শাহিদ আফ্রিদি। —ফাইল চিত্র।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বাতিল নিয়ে বিতর্ক এখনও থামছে না। ভারতীয় ক্রিকেটারদের আপত্তিতে ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অফ লেজেন্ডস’-এ ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ বাতিল হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনার পর ভারতের এক ক্রিকেটারকে নিশানা করেছেন শাহিদ আফ্রিদি। পাকিস্তানের ক্রিকেটারের মতে, এক জনের জন্যই এই খেলা ভেস্তে গিয়েছে।
আফ্রিদির নিশানায় শিখর ধাওয়ান। সরাসরি নাম না করলেও পাক ক্রিকেটারের ইঙ্গিত স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে না চেয়ে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিলেন ধাওয়ানই। তিনি সমাজমাধ্যমে জানান যে, তিনি এই ম্যাচ খেলবেন না। পাশাপাশি আয়োজকদের ম্যাচ বাতিলের জন্য তাঁরা একটা চিঠিও লেখেন। সেই চিঠিও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন ধাওয়ান। তার পরে আয়োজকদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এই ম্যাচ হচ্ছে না। তার আগে অবশ্য হরভজন সিংহ, সুরেশ রায়না, ইরফান ও ইউসুফ পাঠান জানিয়েছিলেন যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলবেন না। কিন্তু ধাওয়ানের মতো কড়া প্রতিক্রিয়া তাঁরা দেননি।
আফ্রিদির মতে, ধাওয়ানের কারণেই খেলা ভেস্তে গিয়েছে। তিনি বলেন, “খেলা বিভিন্ন দেশের মধ্যে দূরত্ব কমায়। যদি সব কিছুর মধ্যে রাজনীতি চলে আসে তা হলে কী ভাবে আপনি এগোবেন? আলোচনা ছাড়া তো সমস্যা মিটবে না। কিন্তু কিছু করার নেই। একটা পচা ডিম আছে। সে সব নষ্ট করে দিচ্ছে।”
এই প্রথম নয়, এর আগেও সরাসরি কথার লড়াই হয়েছিল আফ্রিদি ও ধাওয়ানের। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর নিজের দেশের সমর্থনে মুখ খুলেছিলেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। ভারতীয়দের মধ্যে সকলেই পাকিস্তানের নিন্দা করেছিলেন। তার মাঝেই পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে ভারতকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন শাহিদ আফ্রিদি। তার জবাবে ধাওয়ান লিখেছিলেন, “কার্গিলেও তোমাদের হারিয়েছিলাম। এত নীচে নেমেছ, আর কত নামবে? উল্টোপাল্টা মন্তব্য করার চেয়ে নিজের দেশের ভাল হয় এমন কোনও কাজ করো। ভারতীয় সেনাদের নিয়ে আমরা গর্বিত।” আফ্রিদির নেতৃত্বাধীন সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে ধাওয়ান খেলবেন না তা স্পষ্ট ছিল। সেই কারণেই হয়তো আফ্রিদি আবার ধাওয়ানকেই নিশানা করেছেন।
আফ্রিদির মনে হয়েছে, ভারতীয় দলের বাকিদের খেলার ইচ্ছা ছিল। ম্যাচ না হওয়ায় তাঁরাও হতাশ হয়েছেন। আফ্রিদি বলেন, “ওরা ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন করেছে। আমার মনে হয়, এক জন ক্রিকেটারের জন্যই ওরা সরে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় দলও এই ঘটনায় হতাশ। ওরা খেলতে এসেছে। দেশের নাম উজ্জ্বল করা উচিত আপনাদের। বদলে আপনারা দেশকে লজ্জা দিচ্ছেন।”
পাকিস্তানের ক্রিকেটার স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, যদি তাঁকে নিয়েই সমস্যা, তা হলে সেটা আগে থেকেই বলে দিতে পারত ভারতীয় দল। তিনি নিজে সরে যেতেন। আফ্রিদি বলেন, “ওদের যদি আমার খেলা নিয়ে সমস্যা ছিল, সেটা বলে দিতে পারত। আমি হোটেলে বসে থাকতাম। ক্রিকেটের থেকে তো আমি বড় নই। ১৭-১৮ হাজার দর্শক বঞ্চিত হলেন। ওরা যদি না-ই খেলবে তা হলে এখানে কেন এল? যাও হোটেলে বসে নিজেদের মধ্যেই খেলো।”
আফ্রিদি যা-ই বলুন না কেন, শুধু ধাওয়ান নন, হরভজন, পাঠান ভাইয়েরাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলবেন না তাঁরা। পাকিস্তানের ম্যাচ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে প্রতিযোগিতার অন্যতম স্পনসর ‘ইজ়মাইট্রিপ ডট কম।’ তারা জানিয়েছে, “দু’বছর আগে এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি হয়েছে। তার পরেও আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। এই প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের কোনও ম্যাচের সঙ্গে আমরা যুক্ত নই। আমরা ভারত চ্যাম্পিয়ন্সকে সমর্থন করি। ওদের পাশে আমরা রয়েছি। নীতিগত ভাবে পাকিস্তানের কোনও ম্যাচের প্রচার আমরা করব না।” ভারতকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বার্তাও দিয়েছে ‘ইজ়মাইট্রিপ ডট কম।’ তারা আরও লিখেছে, “আমরা শুরু থেকেই প্রতিযোগিতার আয়োজকদের আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিলাম। পাকিস্তানের কোনও ম্যাচে আমরা নেই। ভারত আমাদের কাছে সকলের আগে। কাপ জিতে দেশে ফেরো।”