Shaheen Afridi

T20 World Cup 2021: ভারত-বধের কাণ্ডারি আফ্রিদিই এখন পাকিস্তান ক্রিকেটের ‘শাহেনশা’

ওয়াসিম আক্রম থেকে সোহেল তনবীর, মহম্মদ আমির থেকে ওয়াহাব রিয়াজ বা সাত ফুট উঁচু মহম্মদ ইরফান, পাকিস্তানে কোনওদিনই বাঁ হাতি বোলারদের ঘাটতি নেই।

Advertisement

অভীক রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২১ ১৭:১৪
Share:

ভারতের তিনটি উইকেট নেন শাহিন। ছবি টুইটার

ওয়াসিম আক্রম থেকে সোহেল তনবীর, মহম্মদ আমির থেকে ওয়াহাব রিয়াজ বা সাত ফুট উঁচু মহম্মদ ইরফান, পাকিস্তানে কোনও দিনই বাঁ হাতি বোলারদের ঘাটতি নেই। প্রতি বছরই কোনও না কোনও প্রতিভাবান বোলার উঠে এসে চমকে দেন সবাইকে। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন শাহিন শাহ আফ্রিদি। রবিবার ভারতের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ যাঁকে নায়কের আসনে প্রতিষ্ঠিত করে দিল। এর আগেও অনেক ভাল কীর্তি রয়েছে শাহিনের। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে পারফরম্যান্সের থেকে কিছুই বড় নয়।

Advertisement

গোটা পাকিস্তানেই অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘টেপ-বল’ ক্রিকেট। টেনিস বলের উপরে ইলেকট্রিকের টেপ জড়িয়ে এই বল বানানো হয়। পাকিস্তানের দুর্গম এলাকার বেশির ভাগ কচিকাঁচাদের কাছেই এই ধরনের ক্রিকেট জনপ্রিয়। কারণ স্টেডিয়াম বা সবুজ ঘাসের মাঠ তাদের কাছে স্বপ্নের সমান। ফলে এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় বল টিকিয়ে রাখার জন্য এই পদ্ধতিই ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় বড় করে টেপ-বল ক্রিকেটের প্রতিযোগিতাও অন্যতম আকর্ষণ।

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তের এলাকা খাইবার জেলার ছেলে শাহিন। ছোট থেকেই তার কাছে টেপ-বলের ক্রিকেটই ছিল একমাত্র ভরসা। স্থানীয় ছেলেদের সঙ্গে মাঠে-ময়দানে সারাক্ষণ ক্রিকেট খেলাই ছিল নেশা। টেপ-বলের ক্রিকেট খেলতে খেলতেই বাঁ হাত শক্তিশালী হয়ে যায়। ছোট থেকেই বলের গতি ছিল মারাত্মক। তবে টেপ-বল ক্রিকেট খেলে বেশি দূর যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। তাই শাহিনকে আসল ক্রিকেট বলের সঙ্গে পরিচয় করান তাঁর দাদা রিয়াজ। সাত ভাইয়ের সব থেকে ছোট শাহিন, সব থেকে বড় রিয়াজ। ২০০৪ সালে পাকিস্তানের হয়ে একটি টেস্টও খেলেছেন তিনি।

Advertisement

স্থানীয় একটি অনূর্ধ্ব-১৬ প্রতিযোগিতা দেখতে গিয়ে শাহিনকে চোখে পড়ে যায় সে দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটার মুস্তাক আমেদের। তিনি শাহিনের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন। এর মধ্যেই পাকিস্তানের ফাতা এলাকার একটি প্রতিভা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় শাহিন সব থেকে বেশি উইকেট পান। জাতীয় নির্বাচকদেরও নজরে পড়ে যাওয়ায় তাঁকে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৬ দলে নেওয়া হয় এবং তারপরেই অস্ট্রেলিয়া সফরের দলে জায়গা পান। সেখানে ভাল না খেললেও, পরে কুয়েদ-ই-আজম ট্রফিতে দুর্দান্ত খেলেন তিনি। প্রথম ম্যাচেই একটি ইনিংসে আট উইকেট নিয়েছিলেন। তার আগে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে নজর কাড়েন।

২০১৭-র ডিসেম্বরে পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পান। ১২টি উইকেট নিয়ে প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হন। এরপর পাকিস্তানের সুপার লিগেও তাঁর দাপট দেখানো শুরু হয়। খেলেছেন ইউরোপীয় সুপার ক্রিকেট লিগেও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আসার আগেই মিডলসেক্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

কেন বাকিদের থেকে শাহিন আলাদা? মুস্তাক বলেছেন, শাহিনের আত্মবিশ্বাস, উপস্থিত বুদ্ধি এবং ফিল্ডিং সাজানোর ক্ষমতা বাকিদের থেকে অনেক আলাদা। পাশাপাশি দুর্দান্ত ভাবে ব্যবহার করতে পারেন কবজিকে। বল ছাড়ার আগের মুহূর্তে কবজির হালকা মোচড়ই ধাঁধিয়ে দেয় ব্যাটারদের। রবিবার যেমন বোকা বনেছেন রোহিত শর্মা এবং কেএল রাহুল। দু’জনেই শাহিনের ভেতরে ঢুকে আসা বল বুঝতে না পেরে ফিরে গিয়েছেন। শাহিনের ছোটবেলার বোলিং কোচ আকবর ইউসুফজাই জানিয়েছেন, এটা তাঁর ছাত্রের খুব স্বাভাবিক ক্ষমতা। তাঁর শারীরিক গঠনটাই এমন যে এ ধরনের বল করতে কোনও অসুবিধাই হয় না।

শুধু পদবীর সূত্রে নয়, পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার শাহিদ আফ্রিদির সঙ্গে শাহিনের একটি অন্য সম্পর্কও রয়েছে। আর কিছুদিন বাদেই শাহিদের বড় মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হতে চলেছে শাহিনের। ইতিমধ্যেই বাগদান সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। বিয়ের দিনক্ষণ ঘোষণাই শুধু বাকি। শুধু তাই নয়, শাহিদের মতোই ১০ নম্বর জার্সি পরেন শাহিন। উইকেট নেওয়ার পর মুষ্টিবদ্ধ দু’হাত তুলে উচ্ছ্বাসের ভঙ্গিও দু’জনের একইরকম।

পুরো নাম শাহিন শাহ আফ্রিদি হলেও, বলিউডি সিনেমার ভক্ত পাকিস্তানিরা তাঁকে ‘শাহেনশা’ বলে ডাকতেই পছন্দ করেন। রবিবারের পর ভারত-বধের নায়ক এই আফ্রিদিই এখন পাকিস্তান ক্রিকেটের শাহেনশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন