India vs England 2025

ইংল্যান্ড ৩৮৭, ভারতও ৩৮৭! ১০ বছর পর টাই হল প্রথম ইনিংস, ক্রিকেটের ইতিহাসে নবম ‘আশ্চর্যের’ সাক্ষী লর্ডস

লর্ডসে প্রথম ইনিংসের শেষে আলাদা করা গেল না দুই দলকে। ইংল্যান্ডের তোলা ৩৮৭ রানের জবাবে ভারতের প্রথম ইনিংসও শেষ হল ৩৮৭ রানে। সুযোগ থাকলেও লিড নিতে পারল না ভারত।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫ ২৩:০২
Share:

শতরানের পর রাহুলের উচ্ছ্বাস। ছবি: রয়টার্স।

লর্ডসে প্রথম ইনিংসের শেষে আলাদা করা গেল না দুই দলকে। ইংল্যান্ডের তোলা ৩৮৭ রানের জবাবে ভারতের প্রথম ইনিংসও শেষ হল ৩৮৭ রানে। সুযোগ থাকলেও লিড নিতে পারল না ভারত। ১১ রানে শেষ চারটি পড়ল তাদের। কেএল রাহুলের শতরান এবং ঋষভ পন্থের জেদী ৭৪ রানের ইনিংস তৃতীয় দিনের পাওনা। সঙ্গে রয়েছে রবীন্দ্র জাডেজার ৭২ রান। ইংল্যান্ডের বোলিংয়ের সামনে ধ্রুপদী ক্রিকেটেই ভরসা রাখল ভারত। অর্থাৎ তাড়াহুড়ো না করে ধীরস্থির ক্রিকেট খেলেছেন রাহুলেরা। দিনের শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড ২/০। এগিয়ে ২ রানে।

Advertisement

এর আগে ২১৬৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়েছে। তার মধ্যে মাত্র আটটি টেস্টে দুই দলের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছে একই রানে। লর্ডসে নবম বার সেই ঘটনা ঘটল। ১৯১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচে প্রথম এই ঘটনা ঘটেছিল। দু’দলই প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রান তুলেছিল। শেষ হয়েছিল ২০১৫ সালে লিডসে, ইংল্যান্ড বনাম নিউ জ়িল্যান্ড টেস্টে। সে বার দু’দল তুলেছিল ৩৫০ রানে।

লর্ডসে ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে টান টান লড়াই চলছে। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ছে না সেই কারণেই হয়তো তৃতীয় দিনের শেষ ১০ মিনিটে ম্যাচের উত্তাপ আরও বাড়ল। ভারতের ইনিংস শেষ হওয়ার পর বিরতি ছিল ১০ মিনিটের। তার পরেও যা সময় ছিল তাতে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের দু’টি ওভার করা যেত। তবে জসপ্রীত বুমরাহদের খেলতে গিয়ে যাতে উইকেট না পড়ে, তার জন্য চালাকির আশ্রয় নেয় ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের ওপেনারেরা ইচ্ছা করে দেরি করে নামেন, যাতে একটি ওভারের বেশি না খেলতে হয়।

Advertisement

প্রথমে মাঠে নামতে, তার পর স্টান্স নিতেও দেরি করেন দুই ওপেনার। আম্পায়ারেরাও তাঁদের সতর্ক করেননি। প্রথম ওভার শুরু হওয়ার পর বার বার বুমরাহকে থামিয়ে দিচ্ছিলেন জাক ক্রলি। অভিযোগ তুলছিলেন যে সাইটস্ক্রিনের সামনে নড়াচড়া হচ্ছে। ভারত অধিনায়ক শুভমনকে দেখা যায় কঠোর ভাষায় কিছু বলতে। রেগে যান সিরাজও। বুমরাহের পঞ্চম বল ক্রলির গ্লাভসে লাগে। এমন কিছু চোট লাগেনি। তবু ফিজিয়োকে মাঠে ডাকেন তিনি। এতে আরও রেগে যান ভারতের ক্রিকেটারেরা। শুভমন-সহ বাকি ক্রিকেটারেরা দুই ইংরেজ ওপেনারের সামনে গিয়ে হাততালি দিতে থাকেন। ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয় ইংরেজ ওপেনারদের। এই চালাকির জন্য সমালোচনাও হচ্ছে ইংল্যান্ডের।

লর্ডসে তৃতীয় দিনের খেলার স্কোরকার্ড। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

লর্ডসের এই পিচের চরিত্র কেমন তা গত দু’দিনে ভালই বোঝা গিয়েছে। এই উইকেটে দ্রুত রান উঠবে না। কিন্তু ক্রিজ় কামড়ে পড়ে থাকলে রান আসবে। ফলে ঋষভ পন্থ এবং কেএল রাহুলের কাছে প্রথম সেশনটা ছিল শক্ত পরীক্ষা। কারণ দিনের শুরুতে বোলিং দল চায় প্রথম সেশনেই যাবতীয় ধাক্কাটা দিতে। তবে পন্থ এবং রাহুল অন্য রকমের মানসিকতা নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন। কোনও ভাবেই তাড়াহুড়োর রাস্তায় হাঁটেননি। ঝুঁকিহীন শট খেলে এবং খুচরো রান নিয়ে সময় কাটিয়ে দিচ্ছিলেন। তবু পন্থকে দু’-একটি আগ্রাসী শট খেলতে দেখা যাচ্ছিল। রাহুল অনুসরণ করে যাচ্ছিলেন টেস্টের ধ্রুপদী ঘরানাই, যা ধৈর্য ছাড়া সম্ভব নয়।

