ঋষভ পন্থ। —ফাইল চিত্র।
চলতি বছরের শুরু থেকে ফর্মে ছিলেন না ঋষভ পন্থ। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ে রান পাননি তিনি। পাঁচটা টেস্টে মাত্র ২৫৫ রান করেছিলেন। খারাপ শট খেলে আউট হওয়ায় তাঁর সমালোচনা হয়েছিল। পরে ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে থাকলেও প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি। একটা ম্যাচও খেলেননি তিনি। খারাপ সময় কাটাতে নিজেই নিজেকে শাস্তি দিয়েছিলেন পন্থ। ভারতের প্রাক্তন স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং কোচ সোহম দেসাই সে কথা জানিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমে সোহম জানিয়েছেন, পন্থ ঠিক করে নিয়েছিলেন যে তাঁর ফিটনেসে উন্নতি করতে হবে। তার জন্য আরও পরিশ্রম করতে হবে। সেই কারণে, বাইরের জগত থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটার। সোহম বলেন, “ও নিজের হোয়াট্সঅ্যাপ ফোন থেকে মুছে দিয়েছিল। এমনকি, ফোনও বন্ধ করে দিয়েছিল। অনুশীলনের সময় বাড়িয়ে দিয়েছিল। যখনই সময় পেত, আমাকে নিয়ে জিমে চলে যেত। কঠোর পরিশ্রম করত। ক্লান্ত হয়ে গেলেও পরিশ্রম থামাত না।”
পন্থ ঠিক করে নিয়েছিলেন যে আগামী এক বছর যেন কোনও ভাবেই ফিটনেসের কারণে তিনি বাদ না পড়েন। সোহম বলেন, “ও এসে আমাকে বলেছিল, আপাতত আগামী এক বছরের কথা ভাবছি। আমার ফিটনেস আরও ভাল করতে হবে। দেখে মনে হচ্ছিল, নিজেই নিজেকে শাস্তি দিচ্ছে। ক্রিকেটের বাইরে কিছু ভাবত না। ওর সেই পরিশ্রম কাজে লেগেছে। ইংল্যান্ডে ওর খেলা দেখে বোঝা যাচ্ছে, কতটা উপভোগ করছে। ওর জোড়া শতরান তারই প্রমাণ দিচ্ছে।”
‘আর কি কোনও দিন খেলতে পারব?’ প্রশ্ন করেছিলেন পন্থ
২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন পন্থ। তাঁকে সুস্থ করে তুলেছিলেন চিকিৎসক দীনশ পারদিওয়াল। তাঁর মতে, পন্থের আবার ক্রিকেটে ফেরা কোনও আশ্চর্যের থেকে কম নয়। একটা সাক্ষাৎকারে পারদিওয়াল বলেন, “ঋযভ প্রথম প্রশ্ন করেছিল, ‘আর কি কোনও দিন খেলতে পারব?’ ওর মায়ের প্রশ্ন ছিল, ‘ও কি আর কোনও দিন হাঁটতে পারবে?’ সত্যি বলতে ওই রকম দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা কঠিন। ওর হাঁটুর অবস্থা একেবারে খারাপ ছিল। দু’বার অস্ত্রোপচার করে তা জুড়তে হয়। তবে ও যা মনের জোর দেখিয়েছে তা অসাধারণ। আমার মনে হয়, ওর জেদ আর মনের জোর ওকে আবার মাঠে ফিরিয়েছে।”
পন্থকে শুয়ে পড়তে দেখে ভয় পেয়েছিলেন রোহিত
চোট সারিয়ে ফিরে গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছিলেন পন্থ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ফিল্ডিং করার সময় এক বার হাঁটু ধরে শুয়ে পড়েন তিনি। তা দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তৎকালীন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিনি একটা সাক্ষাৎকারে বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকার ৩০ বলে ৩০ রান দরকার ছিল। তখন দেখলাম ঋষভ হাঁটু ধরে শুয়ে পড়েছে। ওর হাঁটুতে টেপ লাগানো ছিল। ফিজিয়ো এসে ওকে পরীক্ষা করছিল। আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে বুঝলাম, ও ইচ্ছা করে করেছে। ব্যাটারদের মনঃসংযোগ ভাঙতে চেয়েছিল। ওর সেই পরিকল্পনা কাজে লেগেছিল।”
গত আইপিএলের আগে নিলামে ২৭ কোটি টাকায় পন্থকে কিনেছিল লখনউ সুপার জায়ান্টস। আইপিএলের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার পন্থ অধিনায়ক হিসাবে লখনউকে প্লে-অফে তুলতে পারেননি। ব্যাট হাতে তাঁর নিজের মরসুমও খুব খারাপ গিয়েছিল। তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লাল বলের ক্রিকেটে ফিরে স্বমহিমায় পন্থ। হেডিংলেতে দুই ইনিংসেই শতরান করেছেন। ভারত প্রথম টেস্ট হারলেও পন্থের ফর্ম স্বস্তি দিচ্ছে দলকে।