ভারতের অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর। ছবি: পিটিআই।
২০০৫-এর পর ২০১৭। ১২ বছরের ব্যবধানে দু’বার বিশ্বকাপ ফাইনালে হারতে হয়েছে ভারতকে। প্রথম বার অস্ট্রেলিয়া, পরের বার ইংল্যান্ডের কাছে। আট বছর পর আবার একটা সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ কোনও ভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি নয় ভারত। ফাইনালের আগের দিন অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর সাফ জানিয়ে দিলেন, হারের ব্যথা থেকে শিক্ষা নিয়েই তাঁরা বিশ্বকাপ জিততে চান।
এ দিন হরমনপ্রীত বলেছেন, “আমরা জানি ফাইনালে হারতে ঠিক কী রকম লাগে। এ বার চাই জয়ের অনুভূতির স্বাদ নিতে। আশা করি কালকের দিনটা আমাদের কাছে বিশেষ একটা দিন হতে চলেছে। অনেক পরিশ্রম করেছি আমরা। কাল সব কিছু ঠিকঠাক করতে চাই। ওটাই আসল। আমরা মুহূর্তটা উপভোগ করতে চাই।”
হরমনপ্রীতের সংযোজন, “আমরা নিজেদের মধ্যেই একটা কথা আলোচনা করছিলাম। যত বার আমরা মাঠে নেমে খেলা উপভোগ করেছি এবং নিজেদের সেরাটা দিয়েছি, তত বারই ইতিবাচক ফলাফল হয়েছে। আমার এবং গোটা দলের কাছে এটা একটা গর্বের মুহূর্ত। যে ভাবে শেষ দুটো ম্যাচে খেলেছি, তাতে আমি নিশ্চিত গোটা দেশও আমাদের নিয়ে গর্বিত। তার মান তো রাখতেই হবে।”
ফাইনালে নামার আগে ভারত কী ভাবে অনুপ্রাণিত করছে নিজেদের? হরমনপ্রীতের জবাব, “বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে নামার চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আর কিছুতে আছে নাকি? এর থেকে বড় ম্যাচ আর হয় না। গোটা দলই চাঙ্গা। সতীর্থেরা একে অপরকে যতটা পারছে সাহায্য করছে। আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ। ম্যাচের জন্য পুরোপুরি তৈরি। অনেক দিন আগে থেকেই জানতাম যে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলতে নামব। এ বার পরের ম্যাচে ১০০ শতাংশ দেব। গত দু’বছর ধরে আমরা এই দিনটার জন্য তৈরি হয়েছি।”
হরমনপ্রীত জানিয়েছেন, ফাইনালের জন্য আলাদা করে কোনও পরিকল্পনা নেই তাঁদের। তাঁরা স্রেফ মুহূর্তটাকে উপভোগ করতে চান। ভারত অধিনায়কের কথায়, “আমার মনে হয় মুহূর্ত উপভোগ করাটা সবার আগে দরকার। ক্রিকেটারদের জীবনে এবং অধিনায়ক হিসাবে আমার কাছে এর থেকে বড় দিন হয়তো আর আসবে না। তাই উপভোগ করতে চাই সময়টা। বড় কিছু না ভেবে ছোট ছোট লক্ষ্য রেখে সেটা অর্জন করতে চাই। ছোট লক্ষ্যপূরণ হলে বড়টাও হবে।”
দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলা বেশ কঠিন এবং বিধ্বস্ত করার মতো। তবে হরমনপ্রীত জানালেন, মানসিক ভাবে ঠিক থাকাও তাঁদের প্রস্তুতিরই অঙ্গ। তাঁর কথায়, “দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেললে আবেগের উত্থান-পতন লেগেই থাকে। একই সঙ্গে আমরা এটাও মাথায় রাখছি, কালকের ম্যাচটা আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই মনোযোগ রাখা জরুরি। কী ভাবে সেটা করতে হবে তার জন্য আলাদা করে পরিশ্রমও করছি আমরা। সবচেয়ে বড় মঞ্চে সবচেয়ে বড় সুযোগ রয়েছে আমাদের কাছে।”
হরমনপ্রীত নিজেই আবেগপ্রবণ। আগের ম্যাচেই তাঁকে কাঁদতে দেখা গিয়েছিল। তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই ভারত অধিনায়কের জবাব, “আরে, আমি তো আবেগপ্রবণই। আমি প্রচুর কাঁদি। হেরে নয়, জিতেও। এই মুহূর্তগুলো খুব কাছে। আমি দলকেও বলি, কান্না পেলে কেঁদে নাও। স্বপ্ন বার বার সত্যি হয় না।”
ভারত বিশ্বকাপ জিতলে মহিলাদের ক্রিকেট পরের প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি যে আরও বদলে যাবে এটা জানেন হরমনপ্রীত। তাই বলেছেন, “২০১৭-তে হেরে গিয়েও দেখেছিলাম প্রচুর মেয়ে ক্রিকেট খেলাকে বেছে নিচ্ছে। তরুণদের বলব, যা করছ মন দিয়ে করো। বিশ্ব বদলে গিয়েছে। বাবা-মায়েরা এখন অনেক বেশি সমর্থন করেন। সুযোগও তৈরি হচ্ছে। আশা করি মেয়েরা ক্রিকেট খেললে আরও গর্বের মুহূর্ত তৈরি হবে।”