ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তুঘলকি কাণ্ডকারখানার আর এক দৃষ্টান্ত হয়তো দেখা যাবে আসন্ন ঘরোয়া মরসুমে। এ বার থেকে আম্পায়াররাও ম্যাচ রেফারিদের পারফরম্যান্সের বিচার করবেন। স্কুল, কলেজের শিক্ষকরা তাঁদের প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষদের কাজের মূল্যায়নের ক্ষমতা পেলে যে রকম হয়, যেন সে রকমই।
আম্পায়ারদের ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে বিতর্ক ঘরোয়া ক্রিকেটে নতুন কোনও ঘটনা নয়। প্রতি মরসুমে আম্পায়ারিং নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকে। তাই বোর্ড আম্পায়ারদের মূল্যায়নের প্রথা চালু করেছিল কয়েক বছর আগে। মূল্যায়ন করতেন ম্যাচ রেফারিরা ও পরে আম্পায়ার্স রিভিউ কমিটি। সেই কমিটি হয়তো তুলে দিচ্ছে বোর্ড। আসন্ন মরসুম থেকে সম্ভবত শুধুমাত্র ম্যাচ রেফারিদের দেওয়া পয়েন্টের ভিত্তিতে আম্পায়ারদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে।
আবার উল্টোটাও হতে চলেছে। আম্পায়ারদের হাতেও ম্যাচ রেফারিদের পারফরম্যান্সের মূল্যায়নের ক্ষমতা দেওয়া হতে পারে। বেঙ্গালুরুতে দেশের আম্পায়ারদের নিয়ে যে সেমিনার চলছে, তাতে এই নতুন নিয়মের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। যা শুনে আম্পায়ার মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। বাংলার অন্যতম ম্যাচ রেফারি প্রণব রায় যেমন বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে আমার এতে কোনও অসুবিধা নেই। তবে সবাই এটা ভাল চোখে দেখবে কি না জানি না। আর এতে ভাল হবে কি না, তা এক বছর না গেলে বোঝা যাবে না।’’
এই সেমিনারে অংশ নেওয়া বাংলার এক আম্পায়ার বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে জানালেন, তাঁদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ বার থেকে আম্পায়ারদের আর একটিও ভুল সহ্য করা হবে না। আগে যেখানে দু’টি ভুল করলে তাঁদের পাঁচ পয়েন্ট কাটা যেত, এ বার থেকে প্রতি ভুলের জন্য আম্পায়ারদের পাঁচ পয়েন্ট খোয়াতে হবে। চালু করা হচ্ছ গ্রেডেশন এবং অবনমন পদ্ধতিও। ‘এ’ থেকে ‘ডি’— মান অনুযায়ী এই চার গ্রেডে ভাগ করা হবে তাঁদের। প্রতি গ্রুপের সেরা তিন আম্পায়ার পরের বছর চলে যাবে উপরের গ্রুপে। আর শেষ তিনে থাকা আম্পায়ারদের নীচের গ্রুপে নামিয়ে দেওয়া হবে। শোনা যাচ্ছে, ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রেডের আম্পায়াররাই সিনিয়রদের প্রতিযোগিতা যেমন রঞ্জি ট্রফি, বিজয় হাজারে ট্রফি, দলীপ ট্রফি, মুস্তাক আলি ট্রফির ম্যাচগুলি পরিচালনা করবেন।
কিন্তু বোর্ড সম্প্রতি যে ২০১৭টি ঘরোয়া ম্যাচের বিশাল সূচি প্রকাশ করেছে, সারা দেশের মাত্র ৯৭ জন আম্পায়ার ও ৫৫জন ম্যাচ রেফারিকে দিয়ে তা সম্ভব হবে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের দায়িত্ব প্রত্যাখ্যান না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আম্পায়ারদের। অগস্টে পরীক্ষার মাধ্যমে আরও জনা পঁচিশ আম্পায়ারও নাকি নিয়োগ করা হবে। একে এত ম্যাচের চাপ। তার উপর পারফরম্যান্স মূল্যায়নের আরও কড়া নিয়ম। সব মিলিয়ে ভারতীয় আম্পায়ারদের চাপ বহুগুণ বাড়তে চলেছে। এতে তাঁদের ভুল-ভ্রান্তি না আরও বেড়ে যায়।