অবসান গ্ল্যামার যুগের, থেকে গেল পাঁচটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম
Sport News

সতেরোয় আবির্ভাব, বত্রিশে বিদায় মারিয়ার

মাত্র ৩২ বছর বয়সে শারাপোভার এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে তাঁর ভক্তদের হৃদয়ে ধাক্কা মারবে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:২৫
Share:

আকর্ষণ: টেনিস দুনিয়ায় মারিয়া মানেই গ্ল্যামারের ঝলক। —ফাইল চিত্র

কোর্টে আর দেখা যাবে না সেই মনমোহিনী হাসি। হাত তুলে ট্রেডমার্ক ভঙ্গিতে দর্শকদের আর বিদায় জানাবেন না টেনিস-সুন্দরী। টেনিসকেই যে ‘গুডবাই’ বলে বসলেন মারিয়া শারাপোভা।

Advertisement

মাত্র ৩২ বছর বয়সে শারাপোভার এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে তাঁর ভক্তদের হৃদয়ে ধাক্কা মারবে। কিন্তু সবার প্রিয় মারিয়া যে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন। বিখ্যাত দুই ফ্যাশন পত্রিকা ‘ভোগ’ এবং ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’-এ বুধবার শারাপোভা লিখেছেন, ‘‘টেনিস, আমি তোমাকে গুডবাই জানালাম। টেনিস র‌্যাকেট হাতে ২৮ বছর কাটিয়ে আর পাঁচটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার পরে আমি এখন অন্য শৃঙ্গ জয় করতে তৈরি।’’

চার বছরেই হাতে র‌্যাকেট: আবির্ভাবেই টেনিস কোর্টে ঝড় তুলে শুরু হয়েছিল জয়যাত্রা। সাইবেরিয়ায় জন্ম। ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচতে মারিয়া শারাপোভার বাবা-মা চলে এসেছিলেন সোচিতে। সেখানেই চার বছর বয়সে প্রথম টেনিস র‌্যাকেট হাতে তুলে নিয়েছিল খুদে মেয়েটা। ছোট থেকেই লড়াই করে বাঁচতে শিখেছেন শারাপোভা। তাঁর বাবা ইউরি যখন মেয়ের হাত ধরে ১৯৯৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পা দেন, তখন সম্বল ছিল মাত্র ৭০০ ডলার আর এক বুক স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যেতে দেননি শারাপোভা। ‘‘আমি টেনিসকে নিজের জীবনটা দিয়েছিলাম, টেনিসও আমাকে নতুন জীবন দেয়,’’ বিদায়বার্তায় লিখেছেন তিনি।

Advertisement

১৭ বছরে জন্ম এক তারকার: সুইট সিক্সটিনের গণ্ডি পেরিয়ে সদ্য সতেরোয় পা দেওয়া তরুণীর দ্যুতিতে ঝলসে গেল টেনিস দুনিয়া। যখন ২০০৪ সালে, উইম্বলডন ফাইনালে সেরিনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে শারাপোভা বুঝিয়ে দিলেন, প্রাণোচ্ছ্বল এক তরুণীর রূপান্তর ঘটছে টেনিস-রানিতে। উইম্বলডনের ইতিহাসে শারাপোভা ছিলেন তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন।

আরও পড়ুন সবাই দুরে সরে গেলেও বুমরা-শামিদের উপরে আস্থা হারাননি ম্যাকগ্রা

এর ঠিক এক বছর পরে, ১৮ বছর বয়সে বিশ্বের এক নম্বর মহিলা টেনিস খেলোয়াড়ের মুকুট ওঠে শারাপোভার মাথায়। সেই প্রথম কোনও রুশ মহিলা টেনিস বিশ্বে এক নম্বর হওয়ার সম্মান অর্জন করেন। পরের বছরই শারাপোভার ক্যাবিনেটে জায়গায় হয় যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ট্রফির। ২০১২ সালে ফরাসি ওপেন জেতার সঙ্গে সঙ্গে দশম মহিলা হিসেবে কেরিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ীদের তালিকায় জায়গা করে নেন রুশ সুন্দরী। অলিম্পিক্স পদকও আসে এর পরে।

ডোপ কেলেঙ্কারি: ২০১৬ সালের মার্চে, এক সাংবাদিক বৈঠকে শারাপোভা ঘোষণা করেন, সে বছর অস্ট্রেলীয় ওপেনের ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়েছে, তিনি মেলডোনিয়াম নিয়েছেন। হৃদরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ওষুধটি নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নিষিদ্ধ ওষুধের তালিকায় চলে গিয়েছিল মেলডোনিয়াম। শারাপোভা জানিয়েছিলেন, শারীরিক সমস্যার জন্য সেই ২০০৬ সাল থেকে এই ওষুধ খাচ্ছেন তিনি এবং তাঁর জানা ছিল না মেলডোনিয়াম নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। শারাপোভার আবেদন অগ্রাহ্য করে তাঁকে প্রথমে দু’বছরের জন্য নির্বাসনে পাঠানো হয়। পরে যা কমে ১৫ মাসে দাঁড়ায়। সেই নির্বাসন থেকে ফেরার পরে চোট-আঘাতের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে যান তিনি।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের নেপথ্যে: কখন ঠিক করলেন র‌্যাকেট তুলে রাখবেন? শারাপোভা জানিয়েছেন, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে সেরিনা উইলিয়ামসের কাছে ১-৬, ১-৬ হারের পরেই তিনি বুঝে যান, আর নয়। ‘‘ওই ম্যাচের ৩০ মিনিট আগে কাঁধের চিকিৎসা করাই, যাতে কোনও ভাবে ম্যাচটা খেলতে পারি। যদিও কাঁধের চোট আমার কাছে নতুন নয়। কিন্তু সে দিন কোর্টে নামতে পারাটাই আমার কাছে জয়ের মতো ছিল,’’ লিখেছেন শারাপোভা।

সামনে এখন কী: আপাতত ক’টা দিন নিজেকে সময় দিতে চান বহু পুরুষের হৃদয়ে ঝড় তোলা এই সুন্দরী। ‘‘পরিবারের সঙ্গে নিভৃতে সময় কাটাব। সকালে উঠে আলস্যের সঙ্গে কফির কাপে চুমুক দেব। সপ্তাহান্তে কোনও অচেনা জায়গায় হারিয়ে যাব। আর পছন্দের নাচের ক্লাস তো আছেই।’’

শারাপোভার সঙ্গে সঙ্গে টেনিস-আকাশে অস্ত গেল এক গ্লামার যুগও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন