Milky Way Black Hole

৪৩০০০০০ সূর্যকে গিলে খেতে পারে! আমাদের ছায়াপথের সেই ব্ল্যাক হোল কত জোরে ঘুরছে? অবশেষে জানলেন বিজ্ঞানীরা

ব্ল্যাক হোল পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ইভেন্ট হরাইজ়ন টেলিস্কোপ (ইএইচটি)। কৃষ্ণগহ্বরের স্পষ্ট ছবি তোলার জন্য বছরের পর বছর ধরে কাজ করে চলেছে এই টেলিস্কোপ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৫ ০৮:৫৮
Share:

আকাশগঙ্গা ছায়াপথের ব্ল্যাক হোল ঘুরছে সর্বোচ্চ গতিতে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আমাদের আকাশগঙ্গা (মিল্কিওয়ে) ছায়াপথের ঠিক মধ্যিখানে যে বিশাল কৃষ্ণগহ্বর বা ‘ব্ল্যাক হোল’ রয়েছে, তাকে নিয়ে আরও কিছু নতুন তথ্য জানতে পারলেন বিজ্ঞানীরা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নতুন গবেষণায় এই সমস্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে, যা ব্ল্যাক হোল নিয়ে বিজ্ঞানীদের এত দিনের ধারণাও অনেকাংশে পাল্টে দিচ্ছে। তাঁরা জানতে পেরেছেন, মিল্কিওয়ের ব্ল্যাক হোল স্যাজিটারিয়াস এ* বা এসজিআর এ* সর্বোচ্চ গতিতে নিরন্তর পাক খাচ্ছে নিজের অক্ষের চারপাশে। পদার্থবিদ্যার হিসাবে যত জোরে ঘোরা সম্ভব, ততটাই জোরে চলছে এই ঘূর্ণন।

Advertisement

ছায়াপথের মধ্যমণি কৃষ্ণগহ্বর। —ফাইল চিত্র।

ব্ল্যাক হোল কী

একটি নক্ষত্রের মৃত্যুতে মহাকাশে ব্ল্যাক হোল জন্ম নেয়। এটি অসীম এক অন্ধকার গহ্বর। ব্ল্যাক হোলের ক্ষমতা এতটাই বেশি যে, তার মধ্যে থেকে আলোও বেরোতে পারে না। ব্ল্যাক হোল গিলে নেয় আশপাশের ছোট-বড় অনেক গ্রহ এবং নক্ষত্রকে। এর মধ্যে দিয়ে আলো বেরোতে পারে না বলে ব্ল্যাক হোল পর্যবেক্ষণ করাও কঠিন। মহাকাশে এই ধরনের একাধিক গহ্বরের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু বিজ্ঞানের কাছে ব্ল্যাক হোল এখনও এক বিরাট রহস্য। অনেকে বলেন, ব্ল্যাক হোলের ৯৯ শতাংশই এখনও অজানা থেকে গিয়েছে। আমাদের পৃথিবী এবং সৌরজগত যে ছায়াপথের মধ্যে রয়েছে, তার মাঝের ব্ল্যাক হোলটির নাম এসজিআর এ*। এর ভর সূর্যের ভরের চেয়ে ৪৩ লক্ষ গুণ বেশি। সহজ কথায়, এই ব্ল্যাক হোলের মধ্যে এঁটে যেতে পারে প্রায় ৪৩ লক্ষটি সূর্য। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ২৬ হাজার আলোকবর্ষ। সাধারণত, এক সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার দূরে যেতে পারে আলো। পদার্থবিদ্যার হিসাবে সর্বোচ্চ গতি এটাই। আলোর চেয়ে দ্রুতগামী কিছু এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। মিল্কিওয়ের ব্ল্যাক হোলের ঘূর্ণন গতিও আলোর সমান বলেই মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আরও বিশদ গবেষণা প্রয়োজন।

Advertisement

কী ভাবে চলছে গবেষণা

ব্ল্যাক হোল পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ইভেন্ট হরাইজ়ন টেলিস্কোপ (ইএইচটি)। কৃষ্ণগহ্বরের স্পষ্ট ছবি তোলার জন্য বছরের পর বছর ধরে কাজ করে চলেছে এই টেলিস্কোপ। যে ছবিগুলি তোলা হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তার ব্যাখ্যার বন্দোবস্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। ব্ল্যাক হোলের একগুচ্ছ ভার্চুয়াল ছবি এআই-এর মাধ্যমে আগে গড়া হচ্ছে। তার পর আসল পর্যবেক্ষণের সঙ্গে যে ছবিটি সবচেয়ে বেশি মিলছে, সেটি নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। নেদারল্যান্ডসের র‌্যাডবোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর রেডিয়ো অ্যাস্ট্রোনমির গবেষকদলের এই সংক্রান্ত সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

মহাকাশে ব্ল্যাক হোলের কাল্পনিক ছবি। —ফাইল চিত্র।

কী কী জানা গেল

পর্যবেক্ষণ বলছে, পদার্থবিদ্যার হিসাবে সর্বোচ্চ গতিতে ঘুরছে মিল্কিওয়ের ব্ল্যাক হোল। তার ঘূর্ণন অক্ষটি পৃথিবীর দিকে নির্দেশ করছে। ব্ল্যাক হোলের চারপাশে যে আভা দেখা যাচ্ছে, সেটি তৈরি হচ্ছে গরম ইলেকট্রনের প্রভাবে। ব্ল্যাক হোলটির চারপাশে যে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র রয়েছে, তা সম্বন্ধেও বিজ্ঞানীদের প্রচলিত ধারণা বদলে গিয়েছে নতুন পর্যবেক্ষণে।

পৃথিবী থেকে ৫.৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অন্য এক ছায়াপথের মধ্যে রয়েছে প্রকাণ্ড ব্ল্যাক হোল এম৮৭*। ইএইচটি টেলিস্কোপের সাহায্যে তার দিকেও নজর রাখা হয়েছে। এটি মিল্কিওয়ের এসজিআর এ*-এর চেয়ে আকারে কয়েক হাজার গুণ বড়। এক গ্রাসে গিলে নিতে পারে তিন হাজার কোটি সূর্যকে। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হল, এই ব্ল্যাক হোলটির ঘূর্ণন গতি মিল্কিওয়ের ব্ল্যাক হোলের চেয়ে অনেক কম। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি আরও একটি অতিকায় ব্ল্যাকহোলের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। তার ফলে এর মধ্যেকার পদার্থ এখন ঘুরছে বিপরীত দিকে। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে, ভবিষ্যতে বড় আকারের টেলিস্কোপ দিয়ে আরও দূরের ব্ল্যাক হোল নিয়ে খোঁজখবর চালানো সম্ভব হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় মিলবে আরও রহস্যের উত্তর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement