‘নাইট ওয়াচম্যান’ দীর্ঘ ইনিংস খেললে ম্যাচ সম্পূর্ণ ঘুরে যেতে পারে!

মনমরা সেন্ট্রাল হলের ক্রিকেট-লবি! নেশা ক্রিকেট হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সাবধানি দূরত্ব বজায় রাখছেন অরুণ জেটলি। অখুশি কংগ্রেস এবং বিজেপির সংশ্লিষ্ট নেতারাও।

Advertisement

অগ্নি রায় ও স্বপন সরকার

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৬
Share:

মনমরা সেন্ট্রাল হলের ক্রিকেট-লবি! নেশা ক্রিকেট হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সাবধানি দূরত্ব বজায় রাখছেন অরুণ জেটলি। অখুশি কংগ্রেস এবং বিজেপির সংশ্লিষ্ট নেতারাও।

Advertisement

কেননা ‘নাইট ওয়াচম্যান’ দীর্ঘ ইনিংস খেললে ম্যাচ যে সম্পূর্ণ ঘুরে যেতে পারে! ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত রাজনীতিবিদেরা আপাতত সেই আশঙ্কাই করছেন।

সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত ক্রিকেটের প্রশাসনিক প্যানেলের প্রধান বিনোদ রাই দায়িত্ব নিয়েই হাল্কা মেজাজে বলেছিলেন, ‘‘আমার ভূমিকাটা শুধু এক জন নাইট ওয়াচম্যানের! কারণ, আমাদের কাজ বোর্ডকে এমন এক প্রশাসন উপহার দেওয়া, যাতে মসৃণ ভাবে এগোনো যায়।’’ আপাতত স্থির হয়েছে, আসন্ন আইপিএলের সম্প্রচার-স্বত্বের বিষয়টা যাতে একশো শতাংশ স্বচ্ছ থাকে, তা নিশ্চিত করার বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দেবে এই প্যানেল। সেটা মিটলে পরবর্তী পদক্ষেপ হবে বিসিসিআই-কে ঢেলে সাজা। যেখানে কোনও রাজনীতিবিদ অথবা ব্যবসায়ী মহলের প্রভাবকে কোনও ভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

Advertisement

“দায়িত্বভার নিয়েছি। তাই এখন এই নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করব না।” —রামচন্দ্র গুহ

“বিসিসিআই কী ভাবে কাজ করে না করে, আমরা তা বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি।” —বিনোদ রাই

সব মিলিয়ে যত সময় যাচ্ছে, দিল্লির রাজনৈতিক অলিন্দে এটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, নিছক নাইট ওয়াচম্যান হতে আসেননি রাই। গত মঙ্গলবার বোর্ড যু্গ্মসচিব অমিতাভ চৌধুরীকে (নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন-ঘনিষ্ঠ) যে-ভাবে হেনস্থা হতে হল, তাতেই স্পষ্ট, বর্তমান বোর্ডকর্তাদের ক্ষমতা খর্ব হতে চলেছে। সুপ্রিম কোর্টের বরাভয় হাতে লোঢা কমিশন নিযুক্ত প্রশাসনিক প্যানেল নামতে চলেছে শুদ্ধকরণের কাজে। সূত্রের খবর, সেখানে সরকারের কোনও নেতার খবরদারি যাতে না-থাকে, তা নিশ্চিত করতে চাইছেন রাই।

দায়িত্ব পাওয়ার পরে মুখে কুলুপ এঁটেছেন রাই এবং তাঁর বাহিনী। ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ বলছেন, ‘‘দায়িত্বভার নিয়েছি। তাই এখন এই নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করব না।’’ কমনওয়েলথ গেমস, কয়লা, টু-জি কেলেঙ্কারি ফাঁস করা প্রাক্তন সিএজি প্রধান বিনোদ রাই বলছেন, ‘‘বিসিসিআই কী ভাবে কাজ করে না-করে, তা বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি আমরা। সেই কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এ বার ভবিষ্যতের কর্মপন্থা ঠিক করব।’’

