ঋতুচক্র বুঝিয়ে দিতে নতুন বন্ধু দোলনদি

রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর উদ্যোগী হয়ে এই কার্টুন চরিত্রটি তৈরি করেছে অল্পবয়সী মেয়েদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্য, অভ্যাস, এবং  ছেলেমেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালীন বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে প্রচার চালানোর জন্য।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৫:০২
Share:

বয়স কুড়ির কোঠায় হলেও পরনে নীল শাড়ি, লম্বা ঝোলা ব্যাগ। ফিতে দিয়ে বাঁধা দু’টো বিনুনি, কপালে টিপ। তবে শাড়ি, বিনুনির জন্য তাঁকে প্রাচীনপন্থী মনে করাটা ভুল। স্কুটার চালিয়ে ঘুরে বেড়ানো আধুনিকা তিনি। মেয়েদের বয়ঃসন্ধিজনিত সমস্যা নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে জড়তাহীন, সোজাসাপ্টা।

Advertisement

তিনি দোলনদি।

রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর উদ্যোগী হয়ে এই কার্টুন চরিত্রটি তৈরি করেছে অল্পবয়সী মেয়েদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্য, অভ্যাস, এবং ছেলেমেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালীন বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে প্রচার চালানোর জন্য। ঠিক যেমন এডস নিয়ন্ত্রণ ও মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্য দফতর এক সময় ‘বুলাদি’কে সামনে এনেছিল, কিংবা নির্বাচন সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এসেছিলেন ‘আনন্দবাবু’।

Advertisement

পঞ্চায়েত দফতরের যুগ্মসচিব সোনালী দত্ত রায়ের কথায়, ‘‘বুলাদি বা আনন্দবাবুর তুলনায় অনেক কমবয়সী হিসাবে দেখানো হয়েছে দোলনদিকে। স্কুলের অল্পবয়সী দিদিমণির মতো। যাকে কিশোর-কিশোরীরা খোলাখুলি নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারে।’’

বুলাদি এবং তাঁর ‘লুডোখেলা’ এক সময় রঙ্গব্যঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল। এখন দোলনদিকে নিয়ে যে পুস্তিকা ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় স্কুল, সবলা গ্রুপ, কন্যাশ্রী ক্লাব বা স্বনির্ভরতা গোষ্ঠীর মধ্যে বিলি করা হয়েছে তার সাবলীলতা কিন্তু অনেককেই চমকে দিয়েছে।

পুস্তিকায় স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার, ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি ছবি ও গ্রাফিক্সের সাহায্যে আলোচনা করা হয়েছে। ঋতুকালীন সময় কাপড় ব্যবহার করলে, কী ভাবে তা ধুতে বা শুকোতে হবে তা-ও বোঝানো আছে। কো-এডুকেশন স্কুলগুলিতেও এই পুস্তিকা বিলি হচ্ছে।

বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠন, শিক্ষাবিদ কিংবা নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মীদের অনেকেই দোলনদি মারফত সরকারের এই প্রচারকে সামাজিক বিপ্লব বলতে দ্বিধা করছেন না। এক শিক্ষাবিদের কথায়, ‘‘এই রাজ্যেই স্কুলে জীবনশৈলীর পাঠ নিয়ে রাজনৈতিক এবং অতি-রক্ষণশীল মহল থেকে বিরোধিতা এসেছিল। এক দল ‘বিক্ষুব্ধ’ শিক্ষক-শিক্ষিকা জানিয়েছিলেন, ক্লাসে ওই বই পড়াতে তাঁদের অস্বস্তি হবে। সেই রাজ্যেই এ বার ছেলেমেয়েরা বয়ঃসন্ধির সমস্যা নিয়ে সরকারি পুস্তিকা হাতে পাচ্ছে, এটা বিপ্লব নয়?’’

নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘ‌োষও উচ্ছ্বসিত, ‘‘ঋতুকালীন সময়ে আচারে হাত না-দেওয়া, ঠাকুর না ছোঁওয়ার মতো সমস্যা এখনও মেয়েদের ভোগ করতে হয়। সেই সময়েই দোলনদির পুস্তিকায় সহজসরল ভাষায় শারীরিক পরিবর্তনকে বোঝানো হয়েছে।’’

সোনালীদেবী জানিয়েছেন, সরকারি সমীক্ষায় ঋতুকালীন সময়ে মেয়েদের অদ্ভুত সব নিয়মকানুন ও অভ্যাসের কথা সামনে এসেছে। এই পুস্তিকা যাবতীয় কুসংস্কার দূর করে স্বাস্থ্য-সচেতনতা বাড়াতে চায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement