সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ভিভিএস লক্ষণ— ভারতীয় ক্রিকেটের ফ্যাব ফোর। এক সময় ভারতীয় ক্রিকেটের ব্যাটিং বলতে এই চার জনকেই বুঝত ক্রিকেট বিশ্ব। তাঁদের ছায়ায় ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন এক দুর্দান্ত ক্রিকেটার।
প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যান একটা সময়ে নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে টিম ইন্ডিয়ায় পাকা জায়গা করে নিয়েছিলেন। নাম হেমাঙ্গ বাদানি। শীতল মস্তিষ্কের ক্রিকেটার ধারাবাহিকতার অভাবেই হারিয়ে গিয়েছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতের হয়ে ৪০টি ওয়ান ডে ম্যাচ খেললেও ৪টি মাত্র টেস্টে সুযোগ পেয়েছেন বাঁ হাতি হেমাঙ্গ বাদানি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল ১৯৯৬-৯৭ মরসুমে। ভারতের হয়ে ওডিআই ডেবিউ হয় তাঁর ২০০০ সালে। টেস্ট ডেবিউ হয় ২০০১ সালে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে হারারেতে। অভিষেক টেস্টেই ভাল পারফরম্যান্স ছিল তাঁর।
রঞ্জি ট্রফিতে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে তামিলনাড়ুর হয়ে ম্যাচকে সচিন বনাম হেমাঙ্গ বলা হত এক সময়। সচিনের সঙ্গে অসাধারাণ বন্ধুত্ব ছিল হেমাঙ্গের। মূলত মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যান হিসাবেই পরিচিত ছিলেন তিনি।
২০০২-২০০৩ সালে রঞ্জি ট্রফিতেও দারুণ পারফরম্যান্স ছিল এই বাঁহাতির। পলিশড ব্যাটসম্যান, স্লিক ফিল্ডার এমনটাই বলা হত তাঁকে। ইন্ডিয়া এ দলের হয়ে সহ-অধিনায়ক ছিলেন ইংল্যান্ড সফরে।
ইডেনে ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক টেস্টকে ক্রীড়াপ্রেমীরা মনে রেখেছেন লক্ষ্মণের ২৮১ রানে জন্যই। ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া যখন ১৬৬/৩, নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে এগোচ্ছে ম্যাচ, তখনই শর্ট লেগে স্টিভ ওয়াকে দুরন্ত ক্যাচে আউট করেন হেমাঙ্গ বাদানি। এর পর আর বেশি ক্ষণ টেকেনি অজি ইনিংস।
তাঁর টেম্পারমেন্ট মুগ্ধ করেছিল নির্বাচকদের। অজয় জাডেজার জায়গায় দলে এসেছিলেন তিনি।
২০০১ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টিম ইন্ডিয়ার হয়ে শেষ বারের মতো টেস্ট খেলেন তিনি। আসলে ধারাবাহিকতার অভাবেই প্রতিভা থাকলেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সচিন দ্রাবিড়, লক্ষ্ণণদের দাপটে খানিকটা ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন হেমাঙ্গ।
২০০৪ সালে পাকিস্তান সফরেও ভালই পারফরম্যান্স ছিল হেমাঙ্গের। কিন্তু সেটাই ছিল টিম ইন্ডিয়ার হয়ে তাঁর খেলা শেষ ওডিআই। মিডল অর্ডারে যুবরাজ, মহম্মদ কইফরা চলে আসায় তাঁর প্রতিযোগীও বেড়ে যায় দলে।
২০০৭ সালে বিদ্রোহী ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে যোগ দেন চেন্নাই সুপারস্টারের হয়ে। ২০০৯ সালে বিসিসিআই জানায়, আইসিএল ত্যাগ করলে জাতীয় দলে ফেরা যেতে পারে। তাই আইসিএল ছাড়েন। তবে আর ফেরা হয়নি জাতীয় দলে।
২০০৯-২০১০ সালে বিজয় হাজারে ট্রফিতে অংশ নেন। চেন্নাই সুপার কিংসের সঙ্গে প্রথম আইপিএলে চুক্তি হয়েছিল তাঁর।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পঞ্জাব ও বিদর্ভের মধ্যে শেষ বারের মতো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেন হেমাঙ্গ।
বর্তমানে প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করেন, গান ভালবাসেন। আর ভালবাসেন বেড়াতে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সব সময় সক্রিয় তিনি। খেলা নিয়ে নিজের মত প্রকাশও করেন। কাজ করেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হিসাবেও। সচিন তেন্ডুলকর, বীরেন্দ্র সহবাগদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রয়েছে।