স্বাভাবিক ভাবেই ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে এত দিন জড়িয়ে থাকা বিজেপি বা কংগ্রেস নেতারাও এই প্যানেল নিয়ে অখুশি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, যথেষ্ট চাপে রয়েছেন আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল। রাই সম্পর্কে অবশ্য মুখে বলছেন, ‘‘এই তো সবে শুরু করলেন উনি। এত তাড়াতাড়ি কারও সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয় না। আশা করি, যা হচ্ছে, তাতে ভারতীয় ক্রিকেটের ভালই হবে।’’ রামচন্দ্র গুহকে প্যানেলের অন্যতম সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট, সেটাও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যে সুমধুর নয়, সেটা কারও অবিদিত নয়। দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি এই সিদ্ধান্তে ঘোর অখুশি হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করছেন না। কিন্তু ঘনিষ্ঠ মহলে বিজেপির শীর্ষ নেতা বলেছেন, ‘‘উনি তো গজেন্দ্র চৌহানকে পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে নিয়োগের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন। বলেছিলেন, গজেন্দ্র বি গ্রেডের ক্রিকেটার! তা হলে এখন পাল্টা প্রশ্ন করতে হয়, রামচন্দ্র গুহ কোন গ্রেডের ক্রিকেটার!’’ এখানেই না-থেমে বিজেপি নেতা আরও বলছেন, ‘‘বিনোদ রাই কোনও একটি ক্ষেত্রে লোঢাকে একটি কমিটিতে নিয়েছিলেন। তাই এখন সেই কৃতজ্ঞতা ফিরিয়ে দিলেন লোঢা!’’ যদিও সরকারি ভাবে সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্যানেলের নাম পেশ করেছিলেন আদালত-বান্ধব গোপাল সুব্রহ্মণ্যমেরা।

দলীয় রাজনীতিতে জেটলির বিরোধী পক্ষ, সাংসদ তথা ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ মনে করিয়ে দিতে চাইছেন, ডিডিসিএ (দিল্লি ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন)-তে জেটলির জমানায় দুর্নীতির অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। লোঢা কমিশনের নতুন নিয়োগের পরে তাই কীর্তি বলছেন, ‘‘দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার পাশাপাশি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডেও দুর্নীতি আকাশছোঁয়া। এটা সবাই জানেন। এঁদের মতো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষদের দিয়ে যদি স্লেট পরিষ্কার করা যায়, তাতে ভালই হবে।’’ একই সুরে বিষেণ সিংহ বেদী বলেছেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত আরও পঞ্চাশ বছর আগে নিলে ভাল হতো!’’

সংশ্লিষ্ট শিবিরের বক্তব্য, সাম্প্রতিক অতীতে বিসিসিআই-কর্তাদের রেকর্ড এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক কর্তাদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখবে এই প্যানেল। ২০১৫-’১৬ সালে বিসিসিআইয়ের বার্ষিক আয় ছিল ২৯৮১.১০ কোটি টাকা। এই বিপুল অর্থভাণ্ডারের যাবতীয় হিসেবনিকেশও খতিয়ে দেখা হবে। ভবিষ্যতের কর্মপন্থার মধ্যে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে মিডিয়া-স্বত্ব কেনাবেচার বিষয়টিকে, যা কিনা বোর্ডের সব চেয়ে বড় আয়ের জায়গা। ২০১৫-’১৬ সালে এই ক্ষেত্রে ৬৪৮ কোটি টাকা আয় করেছিল বোর্ড। সূত্রের খবর, ২০১৬-’১৭ সালে এই আয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ১০৩৭ কোটি টাকার কাছাকাছি। সমস্ত রেকর্ড তছনছ করে দিচ্ছে এই স্কোর। বিপুল অঙ্কের উপার্জনের মধ্যে কোনও অনিয়ম অথবা দুর্নীতি রয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখাটাকেই প্রাথমিক ভাবে পাখির চোখ করছেন রাই এবং তাঁর প্যানেলের অন্যতম সঙ্গী বিক্রম লিমায়ে। এপ্রিলে শুরু হচ্ছে আইপিএল। ইতিমধ্যেই কালো ছাপ লেগে যাওয়া বিপুল টাকা লেনদেনের এই ক্রিকেট যজ্ঞটি হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। রাই গোড়াতেই জানিয়ে দিয়েছেন, আইপিএল হবে নির্ধারিত সময়েই। কোন চ্যানেল সম্প্রসারণের দায়িত্ব পাবে, তা এই মাসের মধ্যেই জানা যাবে। সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে যাতে কোনও রকম পক্ষপাত না-হয়, সে-দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন