গৌতম গম্ভীর। —ফাইল চিত্র।
অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ভারতের লজ্জার হারের পর কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। বিদেশ সফরে স্ত্রী ও বান্ধবীদের নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি করেছে তারা। এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রয়েছেন দলের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর। কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার ব্যাখ্যা আরও এক বার দিলেন তিনি। গম্ভীর স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে শুভমন গিল, যশস্বী জয়সওয়ালদের মতো তরুণ প্রজন্মকেও কথাটা মাথায় রাখতে হবে।
লর্ডসে ভারত-ইংল্যান্ড তৃতীয় টেস্টের মাঝে ধারাভাষ্যকার চেতেশ্বর পুজারাকে দেওয়া একটা সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে মুখ খোলেন গম্ভীর। বোর্ড তাদের নির্দেশিকায় জানিয়েছিল, ৪৫ দিনের কম সফরে পরিবার নিয়ে যেতে পারবেন না ক্রিকেটারেরা। যদি সফর ৪৫ দিনের বেশি হয় তা হলে দু’সপ্তাহের জন্য পরিবার ক্রিকেটারদের সঙ্গে থাকতে পারবে। তার বেশি নয়। এই নির্দেশিকার পরেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির স্ত্রীকে দুবাইয়ে দেখা গিয়েছিল। বেশ কয়েকটা ম্যাচে ছিলেন তাঁরা। সেই বিষয়টাও হয়তো ভাল ভাবে নেননি গম্ভীর। তাঁর এ দিনের কথা থেকে তা পরিষ্কার।
পুজারার প্রশ্নের জবাবে গম্ভীর বলেন, “পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানি সকলেই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চায়। কিন্তু একটা কথা সকলকে বুঝতে হবে। এখানে আমরা কী জন্য এসেছি? দেশের হয়ে জিততে এসেছি। আমাদের কাঁধে বড় দায়িত্ব রয়েছে। সেটার দিকেই মন দিতে হবে। এই সুযোগ সকলে পায় না। তাই আমার মতে, বিদেশ সফরে গেলে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর চেয়ে খেলাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” রোহিত, কোহলি টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর এখন শুভমন, যশস্বী, আকাশদীপদের কাঁধে বড় দায়িত্ব। গম্ভীর বুঝিয়ে দিলেন, কোচ হিসাবে তাঁদের কাছে তাঁর কী চাহিদা।
এজবাস্টনে দ্বিতীয় টেস্ট জিতলেও ভারতের ডিক্লেয়ার করার সময় নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। ইংল্যান্ডের সামনে চতুর্থ ইনিংসে ৬০৮ রানের লক্ষ্য রাখে ভারত। অনেকের মতে, পঞ্চম দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকার পরেও ডিক্লেয়ার করতে দেরি করেছে ভারত। আরও আগে ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল। গম্ভীরের অবশ্য নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, “আমি জানি, জিততে না পারলে আমার সমালোচনা হত। আমি তার জন্য তৈরি ছিলাম। সেটা হলেও আমি বলতাম যে ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি। আমরা একটা পরিকল্পনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” কী পরিকল্পনা তাঁরা করেছিলেন তা-ও জানিয়েছেন গম্ভীর। ভারতের কোচ বলেন, “ইংল্যান্ড চতুর্থ ইনিংসে ১০০ ওভারে ৩৫০-৩৬০ রান তাড়া করতে অভ্যস্ত। আমরা চেয়েছিলাম ওদের খেলা থেকে বার করে দিতে। এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে যেখান থেকে ওরা আর জিততে পারবে না। ওরা ম্যাচ বাঁচানোর জন্য খেলবে। আমি দেখতে চেয়েছিলাম কী ভাবে ওরা ম্যাচ বাঁচায়। আমাদের সেই সিদ্ধান্ত কাজে লেগেছে।”
একটা টেস্ট শেষ হওয়ার পর ক্রিকেটারেরা পরের টেস্টের প্রস্তুতি শুরু করেন। কিন্তু তার মধ্যে কিছুটা সময় তাঁরা বিশ্রাম নেন। মন ফুরফুরে করেন। সেই সময়ে খেলার কথা ভাবেন না। দীর্ঘ সিরিজ়ে গেলে ক্রিকেটারদের এই দক্ষতা থাকতে হয়। কিন্তু গম্ভীর তা করতে পারেন না বলেই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি পারি না। আগের টেস্ট জেতার পর ঘরে ফিরেই ভাবছিলাম পরের টেস্টে কাদের খেলাব। আসলে যখন একটা সফরে থাকি তখন শুধুই খেলার কথা ভাবি। সেখান থেকে মন সরাতে পারি না।”
কোচ গম্ভীর অবসর সময় কী ভাবে কাটান? এখন তাঁর অবসর সময়ের অনেকটাই কাটে চুলে কলপ করার পিছনে। গম্ভীর বলেন, “যখন খেলতাম তখন চুলে এত কলপ করতে হত না। এখন অনেক বেশি করতে হয়। তাতে অনেকটা সময় লাগে। পাশাপাশি দুই মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাই। কয়েক বছর পর ওরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তাই এখন যতটা সময় পাই ওদের সঙ্গে থাকি। এগুলোই আমার অবসর সময়।”