দলের মধ্যমণি। বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে উল্লাস ভারতীয় অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌরের। ছবি: পিটিআই।
একটা সময় মনে হচ্ছিল, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে সমস্যা হবে ভারতের। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দল। শুধু সেমিফাইনালে ওঠা নয়, একেবারে বিশ্বকাপ জিতে থেমেছেন হরমনপ্রীত কৌর, স্মৃতি মন্ধানারা। কী ভাবে সম্ভব হল এই জয়? কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াল ভারতীয় দল? বিশ্বকাপ জিতে সাংবাদিক বৈঠকে তার নেপথ্য কারণ শোনালেন ভারত অধিনায়ক হরমনপ্রীত।
এক রাতেই বদলেছিল গোটা দল
ইংল্যান্ডের কাছে হার বড় ধাক্কা দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটারদের। জয়ের মুখ থেকে হারতে হয়েছিল। সেই রাতেই ক্রিকেটারদের মনোভাব বদলে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন হরমনপ্রীত। তিনি বলেন, “ইংল্যান্ডের কাছে হার মানতে পারিনি। খুব কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু কেউ ভেঙে পড়েনি। কেউ বলেনি, এর পর কী করব। সেই রাতে অনেক কিছু বদলে গিয়েছিল। বলতে পারি, এক রাতে বদলে গিয়েছিল গোটা দল। আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম, আরও আক্রমণাত্মক মানসিকতা নিয়ে নামব। জিততেই হবে। সেই মানসিকতা ফাইনাল পর্যন্ত ধরে রাখতে পেরেছি।”
মাঠ বদলানোয় ভাগ্য বদল
প্রথমে ঠিক ছিল, বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল বেঙ্গালুরুতে হবে। কিন্তু আরসিবি আইপিএল জেতার পর পদপিষ্টের ঘটনার পর সেখান থেকে বিশ্বকাপের খেলা সরিয়ে দেওয়া হয়। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল সরে আসে নবি মুম্বইয়ে। মাঠ বদলে যাওয়ায় হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলেন হরমনপ্রীতেরা। ভারত অধিনায়ক বলেন, “যেই শুনলাম ডিওয়াই পাটিলে সেমিফাইনাল, ফাইনাল হবে, খুব খুশি হয়েছিলাম। কারণ, এখানে উইকেট খুব ভাল। আমরা এই মাঠে ভাল খেলি। পাশাপাশি এখানে সমর্থকেরা মাঠ ভরান। এই সমর্থন আমাদের প্রয়োজন ছিল। তাই বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বইয়ে খেলা সরে যাওয়ার পর নিজেদের মধ্যে আমরা বলাবলি করতে শুরু করেছিলাম, চ্যাম্পিয়ন হব। মুম্বইয়ে এসে মনে হয়েছিল, ঘরে ফিরলাম।”
জুটিতে লুটি
অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে জড়িয়ে ধরেছিলেন সহ-অধিনায়ক স্মৃতি মন্ধানাকে। ফাইনাল জিতেও দু’জনে উল্লাস করেছেন। নিজের ডেপুটির সঙ্গে তাঁর রসায়নের কথা জানিয়েছেন হরমন। তিনি বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে খেলছি। দু’জনেই বার বার হতাশ হয়েছি। তাই এ বার ছবিটা বদলাতে চেয়েছিলাম। এই দলে অনেক নতুন ক্রিকেটার। তাদের সামলেছি। আমাকে স্মৃতি অনেক সাহায্য করেছে।”
সমালোচনা জীবনে ভারসাম্য আনে
অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে হরমনপ্রীতদের। তাতে মনোবল ভাঙেনি। বরং আরও শক্তিশালী হয়েছে। সমালোচনাকে জীবনের অঙ্গ হিসাবে ভাবেন হরমনপ্রীত। ভারত অধিনায়ক বলেন, “এটা তো জীবনের অঙ্গ। সমালোচনা হবেই। তাতে জীবনে ভারসাম্য আসে। যাঁরা সমালোচনা করছেন তাঁদের দোষ দিই না। আমার খুব বেশি বলারও থাকে না। সেই সমালোচনার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে সেটা মাঠে নেমে।”
কোচ অমলের ভূমিকা
ভারতীয় দলের এই জয়ে কোচ অমল মুজুমদারের ভূমিকার প্রশংসায় অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর। কোচের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক তাঁর। অমলই যে এই দলে স্থিরতা এনেছেন, তা স্বীকার করে নিয়েছেন হরমনপ্রীত। তিনি বলেন, “গত দু’বছরে স্যর অনেক কিছু করেছেন। ওঁর আগে অনেক কিছু হচ্ছিল। বার বার কোচ বদল হচ্ছিল। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু স্যর আসার পর সব কিছু বদলে গিয়েছে। উনি সকলকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আমাদের নিয়ে দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। আমরাও পারি, এই বিশ্বাস সকলের মধ্যে আনতে পেরেছেন। এই জয়ে যতটা আমাদের ভূমিকা, ততটাই স্যরের।”