Plastic pollution

প্লাস্টিক থেকে ভ্যানিলা বানিয়ে দূষণ কমানোর পথ দেখালেন বিজ্ঞানীরা

এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘গ্রিন কেমিস্ট্রি’-তে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২১ ১৩:২১
Share:

-ফাইল ছবি।

হয়তো সেই দিন আর খুব দূরে নেই, যখন ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল থেকেই তৈরি হবে সুগন্ধী ভ্যানিলা! বানানো যাবে আইসক্রিমও।

Advertisement

নষ্ট করা বা বদলে ফেলা কার্যত অসম্ভব বলে দিনকে দিন পরিবেশকে যা বিষিয়ে তুলছে, সেই প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার আশা জাগাল সাম্প্রতিক একটি আবিষ্কার। যা অনেক কম খরচে বর্জ্য প্লাস্টিককে বদলে দেবে মানুষের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দ্রব্য ভ্যানিলিন-এ। খাদ্য, প্রসাধনী, ওষুধ, ঘর ও আসবাব পরিষ্কার করার জিনিসপত্র এবং বিভিন্ন ভেষজনাশক (হার্বিসাইড) তৈরির জন্য যা অন্যতম উপাদান। বর্জ্য প্লাস্টিককে এই ভাবে পরিবেশ থেকে সরিয়েও দেওয়া যাবে অনেক কম খরচে। ফলে পুকুর, নদী, সমুদ্র ও মহাসাগরে উত্তরোত্তর বেড়ে চলা বর্জ্য প্লাস্টিকের পরিমাণ নিয়ে নিয়ে যে গভীর উদ্বেগ এখন বিশ্বের সর্বত্র, এই আবিষ্কার আগামী দিনে তার থেকে রেহাই পাওয়ার আলো দেখাতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘গ্রিন কেমিস্ট্রি’-তে। বর্জ্য প্লাস্টিককে এই ভাবে মানুষের খুব কাজে লাগার পদার্থে বদলে ফেলে পরিবেশের বিষ হাল্কা করার জন্য গবেষকরা কাজে লাগিয়েছেন একটি বিশেষ ধরনের ব্যাক্টেরিয়াকে। যার নাম- ‘ই কোলি’।

Advertisement

তাঁরাই প্রথম দেখিয়েছেন, এই ব্যাক্টেরিয়ার জিনে কিছু রদবদল ঘটিয়ে যদি তাকে আরও শক্তিশালী করে তোলা যায়, তা হলে ই কোলি খুব সহজেই বাতাস থেকে টেনে নিতে পারে বর্জ্য প্লাস্টিকের বিষ।

এর আগে অন্যান্য গবেষণায় জানা গিয়েছিল, প্লাস্টিক ক্ষয়ে গিয়ে দীর্ঘ সময় পরে টেরেফথ্যালিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়। এই অ্যাসিড বিষাক্ত। ফলে, তা জল ও পরিবেশের পক্ষে হয়ে ওঠে আরও বিপজ্জনক।

এই টেরেফথ্যালিক অ্যাসিডকে মানুষের ব্যবহারযোগ্য কোনও পদার্থে এত দিন রূপান্তরিত করা সম্ভব হচ্ছিল না বলেই প্লাস্টিকের দূষণ অত্যন্ত চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বিশ্বে প্রতি মিনিটে ১০ লক্ষ প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি হয়। এর মাত্র ১৪ শতাংশকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব আধুনিক প্রযুক্তিতে। বাকিটা জল ও পরিবেশকে দূষিত করে নানা ভাবে। সেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় বস্ত্র ও কার্পেট উৎপাদন শিল্পে। ভারতকে এই দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়া প্লাস্টিক চ্যালেঞ্জ— হ্যাকাথন ২০২১’ নামে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্য, ২০২২ সালের মধ্যেই ভারতকে সিঙ্গল ইউজ, অর্থাৎ এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক থেকে মুক্ত করতে হবে। যে সংস্থা ৪০ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি দিন গড়ে প্রায় ২৬০০০ টন প্লাস্টিক উৎপন্ন হয়। তার মধ্যে প্রায় ১০০০০ টনই সংগৃহীত হয় না।

এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে এই গবেষণা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন ই কোলি ব্যাক্টেরিয়া ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক দিনে বিষাক্ত টেরেফথ্যালিক অ্যাসিডকে সুগন্ধী ভ্যানিলিনে বদলে দিতে পারে। যা ভ্যানিলার প্রধান উপাদান। বিশ্বে এখন ভ্যানিলা মূলত তৈরি করা হয় কয়লা বা খনিজ তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পাওয়া রাসায়নিক থেকে। প্রয়োজনের তুলনায় যা খুবই অপ্রতুল। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানিই এখন গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সভ্যতার। তার ব্যবহারও বন্ধের কথা ভাবা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন