বাইশ গজে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হলেই ফ্যানেদের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। তা সে দুনিয়ার যে প্রান্তেই হোক না কেন। কখনও ভারত, কখনও বা পাকিস্তান— জেতা-হারায় কে, কোথায় দাঁড়িয়ে? দেখে নিন গত দশ বছরে দু’দেশের সেই রেকর্ড।
২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এমএস ধোনির ভারতের মুখোমুখি পাকিস্তান। সেঞ্চুরিয়নের মাটিতে সে বার পাকিস্তানের প্রথমে ব্যাট করে ৩০২ রান তোলে। জবাবে ২৪৮ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত। ১২৬ বলে ১২৮ রান করে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন শোয়েব মালিক।
এর পরের বছর ১৯ জুন এশিয়া কাপের ম্যাচে ফের দেখা হয়েছিল দু’দলের। টসে জিতে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। রান ওঠে ২৬৭। সেই রান তাড়া করতে নেমে ৮৩ রানের ঝকঝকে ইনিংসে খেলেন গৌতম গম্ভীর। ১ বল বাকি থাকতেই জয়ের রান তুলে নেয় টিম ইন্ডিয়া। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন গম্ভীর।
২০১১-র আইসিসি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। চণ্ডীগড়ে মুখোমুখি দুই পড়শি দেশ। ৩০ মার্চের সে ম্যাচে ঝলসে উঠেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। তিনি করেছিলেন ১১৫ বলে ৮৫ রানে। পাকিস্তানের সামনে টার্গেট ২৬০ রানের। এর পর জাহির খান-আশিস নেহরাদের দাপটে পাকিস্তান ২৩১ রানেই অলআউট হয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায়। ম্যাচের সেরা হন সচিন।
২০১২-র এশিয়া কাপে। এমএস ধোনি নন, এ বার দায়িত্বে বিরাট কোহালি। প্রথমে ব্যাট করে মিসবা-উল-হকের পাকিস্তান ৩২৯ রান করে। উত্তরে ১৪৮ বলে ১৮৩ রানের ইনিংস বেরিয়েছিল বিরাট কোহালির ব্যাট থেকে। ৪৭.৫ ওভারেই জয়ের রান তুলে নেন কোহালিরা। ঢাকায় সে ম্যাচের সেরা হন বিরাট।
সে বছরই ফের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাঠে নামে ভারত। ৩০ ডিসেম্বর, চেন্নাইয়ে। ১২৫ বলে ১১৩ রানের ইনিংস খেলেন ক্যাপ্টেন এমএস ধোনি। ভারতের রান দাঁড়ায় ২২৭-৬। এ বার সেমিফাইনালে হারের বদলা নেয় মিসবার দল। ১১ বল বাকি থাকতেই ৬ উইকেটে জিতে নেয় ম্যাচ। ম্যাচ হারলেও সেরার সম্মান পান ধোনি।
ভারত সফরের অঙ্গ হিসাবে ইডেন গার্ডেন্সে দ্বিতীয় ওয়ান ডে। নাসির জামশেদের অনবদ্য শতরানে ভর করে আড়াইশো রান তোলে পাকিস্তান। জবাবে ১৬৫ রানেই গুটিয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। এমএস ধোনি (৮৯ বলে ৫৪ রান) ছাড়া কেউই সে ভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। ম্যাচের সেরাও হন জামশেদ।
তৃতীয় ওয়ান ডে হয়েছিল দিল্লিতে। ফের ব্যাটিং ধসের মুখে পড়ে টিম ইন্ডিয়া। ৪৩.৪ ওভারে মাত্র ১৬৭ রানেই ভেঙে পড়ে তারা। তবে টিম ইন্ডিয়ার পেসাররা ব্যাটসম্যানদের খামতি পুষিয়ে দেন। পাকিস্তানকে ১৫৭ রানেই অলআউট করেন তাঁরা। ৫৫ বলে ৩৬ রানের জন্য ম্যাচের সেরা হন ধোনি।
২০১৩-র ১৫ জুন। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর বসেছিল বার্মিংহ্যামে। প্রথমে ব্যাট করে ১৬৫ রান করে পাকিস্তান। তবে ডাকওয়র্থ-লুইস পদ্ধতিতে ৮ উইকেটে জিতে যায় ভারত। ১৭ বল বাকি থাকতেই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ১০২ রান তুলে নেয় তারা। ১৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন ভুবনেশ্বর কুমার।
পরের বছর এশিয়া কাপে ম্যাচ। ২ মার্চে ঢাকায় দিন-রাতের খেলা। প্রথমে ব্যাট করে ২৪৫ রান তোলে ভারত। ২ বল বাকি থাকতেই ১ উইকেটে সে ম্যাচ জিতে নেয় পাকিস্তান। ১১৭ বলে ৭৫ রান করে ম্যাচের সেরা হন মহম্মদ হাফিজ।
২০১৫-র ১৫ ফেব্রুয়ারি। উপমহাদেশ নয়, এ বার অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে মুখোমুখি ভারত-পাক। আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপের গ্রুপ ম্যাচে ১২৬ বলে ১০৭ রানের ইনিংস এসেছিল বিরাট কোহালির ব্যাট থেকে। ৫০ ওভারের শেষে ভারতের রান দাঁড়ায় ৩০০। জবাবে ২২৪ রানেই মুড়িয়ে যায় পাক ব্যাটিং। ভারত জেতে ৭৬ রানে। ম্যাচের সেরা হন বিরাট কোহালি।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ ম্যাচ। ২০১৭-র ৪ জুন। এ বার বার্মিংহ্যামে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে ভারত। রোহিত শর্মার ৯১ রানের সৌজন্যে ৩১৯ রান করে টিম ইন্ডিয়া। জবাবে ভারতীয় বোলারদের দাপটে ১৬৪ রানেই অলআউট হয়ে যান পাক ব্যাটসম্যানেরা। ৩২ বলে ৫৩ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা হন যুবরাজ সিংহ।
গ্রুপ ম্যাচের পর ফাইনালে মুখোমুখি ভারত-পাক। সেখানে জ্বলে ওঠে ফখর জামানের ব্যাট। ১০৬ বলে ১১৪ রান করেন তিনি। পাক দলের রান দাঁড়ায় ৩৩৮। ওই ম্যাচে লড়াই করতে ব্যর্থ হয় ভারত। একমাত্র হার্দিক পাণ্ড্য (৪৩ বলে ৭৬ রান) বড় রান করেন। ভারতকে ১৫৮ রানে অলআউট করে চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। ম্যাচের সেরা ফখর জামান।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের পর চলতি এশিয়া কাপে দুবাইয়ে দেখা হয়েছিল দু’দলের। ১৯ সেপ্টেম্বর ছিল টুর্নামেন্টের গ্রুপ ম্যাচ। তাতে পাক দল মাত্র ১৬২ রান করে। বিরাট কোহালির বদলে রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারত ২৯ ওভারেই জয়ের রান তুলে নেয়। ম্যাচের সেরা ভুবনেশ্বর কুমার।
রবিবার এশিয়া কাপের সুপার ফোর ম্যাচে ফের পরস্পরের বিরুদ্ধে নামে ভারত-পাক। প্রথমে ব্যাট করে সরফরাজ নওয়াজের দল করে ২৩৭ রান। জবাবে জোড়া সেঞ্চুরি উপহার দেন ভারতীয় ওপেনার শিখর ধওয়ান এবং রোহিত শর্মা। ৩৯.৩ ওভারেই জয়ের রান তুলে নেয় ভারত। ম্যাচের সেরা হন শিখর ধওয়ন।