ক্যারাটের প্যাঁচে কাবু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

ঘটনার সূত্রপাত গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত একটি ছাত্রছাত্রীদের তালিকা কেন্দ্র করে।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:১৮
Share:

জাতীয় গেমস, এশিয়ান গেমস বা অলিম্পিক্সে খেলা হয় না। এমনকী, অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ান ইউনিভার্সিটিজ-এর (এআইইউ) অনুমোদনপ্রাপ্ত ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলোতেও আজ পর্যন্ত ক্যারাটে প্রতিযোগিতা হয়নি।

Advertisement

কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০১৭-১৮) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই ক্যারাটের শংসাপত্র দিয়েই ‘স্পোর্টস কোটা’য় এক ছাত্রী ভর্তি হয়েছেন স্নাতকোত্তর স্তরে। তার পরে কী ভাবে এমন ঘটল, তা জানতে চেয়ে খোদ উপাচার্যকে চিঠি লিখেছেন এক ছাত্র।

ঘটনার সূত্রপাত গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত একটি ছাত্রছাত্রীদের তালিকা কেন্দ্র করে। যে তালিকায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাদের ‘স্পোর্টস কোটা’-য় ভর্তি নেওয়া হবে তাঁদের নাম। তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছেন রাজেশ্বরী বসাক ( ফর্ম নং S 17070207431) নামে এক ছাত্রী। যিনি চলতি শিক্ষাবর্ষে স্পোর্টস কোটায় ভর্তি হয়েছেন ক্যারাটে প্রতিযোগিতার শংসাপত্র দেখিয়ে।

Advertisement

এর পরেই গত ৩০ অক্টোবর অভয়কুমার রায় নামে এক ছাত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে একটি চিঠি পাঠান। ‘স্পোর্টস কোটা’-য় স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য চলতি শিক্ষাবর্ষে তিনিও আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সুযোগ পাননি। তাঁর চিঠির বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সংগঠন আয়োজিত খো খো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন ২০১২-১৫ সাল পর্যন্ত। কিন্তু তালিকায় তাঁর নাম ওঠেনি। খো খো এআইইউ-এর তালিকায় রয়েছে। অথচ, আজ পর্যন্ত যে খেলা এআইইউ-এর অনুমোদনপ্রাপ্ত নয়, সেই ক্যারাটেতে ছাত্রী ভর্তি হয়েছে বলে ওয়েবসাইট দেখাচ্ছে। ব্যাপারটি বিবেচনা করা হোক।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া আধিকারিক আমিনুল হকের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলে দিলেন, ‘‘এই পদে এসেছি ১৮ সেপ্টেম্বর। আর ওই তালিকা প্রকাশ হয়েছে তার চার দিন আগে। সুতরাং এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’’

আমিনুলবাবুর আগে এই পদে ছিলেন ড. পেমা লামা। তাঁকে প্রশ্ন করা হলে বলছেন, ‘‘গত ৩১ অগস্ট ওই পদ ছেড়ে দিয়েছি। তার পরে কী হয়েছে বলতে পারব না।’’ অর্থাৎ, দুই ক্রীড়া আধিকারিকের দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়া এবং দায়িত্ব গ্রহণের মাঝেই এই ঘটনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত ওই তালিকায় যাঁর স্বাক্ষর রয়েছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বললেন, ‘‘স্পোর্টস কোটা-য় কোন ছাত্র বা ছাত্রীকে নেওয়া হবে, তা ঠিক করেছেন প্রাক্তন ফুটবলার কম্পটন দত্ত, স্পোর্টস কাউন্সেল মাধবমিলন ঘোষ এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য সুবীরেশ ভট্টাচার্য। ওঁদের বানানো তালিকাই অনুমোদন পেয়েছে।’’

সুবীরেশবাবুকে এ দিন ফোন করা হলে তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। মাধবমিলন ঘোষ আবার ফোন ধরেই পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন, ‘‘এআইইউ-এর তালিকায় ক্যারাটে নেই বলে তা রাখা যাবে না আপনাকে কে বলল? এখন ব্যস্ত আছি। পরে যোগাযোগ করুন।’’ আর কম্পটন দত্ত প্রথমে বললেন, ‘‘ক্যারাটে আগামী দিনে যোগ হবে না, তা কে বলতে পারে? ক্রিকেট, দাবা কি অলিম্পিক্সে খেলা হয়?’’ তার পরে বললেন, ‘‘ক্যারাটে বিভাগে যাকে নেওয়া হয়েছে তার প্রতিভা আছে। ক্যারাটে একটা খেলা। তাই ওই খেলায় জড়িতদের উৎসাহিত করতেই ওই ছাত্রীকে নেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে ওই ছাত্রী ক্যারাটেতে যদি নাম করে তা হলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব।’’

কম্পটনবাবু এমন মন্তব্য করলেও এআইইউ চলতি শিক্ষাবর্ষের জন্য যে খেলাধূলার তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে ক্রিকেট এবং দাবা রয়েছে তা দেখা যাচ্ছে। ক্যারাটে তাতে নেই। প্রশ্ন উঠছে, এআইইউ-এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অনুমোদনপ্রাপ্ত খেলার বাইরে নিয়োগ করতে পারে কি না। আর যে খেলা জাতীয় গেমস, এশিয়ান গেমস বা অলিম্পিক্সে আজ পর্যন্ত খেলা হয়নি সেই খেলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ পড়ার সুযোগ পেলে কী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করবেন! কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমি ওই কমিটিতে ছিলাম না। তাই কিছু জানি না। গোটা ঘটনার খোঁজ নিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন