বিরাট কোহলি। —ফাইল চিত্র।
ক্রিকেটার হিসাবে ভারতের হয়ে সাদা বলের ক্রিকেটে সব আইসিসি ট্রফি জিতলেও অধিনায়ক বিরাট কোহলির ট্রফি ক্যাবিনেট প্রায় ফাঁকা। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ছাড়া অধিনায়ক হিসাবে কিছুই জিততে পারেননি তিনি। আইপিএলেও একই হাল। ২০২১ সালে একই বছরে ভারতীয় দল ও আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়কত্ব ছেড়েছিলেন কোহলি। তিন বছর পর তার নেপথ্য কারণ জানিয়েছেন তিনি।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একটি অনুষ্ঠানে মুখ খুলেছেন কোহলি। তিনি জানিয়েছেন, বছরের পর বছর অধিনায়কত্বের চাপ সামলাতে সামলাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। প্রত্যাশার চাপ তাঁর মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছিল। সেই কারণেই দায়িত্ব ছেড়েছিলেন তিনি। কোহলি বলেন, “২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমি ক্রমাগত পরামর্শ পেয়েছি আইপিএলে অন্য দলে যাওয়ার। একটা সময় পরে বিষয়টা কঠিন হয়ে পড়েছিল। আমি ৭-৮ বছর ধরে ভারতের অধিনায়কত্ব করেছি। ৯ বছর বেঙ্গালুরুর। আমি ব্যাট হাতে নামলেই সকলে ভাবত ম্যাচ জিতিয়ে ফিরব। লাগাতার এই চাপ সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই দুটো দায়িত্বই ছেড়েছি।”
অধিনায়কত্বের চাপ তাঁর ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা কমিয়ে দিয়েছিল বলে স্বীকার করে নিয়েছেন কোহলি। সেই ভালবাসা আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন তিনি। তাতে সফলও হয়েছেন। কোহলি বলেন, “ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা থেকে আমার খেলা শুরু। আমি মাঠে নামতে ভালবাসি। ব্যাট করতে ভালবাসি। নিজের খেলা নিয়ে ভাবতে ভালবাসি। কিন্তু অধিনায়ক হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা আমার উপর ক্যামেরার নজর থাকত। খেলার প্রতি ভালবাসা কমছিল। মনে হচ্ছিল, একটা কাজ করছি। আমি আনন্দে থাকতে চেয়েছিলাম। ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম। এমন একটা জায়গায় থাকতে চেয়েছিলাম যেখানে নিজের ক্রিকেট ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে না হয়।”
কঠিন সময়ে বেঙ্গালুরু ছাড়ার কথাও মাথায় এসেছিল কোহলির। কিন্তু সেই ভাবনা শেষ পর্যন্ত ঝেড়ে ফেলেছিলেন তিনি। কোহলি বলেন, “মাঝে মাঝে আমার মনে হত, আমি কি এই দলকে নিজের সবটা দিতে পারছি। এই দলের সমর্থকেরা সবসময় আমাকে ভালবেসেছে। আমার হয়ে গলা ফাটিয়েছে। কিন্তু আমি কী করেছি? তবে এত বছর পরে বুঝেছি, এই দলটা আমার ঘর। এত বছরে এই সম্মান আমি অর্জন করেছি। যত দিন আইপিএল খেলব, এই দলেই খেলব। আমি এখন এ ভাবেই ভাবি।”
অধিনায়ক হিসাবে আইসিসি ট্রফি জেতার সবচেয়ে ভাল সুযোগ কোহলি পেয়েছিলেন ২০১৯ সালে। ইংল্যান্ডে এক দিনের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ন’টির মধ্যে সাতটি ম্যাচ জিতেছিল ভারত। একটি খেলা বৃষ্টিতে ভেস্তে যায়। পয়েন্ট তালিকায় সকলের উপরে শেষ করেছিল ভারত। সমর্থকেরা আশা করেছিলেন, বিশ্বকাপ ভারতেই আসছে। কিন্তু সেমিফাইনালে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে ১৮ রানে হারেন কোহলিরা। সেই হারের পর দিন তাঁর কী মানসিক অবস্থা ছিল তা-ও জানিয়েছেন কোহলি।
পরের দিন দেশে ফেরার বিমান ধরেছিলেন কোহলিরা। কিন্তু কিছুই ভাল লাগছিল না কোহলির। কিছু করতে ইচ্ছা করছিল না। তিনি বলেন, “২০১৯ সেমিফাইনালে হারের ধাক্কা সামলানো মুশকিল ছিল। বুঝতে পারছিলাম না কী করব। পরের দিন সকালে উঠে কিছুই ভাল লাগছিল না। মাথা কাজ করছিল না। মনে হচ্ছিল, কোনও রকমে দেশে ফিরে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যাই। বাইরে বেরোতেই ইচ্ছা করছিল না।”
কোহলির নেতৃত্ব ছাড়া নিয়ে কম নাটক হয়নি। ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে ভারত বিদায় নেওয়ার পর টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব ছাড়েন কোহলি। তৎকালীন বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, তাঁরা কোহলিকে অনুরোধ করেছিলেন অধিনায়ক থেকে যাওয়ার জন্য। সেই অনুরোধ কোহলি শোনেননি। সাদা বলের ক্রিকেটে দু’জন অধিনায়ক রাখা সম্ভব নয়। তাই এক দিনের দলের অধিনায়কের পদ থেকে কোহলিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে কোহলি জানান, তাঁকে অধিনায়ক থেকে যাওয়ার কোনও অনুরোধ করা হয়নি। সাদা বলের ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব ছাড়ার কয়েক মাসের মধ্যে টেস্ট দলেরও অধিনায়কত্ব ছাড়েন কোহলি। তিন ফরম্যাটেই ভারতের নতুন অধিনায়ক হন রোহিত শর্মা।