Mohun Bagan

প্রথমার্ধে নিষ্প্রভ, দ্বিতীয়ার্ধে চেনা ছন্দে মোহনবাগান, পঞ্জাবকে হারিয়ে নিশ্চিত আইএসএলের প্লে-অফ

প্রথমার্ধে নজর কাড়তে ব্যর্থ। তবে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধে পাওয়া গেল অন্য মোহনবাগানকে। জেমি ম্যাকলারেনের জোড়া গোল এবং লিস্টন কোলাসোর গোলে পঞ্জাবকে হারিয়ে লিগ-শিল্ডের আরও কাছে সবুজ-মেরুন।

Advertisement

অভীক রায়

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:২৫
Share:

জেমি ম্যাকলারেনের উচ্ছ্বাস। ছবি: সমাজমাধ্যম।

মোহনবাগান ৩ (ম্যাকলারেন-২, লিস্টন)
পঞ্জাব ০

Advertisement

বুধবার যুবভারতী স্টেডিয়ামের প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর গ্যালারির হাজার বিশেক মোহনবাগান সমর্থক বেশ নিশ্চুপ ছিলেন। ইতিউতি আলোচনা চলছিল, দুর্বল পঞ্জাব এফসি-কে পেয়েও কেন এত সাবধানী ফুটবল খেলছে মোহনবাগান? প্রথম ১০ মিনিটে যে ঝড় উঠেছিল, তা হঠাৎই থিতিয়ে গেল কেন? দলের সেই আগ্রাসী ভাব কোথায় হারিয়ে গেল?

উত্তর পেতে অবশ্য বেশি ক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হওয়ার প্রথম ২০ মিনিটেই জবাব পেয়ে গেলেন মোহনবাগান সমর্থকেরা। প্রথমে জেমি ম্যাকলারেন, তার পরে লিস্টন কোলাসোর গোল মোহনবাগানের প্লে-অফে খেলা নিশ্চিত করে দিল। শেষ দিকে ম্যাকলারেন আরও এক বার বিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে নিজের গোলসংখ্যা বাড়িয়ে নিলেন।

Advertisement

একই সঙ্গে লিগ-শিল্ডের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেল মোহনবাগান। ২০ ম্যাচে ৪৬ পয়েন্ট হল মোহনবাগানের। অঙ্কের হিসাবে এখনও সাত পয়েন্ট বাকি। তবে জামশেদপুর বা গোয়া পয়েন্ট নষ্ট করলে আরও আগেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতে পারে সবুজ-মেরুন। গত মরসুমে ৪৮ পয়েন্ট পেয়ে লিগ-শিল্ড জিতেছিল মোহনবাগান। এ বার মহমেডান আসায় দু’টি ম্যাচ বেড়েছে। তবু ৫০ পয়েন্টেই লিগ-শিল্ড নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে। ঘরের মাঠে টানা ন’টি ম্যাচে জিতল মোহনবাগান, যা আইএসএলে সর্বোচ্চ। এই কৃতিত্ব রয়েছে চেন্নাইয়িন এফসিরও।

টম অলড্রেড এবং আপুইয়া না থাকায় হোসে মোলিনা পঞ্জাবের বিরুদ্ধে কী ভাবে দল সাজান সে দিকে আগ্রহ ছিল অনেকেরই। দল ঘোষণা পরেই দেখা গেল চমক। সুস্থ হয়ে প্রথম একাদশে ফেরেন আলবের্তো রদ্রিগেস। ফলে সেন্টার ব্যাক নিয়ে ভাবতে হয়নি মোলিনাকে। দীপেন্দু বিশ্বাসকে মাঝে খেলিয়ে আপুইয়ার জায়গায় দীপক টাংরিকে খেলালেন।

খেলার শুরুতে মোহনবাগানের চেনা দাপট খুশি করেছিল বাগান সমর্থকদের। মোহনবাগান বল নিয়ে উঠলেই মনে হচ্ছিল গোল হবে। ৯ মিনিটের মাথায় গ্রেগ স্টুয়ার্টের একটি শট লাফিয়ে পঞ্জাব গোলকিপার রবি কুমার না বাঁচালে তখনই এগিয়ে যেত মোহনবাগান। কিন্তু ১৫ মিনিট কাটতে না কাটতেই আচমকা খেলার মধ্যে একটা শ্লথতা দেখা গেল। বলের নিয়ন্ত্রণ মোহনবাগানের পায়ে থাকলেও কিছুতেই বল নিয়ে উঠতে পারছিলেন না কেউ। কৃতিত্ব প্রাপ্য পঞ্জাবেরও। প্রথম দিকে তারা নড়ে গেলেও ধাতস্থ হতে সময় নিল। ধীরে ধীরে রক্ষণ জমাট করে ফেলল পঞ্জাব। আর তাতেই মোহনবাগানের কাজ আরও কঠিন হয়ে গেল।

মোহনবাগানের বেশির ভাগ আক্রমণ হয় উইং থেকে। তাই পঞ্জাব কোচের কৌশলই ছিল লিস্টন এবং মনবীর সিংহকে স্বাভাবিক খেলা খেলতে না দেওয়া। প্রথমার্ধে তিনি সেই কাজে সফল হন। এমনকি মাঝমাঠে স্টুয়ার্ট স্বাধীন ভাবে খেললেও বল বাড়াতে পারছিলেন না। তিনি বল ধরলেই ঘিরে ফেলছিলেন পঞ্জাবের ফুটবলারেরা। বোতলবন্দি ছিলেন ম্যাকলারেনও।

প্রথমার্ধে খেলার গতি কমিয়ে দেওয়া যে মোহনবাগানের কৌশল ছিল, তা বোঝা গেল দ্বিতীয়ার্ধে। প্রথম ২০ মিনিট সবুজ-মেরুনের আক্রমণের সামনে দিশা খুঁজে পেল না পঞ্জাব। ৫৬ মিনিটে ডান দিক থেকে মাপা বল বাড়িয়েছিলেন দীপেন্দু। ডান পায়ে অনায়াস দক্ষতায় সেই বল রিসিভ করলেন ম্যাকলারেন। বিপক্ষের ডিফেন্ডারের মার্কিং এড়িয়ে পরাস্ত করলেন বিপক্ষ গোলকিপারকে।

কে বলবে তার ঠিক এক মিনিট আগেই পিছিয়ে পড়তে পারত মোহনবাগান। প্রতি আক্রমণে অভি মিতেইয়ের থেকে মোহনবাগান বক্সের ঠিক মাঝে পাস পেয়েছিলেন পেত্রোস জিয়াকুমাকিস। তাঁর ডান পায়ের শট লাগে পোস্টে। গোলে থাকলে কিছুই করার থাকত না বিশাল কাইথের।

পরের আক্রমণেই গোল করেন ম্যাকলারেন। সেখানেই থামতে চায়নি মোহনবাগান। ৬২ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করেন লিস্টন। বাঁ দিক থেকে বক্সে ক্রস ভাসিয়েছিলেন তিনি। স্টুয়ার্টের শরীরের হালকা স্পর্শ লেগে বল গোলে ঢোকে। ফলে গোলটি স্টুয়ার্ট না লিস্টনের তা নিয়ে জল্পনা ছিল। আইএসএলের সরকারি ওয়েবসাইটে লিস্টনের নামেই গোলটি দেওয়া হয়েছে।

দু’টি গোল খেয়ে ম্যাচ থেকে কার্যত হারিয়েই যায় পঞ্জাব। মাঝেমধ্যে দু’-একটি আক্রমণ তুলে আনলেও মোহনবাগানের পক্ষে তা প্রতিরোধ করা কঠিন ছিল না। যে রবি কুমার প্রথমার্ধে পঞ্জাবকে নিশ্চিত পতনের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন, তিনিই শেষ বেলায় ভুল করে বসলেন। মোহনবাগানের দুই খেলোয়াড় কাছে থাকা সত্ত্বেও তিনি ছ’গজ দূরে থাকা সতীর্থকে পাস দিতে গেলেন। সেই সতীর্থ ব্যাক পাস করতে যাওয়ার পথেই বল কেড়ে নিলেন জেসন কামিংস। তাঁর পাস থেকে নিজের দ্বিতীয় এবং দলের তৃতীয় গোল করে পঞ্জাবের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেন ম্যাকলারেন।

বুধবারের যুবভারতী আবার চেঁচাল এক বঙ্গসন্তানের নামে। তিনি শুভাশিস বসু নন, দীপেন্দু। দলের সবাই ফিট থাকলে তাঁর প্রথম একাদশে জায়গাই হয় না। তবে যে দিন খেলেন সে দিন নিজেকে উজাড় করে দেন। এ দিন প্রথম গোলের পাস এল তাঁরই পা থেকে। শুধু তাই নয়, গোটা ম্যাচে এক বারও অলড্রেডের অভাব বুঝতে দিলেন না তিনি। শক্তপোক্ত চেহারা না হওয়া সত্ত্বেও সেন্টার ব্যাকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে রুখে দিলেন বিপক্ষকে। এই মরসুমের শুরুতেই বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে দীপেন্দুর পারফরম্যান্স সমালোচনার মুখে পড়েছিল। তবে মোলিনা তরুণ ফুটবলারের উপর বিশ্বাস হারাননি। যখন পেরেছেন সুযোগ দিয়েছেন। সেই আস্থার দাম প্রতি ম্যাচেই দিচ্ছেন বাংলার ফুটবলার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement