তারকা আবেদনকারী যে চার জন...
নতুন জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলী তৈরি নিয়ে নাটক আরও জমে উঠল শুক্রবার। সব চেয়ে বেশি আগ্রহ এখন তৈরি হয়েছে, চেয়ারম্যান কে হবেন তা নিয়ে। শুরুতে চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে সব চেয়ে এগিয়ে ছিলেন লক্ষ্মণ শিবরামকৃষ্ণন। প্রাক্তন ভারতীয় লেগস্পিনার সুনীল গাওস্করের অধীনে অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম প্রধান সদস্য। তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার খুব দীর্ঘস্থায়ী না হলেও তিনি প্রার্থী হিসেবে বড় নাম। আরও বেশি করে তিনি ফেভারিট হয়ে উঠেছিলেন কারণ এন শ্রীনিবাসনের সমর্থন তাঁর দিকে রয়েছে।
কিন্তু শ্রীনি যেমন আগের মতো আর বোর্ডের সর্বময় কর্তা নেই, তেমনই তাঁর পছন্দের প্রার্থীদের টিআরপি-ও কমতে শুরু করেছে। কয়েক দিন আগেই মুম্বইয়ে বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের বৈঠকে ধোনিকে চুক্তিতে রাখতে চেয়েও পারেননি শ্রীনি। এ ক্ষেত্রেও তাঁর পছন্দের প্রার্থী শিবরামকৃষ্ণনই প্রধান নির্বাচকের পদে আসবেন, জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।
বোর্ডের মধ্যে এই মুহূর্তে যাঁরা প্রভাবশালী অংশ, তাঁদের মুখে ঘুরছে আর একটি নাম— রাজেশ চৌহান। মধ্যাঞ্চল থেকে গগন খোড়ার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। নতুন নির্বাচক হিসেবে হট ফেভারিট এখন চৌহান। যিনি মহম্মদ আজহারউদ্দিন অধিনায়ক এবং অজিত ওয়াড়েকর কোচ থাকার সময় দেশের মাঠে ভারতের ত্রিভূজ স্পিন আক্রমণের অংশ ছিলেন। তখন দেশের মাঠে ওয়াড়েকর-আজহার জুটি বেশির ভাগ ম্যাচ জিতেছিলেন স্পিন আক্রমণের নকশা সাজিয়ে। আর তাঁদের বিশ্বস্ত ত্রয়ী ছিলেন অনিল কুম্বলে, বেঙ্কটপতি রাজু এবং রাজেশ চৌহান।
শুক্রবারই নির্বাচকের পদের জন্য আবেদন করার শেষ তারিখ ছিল। হিসেব মতো দু’টি পদে নতুন লোক আনার কথা ভেবেছিল বোর্ড। দক্ষিণাঞ্চল থেকে আগের নির্বাচক প্রধান এম এস কে প্রসাদ এবং মধ্যাঞ্চল থেকে গগনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। বোর্ড ভেবে রেখেছিল, এই দু’টি পদেই শুধু পরিবর্ত আনবে। শুক্রবার শেষ দিনে সকলকে চমকে দিয়ে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন অজিত আগরকর। সমস্যা হচ্ছে, আগরকর যে অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করছেন, সেই পশ্চিমাঞ্চলের নির্বাচক যতীন পরাঞ্জপের মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। পূর্বাঞ্চলের দেবাং গাঁধী এবং উত্তরাঞ্চলের শরণদীপ সিংহের মতোই তাঁর আরও এক বছর রয়েছে। বোর্ড প্রাথমিক ভাবে ঠিক করে রেখেছিল, মেয়াদ বাকি থাকা তিন নির্বাচককে রেখে দেবে। কেউ কেউ বলছেন, লোঢা সংস্কারের পরে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই যে, একই অঞ্চল থেকে দু’জন নির্বাচক আসতে পারবেন না। তাই পরাঞ্জপে থাকলেও আগরকরের আসতে বাধা কোথায়?
কিন্তু বোর্ডের মধ্যে লোঢা সংস্কার মেনে নিতে ইচ্ছুক কর্তা দূরবিনেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই পুরনো নিয়মেই যদি একটি অঞ্চল থেকে এক জন নির্বাচককেই শুধু রাখা হয়, অবাক হওয়ার থাকবে না। আগরকর যথেষ্ট হইচই ফেলার মতো নাম হলেও এই যুক্তিতে সামান্য পিছিয়ে আছেন। শুক্রবার পর্যন্ত যা ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, পশ্চিমাঞ্চল থেকে আগরকর এবং পরাঞ্জপে দু’জনকে নির্বাচক কমিটিতে রাখার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এবং, কিছুটা হলেও পরাঞ্জপের দিকে ভোট বেশি কারণ তাঁর মেয়াদ শেষ হয়নি।
তা বলে চেয়ারম্যান নিয়ে লড়াইয়ের তীব্রতা কমার কোনও আশা নেই। আগরকর যদি দৌড়ে এগিয়ে যেতে পারেন, চেয়ারম্যান হওয়ার ব্যাপারেও তাঁর দাবি জোরালো হবে। কারণ, এখনও পর্যন্ত আবেদনকারীদের মধ্যে তিনি সব চেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন। ২৬টি টেস্ট, ১৯১টি ওয়ান ডে, ৩টি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক খেলে মোট ৩৪৯ উইকেট পেয়েছেন তিনি। এই রেকর্ড আবেদনকারীদের মধ্যে আর কারও নেই। কিন্তু পেস বোলার আগরকরকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলতে প্রস্তুত দুই স্পিনার। দক্ষিণের লেগস্পিনার শিবরামকৃষ্ণন এবং মধ্যাঞ্চলের চৌহান। যদি আগরকর সবুজ সঙ্কেত পেতে ব্যর্থ হন, এই দু’জনের মধ্যে তুল্যমূল্য লড়াই চলবে চেয়ারম্যান পদ নিয়ে। তবে নির্বাচক কারা হবেন, তা ঠিক করতে নতুন ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটি গড়তে হবে বোর্ডকে।
বয়সের দিক থেকে শিবাই এগিয়ে। লোঢা সংস্কারে আবার বলা হয়েছে, কমিটিতে যিনি সব চেয়ে বেশি টেস্ট খেলবেন, তাঁকেই চেয়ারম্যান করতে হবে। সে দিক দিয়ে শিবার চেয়ে এগিয়ে চৌহান। অফস্পিনার চৌহান খেলেছেন ২১টি টেস্ট (সঙ্গে ৩৫টি ওয়ান ডে)। শিবরামকৃষ্ণন খেলেছেন অনেক কম, মাত্র ৯টি টেস্ট (ওয়ান ডে-ও কম, ১৬টি)। প্রশ্ন উঠছে, কম টেস্ট খেলা শিবাকে তা হলে কী করে চেয়ারম্যান পদে বসানো হবে? আর অন্যান্য অঞ্চল থেকে নির্বাচক ঠিক করা নিয়ে যতই জটলা থাকুক, এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে, মধ্যাঞ্চল থেকে চৌহানই আসছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অময় খুরাসিয়ার দিকে খুব বেশি ভোট নেই। শিবরামকৃষ্ণনের নামও দক্ষিণ থেকে চূড়ান্ত হওয়ার দিকে। আর কেউ তাঁর অঞ্চল থেকে নাম জমা দিয়েছেন বলে শোনা যায়নি। শুক্রবার রাত পর্যন্ত খুব জোরালো ভাবে শোনা যাচ্ছে, আগরকর ম্যাচ ঘুরিয়ে না দিতে পারলে চেয়ারম্যান পদের জন্য জোরালো লড়াই চলবে দুই প্রাক্তন স্পিনারের মধ্যে। শিবার দিকে এক সময়কার সর্বময় কর্তা শ্রীনির সমর্থন যতই থাকুক, চৌহানও খুব একলা নন।
‘ক্যাপ্টেন’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বোর্ড কার হাতে বল তুলে দেয়, তা দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট মহল!