জফ্রা আর্চার, ব্রাইডন কার্স বা ক্রিস ওকস, কেউই প্রথম সেশনে সে ভাবে সাফল্য পাননি। স্টোকসকে ছয় মেরে অর্ধশতরান করার পর বেশ চালিয়েই খেলতে থাকেন পন্থ। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির একদম সামনে এসে তিনি যে এ ভাবে হারাকিরি করবেন তা কে জানত! রাহুল তখন ব্যাট করছিলেন ৯৮ রানে। মধ্যাহ্নভোজের আগে যাতে তিনি শতরান করতে পারেন, তার জন্য তাড়াহুড়ো করে রান নিয়ে রাহুলকে স্ট্রাইক দিতে গিয়েছিলেন পন্থ। পয়েন্টে থাকা স্টোকসের সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভেঙে গেল। পন্থ রান আউট তো হলেনই, পাশাপাশি আম্পায়ারেরাও মধ্যাহ্নভোজের বিরতি ডেকে দেওয়ায় রাহুলের শতরানও আটকে গেল। লর্ডসের ব্যালকনিতে তখন হাহুতাশ।

রাহুল শতরান করলেন ঠিকই। কিন্তু যে মনঃসংযোগ তিনি গোটা ইনিংসজুড়ে দেখিয়ে এসেছিলেন, তাতে ব্যাঘাত ঘটল ঠিক শতরানের পরেই। শোয়েব বশিরের বল এগিয়ে এসে সামনের পায়ে খেলতে গেলেন। এত ক্ষণ যে বল ব্যাটের মাঝে লাগছিল, তা হঠাৎই কানা ছুঁয়ে জমা পড়ল প্রথম স্লিপে থাকা হ্যারি ব্রুকের হাতে। ১০০ রানে তিনি ফেরার পর গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায়।

অন্য সময় হলে এই জায়গা থেকে ব্যাটিংয়ে ধস নামতে পারত। কিন্তু গম্ভীরের অতিরিক্ত ব্যাটার নেওয়ার ভাবনা যে কাজে দিয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া গেল এই টেস্টেও। রবীন্দ্র জাডেজা, নীতীশ রেড্ডি এবং ওয়াশিংটন সুন্দর, তিন জনই দায়িত্বশীল ইনিংস খেললেন। নীতীশ-জাডেজার জুটি চলার সময় ভুল বোঝাবুঝিতে দু’বার রান আউট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলেও তা হয়নি। এর পর দু’জনেই ঝুঁকির রাস্তায় যাননি। রান পেতে মরিয়া নীতীশ মন দিয়েছিলেন রক্ষণে। ৩০ রান করতে তিনি নিয়েছেন ৯১ বল।

জাডেজা এ দিন আবারও বুঝিয়েছেন, ভারতের এই ব্যাটিং অর্ডারে তিনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। টেস্টে টানা তিনটি ইনিংসে অর্ধশতরান করেছেন বলে নয়, যে সময়ে ইনিংসগুলি এসেছে সেটাই আসল। জাডেজা রুখে না দাঁড়ালে ভারত লর্ডসে লড়াই করার মতো জায়গায় থাকত কি না সন্দেহ। ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের মুখে জেদ, অনমনীয় মানসিকতা ভারতকে লড়াই করার মতো জায়গায় রাখল। আরও একটু ধৈর্য দেখালে শতরানও করে ফেলতে পারতেন। তবে এই টেস্টে তাঁর ৭২ রান শতরানেরই সমতুল।

জাডেজা ফেরার সময় ভারত পিছিয়ে ছিল ১১ রানে। হাতে তিনটি উইকেটও ছিল। তবে শেষ বেলায় নাটকেরও কমতি ছিল না। যে ওভারে ওকস আউট করেছিলেন জাডেজাকে, সেই ওভারেই দু’বার আউট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যান আকাশদীপ। দু’বারই ভিতরের দিকে ঢুকে আসা বল আকাশদীপের পায়ে লেগেছিল। দু’বারই আম্পায়ার শরিফুদ্দৌলা সৈকত আঙুল তুলে দিয়েছিলেন। এবং দু’বারই ডিআরএস নিয়ে বেঁচে যান আকাশদীপ। তার পরের ওভারেই জফ্রা আর্চারকে তুলে ছয় মারেন। তবে, তাঁর ইনিংস লম্বা হল না হ্যারি ব্রুকের অনবদ্য ক্যাচে। ব্রাইডন কার্সের গুড লেংথ বল গালি অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠাতে গিয়েছিলেন আকাশদীপ। দ্বিতীয় স্লিপে থাকা ব্রুকের ডান দিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে নেওয়া ক্যাচ মুগ্ধ করে দেওয়ার মতো।

শেষ দিকে ভারতের উইকেট পতনের রোগ দেখা গেল এই ম্যাচেও। জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজেরা নেটে যতই অনুশীলন করুন, ম্যাচে তাঁদের ক্ষমতাই নেই রান করার। লোপ্পা বলেও আউট হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। ইংল্যান্ডের ব্রাইডন কার্স যেখানে ন’নম্বরে নেমে অর্ধশতরান করেছেন, সেখানে ভারতের ইনিংসের শেষ চারটি উইকেট পড়ল মাত্র ১১ রানে। ভারতের লেজের এই দুর্বলতা এখনও চিন্তায় রাখছেন গম্ভীরকে।


আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement