজিত অণুগুলি থেকে একটি ফোটন কণা নির্গত হয়, যার ফলে অণুটি অপেক্ষাকৃত নিম্ন শক্তির দশায় ফিরে আসে। তবে এই আলো অত্যন্ত ক্ষীণ। স্বাভাবিক ভাবে আমরা খালি চোখে যে আলো দেখতে পাই, মানবমস্তিষ্ক থেকে নির্গত আলো তার প্রায় ১০ লক্ষ ভাগের এক ভাগ! আর সে কারণেই খালি চোখে এই আলোর দেখা পাওয়া অসম্ভব।

Advertisement

শুধু মস্তিষ্কই নয়, অন্যান্য অঙ্গ থেকেও সর্বক্ষণ এই ক্ষীণ আলো নির্গত হচ্ছে। তবে যেহেতু মস্তিষ্কে শক্তির ব্যবহার অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় বেশি এবং মস্তিষ্কে ফ্ল্যাভিন, সেরোটোনিন এবং প্রোটিনের মতো আলোকসক্রিয় (যে সব অণু আলো শোষণ ও নির্গত করতে পারে) যৌগের ঘনত্বও বেশি, তাই মস্তিষ্ক থেকে আলোও নির্গত হয় বেশি।

তা হলে কি এই ক্ষীণ আলোর তারতম্য পর্যবেক্ষণ করলেই মস্তিষ্কের অন্দরের কার্যকলাপ সম্পর্কে আরও বিশদ ধারণা পাওয়া যাবে? এই প্রশ্নই ভাবাচ্ছিল কানাডা ও আমেরিকার তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের। যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। ২০ জন সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপর একটি পরীক্ষা শুরু করেন তাঁরা। অংশগ্রহণকারীদের একটি অন্ধকার ঘরে বসিয়ে শুরু হয় মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ পরিমাপ। আর তাতেই দেখা যায়, চোখ খোলা রাখা, চোখ বন্ধ করে থাকা, বিশ্রাম নেওয়া কিংবা আচমকা কোনও শব্দ শোনা— প্রতিটি কাজের সময় বদলে যাচ্ছে মস্তিষ্ক থেকে আসা আলোকসঙ্কেতগুলিও!

তবে এই আবিষ্কারের নেপথ্যে থাকা বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এখনও তাঁদের গবেষণা রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়েই। শুধু তা-ই নয়, এর বেশ কয়েকটি সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। প্রথমত, মাত্র ২০ জনের উপর এই পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। তা ছাড়া, শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে কী পরিমাণে আলোকসঙ্কেত নির্গত হয়, তার পরিমাপ এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে মস্তিষ্ক ছাড়া শরীরের অন্যান্য কলা থেকে একই রকম আলোর নির্গমন ঘটে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অংশগ্রহণকারীদের বয়স, লিঙ্গ কিংবা স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করে মস্তিষ্কের পাঠানো ‘সঙ্কেত’-এর তারতম্য হয় কি না, তা-ও জানা নেই এখনও। তবে অদূর ভবিষ্যতে মেশিন লার্নিং এবং আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে মস্তিষ্কের নানা রোগ শনাক্ত করতেও দিশা দেখাতে পারে এই গবেষণা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement