অর্ধশতরানের পর অভিষেকের উচ্ছ্বাস (ডান দিকে)। পাশে শুভমন। ছবি: পিটিআই।
পাকিস্তানের ইনিংসে ১০ ওভার সবে শেষ হয়েছে। দুবাইয়ের গ্যালারিতে থমথমে মুখে দেখা গেল কয়েক জন ভারতীয় সমর্থককে। একটু দূরে গান গেয়ে উল্লাস করছেন পাকিস্তানের সমর্থকেরা। স্কোরবোর্ডে দেখাচ্ছে, পাকিস্তান ৯১/১। জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে, সুপার ফোরে শেষমেশ পা হড়কাবেন না তো সূর্যকুমার যাদবেরা?
তা হল না। ভারত জিতল ৬ উইকেটে। তবে এটাও ঠিক, গ্রুপ পর্বে জয় যতটা সহজে এসেছিল, ম্যাচ যতটা একপেশে হয়েছিল, সুপার ফোরে তা দেখা গেল না। পাকিস্তান লড়াই রাখল। বেশ কিছুটা সময় চাপেও রাখল ভারতকে। শেষ পর্যন্ত জয় হল মাঠে থাকা সাহসী দলেরই। অভিষেক শর্মা, শুভমন গিল যে ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন, সেটাকেই কাজে লাগিয়ে দলকে জেতালেন তিলক বর্মা, হার্দিক পাণ্ড্যেরা।
টসে হেরে আগে ব্যাট করে পাকিস্তান তুলেছিল ১৭১/৫। জবাবে ভারত সেই রান তুলে দিল ৪ উইকেট হারিয়েই। ম্যাচে ভারতের ইতিবাচক দিক যেমন রয়েছে, তেমনই চিন্তারও কারণ রয়েছে।
পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারে বদল
প্রথম তিনটি ম্যাচে এক রানও করতে পারেননি সাইম আয়ুব। তিনটি ম্যাচেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের বিরুদ্ধে এই ওপেনার আর এক বার ব্যর্থ হন তা চায়নি পাকিস্তান। তাই ব্যাটিং অর্ডার বদলে ফেলে তারা। সাহিবজ়াদা ফারহানের সঙ্গে পাঠানো হয় দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার ফখর জ়মানকে। শুধু ওপেনিংই নয়, বাকি ব্যাটিং অর্ডারেও বদলেছে তারা। তা কাজেও দিয়েছে। ফখর যতই বিতর্কিত ক্যাচে আউট হন, শুরুটা আগ্রাসী করে ভারতের বোলারদের চাপে ফেলে দিয়েছেন। তিনে নামায় সুবিধা হয় আয়ুবেরও। তিনিও এশিয়া কাপে প্রথম বার খাতা খুলতে পেরেছেন। ফারহান অর্ধশতরান করলেও বেশি বল খেলে ফেলায় পরের দিকে বেশ অসুবিধা হয়েছে পাকিস্তান। তবে মহম্মদ হ্যারিসের জায়গায় কেন হুসেন তালাত বা মহম্মদ নওয়াজ়কে (দু’জনেরই স্ট্রাইক রেট ১০০-র কম) নামানো হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
শুভমনের ফর্মে ফেরা
তিন ম্যাচে ৩৫ রান করা শুভমনকে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানে ফিরতেই হত। পাকিস্তান ম্যাচেই সেই মঞ্চটা বেছে নিয়েছিলেন শুভমন। শনিবার ঐচ্ছিক অনুশীলন থাকলেও তিনি অনুশীলন করেছিলেন। আর অনুশীলন করিয়েছিলেন তাঁর ওপেনিং সতীর্থ তথা ছোটবেলার বন্ধু অভিষেক শর্মা। তার প্রতিফলন দেখা গেল রবিবার। আকাশে শট খেলার দিকে নজর দেননি শুভমন। বরং মাটিতে রেখে বল বাউন্ডারিতে পাঠানোর চেষ্টা করেছেন। ইনিংসে আটটি চারই তার প্রমাণ। তবে যে ভাবে আউট হলেন তা নিঃসন্দেহে চিন্তায় রাখবে ভারতের সহ-অধিনায়ককে। ফাহিম আশরফের বল পিচে পড়ে ভেতরে ঢুকে এসেছিল। বলের লাইন বুঝতেই পারেননি শুভমন। ওমান ম্যাচে ঠিক একই ভাবে আউট হতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। শুভমন আগেই ব্যাট চালিয়ে দিচ্ছেন বলে মনে হয়েছে।
ভারতের বিধ্বংসী শুরু
গেল গেল রব উঠতে শুরু করেছিল পাকিস্তান ১৭১ রান তোলার পরেই। বহু দিন ভারতের বোলারদের বিরুদ্ধে এই দাপট দেখাতে পারেনি পাকিস্তান। কিন্তু ভারতের ওপেনিং জুটিই যে তাদের থেকে ম্যাচ কেড়ে নেবে সেটা ভাবতে পারা যায়নি। প্রথম বলে ছয় দিয়ে শুরুটা করেছিলেন অভিষেক। তার পর ম্যাচ যত এগোল তত পাকিস্তান বোলারদের দুরবস্থা প্রকট হয়ে গেল। অভিষেক অনায়াসে তুলে তুলে মারলেন পাকিস্তানের বোলারদের। পেসার, স্পিনার কোনও কিছু দিয়েই তাঁকে আটকাতে পারছিল না পাকিস্তান। শাহিন এমনিতেই খারাপ ফর্মে। কিন্তু দলে আসা হ্যারিস রউফকেও দাঁত ফোটাতে দিল না ভারত।
ভারতকে চাপে ফেলতে ব্যর্থ পাকিস্তান
ভারতের বিরুদ্ধে মোটামুটি লড়াই করার মতো রান তুলেছিল পাকিস্তান। কিন্তু বল হাতে তারা চরম ব্যর্থ। ন্যুনতম লড়াইটুকুও দেখা গেল না। চেষ্টা তারা করেছে ঠিকই। কিন্তু এই ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান দলের ফারাক এতটাই যে, সীমিত শক্তি নিয়ে লড়াই করার কথা ভাবাটাই বৃথা। দু’দলের ক্রিকেটারদের গুণগত মানই ফারাক গড়ে দিয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটারেরা গোটা বিশ্বে এবং আইপিএলে নিয়মিত খেলে যথেষ্ট পরিণত। ফলে চাপ নেওয়া তাঁদের কাছে নতুন কিছু নেই। পাকিস্তানের নবাগতদের চাপের মুখে ভেঙে পড়তে দেখা গিয়েছে।
ফিল্ডারদের ক্যাচ ফেলা
এত কিছুর পরেও ভারত যে এই ম্যাচে নিষ্কণ্টক জয় পেয়েছে, তা বলা যাবে না। কিছু দিন আগেই ফিল্ডিং কোচ টি দিলীপ বড় মুখ করে বলেছিলেন, দুবাইয়ের গরম এবং স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের কথা মাথায় রেখে বিশেষ ধরনের অনুশীলন করেছেন তাঁরা। তার ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না রবিবার। সোজা সোজা ক্যাচও ফস্কেছেন ভারতীয় ফিল্ডারেরা। অভিষেক একাই দু’টি ক্যাচ ফেলেছেন, যাঁর ফিল্ডার হিসাবে যথেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে। শুভমনের মতো ফিল্ডার লোপ্পা ক্যাচ ফস্কেছেন। রাহুল দ্রাবিড় জমানার একমাত্র কোচ দিলীপ নিঃসন্দেহে চাপে পড়বেন। আগামী দিনে কী করেন, সেটাই দেখার।
বুমরাহের খারাপ দিন
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাধারণত জসপ্রীত বুমরাহ একটু ভালই খেলেন। তবে রবিবার দিনটা তাঁর কাছে অফিসের একটা খারাপ দিনের মতোই। তাঁকে অবলীলায় খেলে দিলেন ফারহান, আয়ুবের মতো ব্যাটারেরা। ৪ ওভারে বুমরা দিলেন ৪৫ রান। অর্থাৎ প্রতি ওভারে ১০ রানেরও বেশি। টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লে এবং ডেথ ওভারে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সিদ্ধহস্ত বুমরাহ। কিন্তু এ দিন সেটা দেখা যায়নি। ১৯তম ওভারে বল করতে এসে ১১ রান দিলেন, যা বিরল।
ভারতকে আটকানো সম্ভব?
চলতি প্রতিযোগিতাতে চারটি ম্যাচেই জিতল ভারত। শেষ দু’টি ম্যাচে একটু হলেও চাপে পড়েছে। তার পরেও এই ভারতীয় দলকে আটকানো সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। বাকি দলগুলির সঙ্গে এই মুহূর্তে ভারতের গুণমানের ফারাক অনেকটাই। এখনও শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের সঙ্গে খেলা বাকি। তবে দু’টি দলই এখনও পর্যন্ত যে ভাবে খেলেছে, তাতে ছন্দে থাকা এই ভারতকে আটকাতে গেলে তাদের অলৌকিক কিছু করে দেখাতে হবে। পরের রবিবার সূর্যকুমারের হাতে ট্রফি না উঠলে সেটাই অবাক করার মতো ব্যাপার হবে।