কেরল টিমের ম্যাসকটের সঙ্গে।
বুধবার মুম্বইয়ে সচিন তেন্ডুলকরের আত্মজীবনী প্রকাশ অনুষ্ঠানের মঞ্চে বসে দু’জনেই দাবি করেন, ‘মুলতান পর্ব’ জীবনে বহু পিছনে ফেলে এসেছেন তাঁরা। বরং অবসরের পর স্মৃতির পর্দায় অনেক বেশি উজ্জ্বল একসঙ্গে খেলার ষোলো বছরে তৈরি বেশ কিছু অবিস্মরণীয় পার্টনারশিপ। রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে সচিনের শেষ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের মাঠে পাকিস্তানকে হারানো। বিতর্কটা নয়। তার পর এ দিন সস্ত্রীক কোচি রওনা দিয়ে আইএসএলে নিজের টিম কেরল ব্লাস্টার্সের সঙ্গে গোয়ার ম্যাচ দেখেন মাঠে বসে। এমনকী সবাইকে মাঠে গিয়ে তাঁর দলকে সমর্থন করার আবেদন-সহ টুইটও করেন সচিন। যা দেখে মনে হতে বাধ্য, দারুণ ফুরফুরে আছেন মাস্টার ব্লাস্টার। ম্যাচে সচিনের কেরলই ১-০ গোলে হারাল গোয়াকে।
বইয়ের পাতায় কিন্তু স্পষ্ট উঠে এসেছে, দশ বছর পরেও নিশ্চিত ডাবল সেঞ্চুরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার যন্ত্রণা ভোলেননি সচিন। এ দিন প্রকাশিত বইয়ের নির্বাচিত অংশে রয়েছে মুলতান প্রসঙ্গ। এবং চ্যাপেলের মতোই এই ব্যাপারেও সচিন অকপট। লিখেছেন, “রাহুলের সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত হয়েছিলাম। ডিক্লেয়ার করার পিছনে কোনও বোধগম্য যুক্তি ছিল না। টেস্টের সবে দ্বিতীয় দিন, এমন নয় যে চতুর্থ দিন এবং আমাদের হাতে সময় কম। প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলাম। ড্রেসিংরুমে ফিরে একেবারে গুম মেরে যাই। পরে রাহুল বোঝাতে এলে ওকে বলেছিলাম, যা হয়েছে তার কোনও প্রভাব আমার মাঠের আচরণ বা পারফরম্যান্সে পড়বে না। কিন্তু মাঠের বাইরে আমাকে ক’টা দিন ঘাঁটিও না। আমি একা থাকতে চাই।”
ব্যাপারটা সেখানেই শেষ নয়। সচিন লিখেছেন, তিনি মারাত্মক চটেছেন বুঝে প্রথমে কোচ জন রাইট এবং পরে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এসে ‘ক্ষমা’ চেয়ে বলে যান, সিদ্ধান্তটা একান্তই দ্রাবিড়ের। তাঁরাও জানতেন না এমন হতে চলেছে। “পরে রাহুল বলতে এসেছিল, সিদ্ধান্ত দলের স্বার্থে নেওয়া। পাকিস্তানকে বোঝানো জরুরি ছিল, জিততে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমি বলেছিলাম, ‘আমার ১৯৪ রানটাও কিন্তু দলের জন্যই’। এবং মাস খানেক আগের সিডনি টেস্ট টেনে মনে করাই, সিডনিতে চতুর্থ দিনের চা-বিরতির পর ক্রিজে আমরা দু’জনে ব্যাট করছিলাম। ক্যাপ্টেন সৌরভ বারবার মাঠে লোক পাঠিয়ে জানতে চেয়েছিল, কখন ডিক্লেয়ার করা উচিত। কিন্তু রাহুল ব্যাট করে যায়। দু’টো পরিস্থিতিই তুলনীয়। বরং সিডনিতে ডিক্লেয়ার করা আরও জরুরি ছিল কারণ তাতে ম্যাচ এবং সম্ভবত সিরিজের ফয়সালা হতে পারত। মুলতানের তাগিদটা ওর সিডনিতেও দেখানো উচিত ছিল।”
১৯৯৭-এ যে ভাবে তাঁর অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, আজ পর্যন্ত ভুলতে পারেননি সচিন। লিখেছেন, “অসম্ভব অপমানিত লেগেছিল নিজেকে। সবচেয়ে খারাপ লেগেছিল বোর্ডের কেউ সিদ্ধান্তটা জানাননি। অপসারণের খবরটা প্রথম দেন এক সাংবাদিক।” তবে প্রতিজ্ঞা নেন, জবাবটা ব্যাটেই দেবেন। “বোর্ডের কর্তারা আমার ক্যাপ্টেন্সি কেড়ে নিতে পারেন কিন্তু আমার ক্রিকেট ওঁরা কাড়তে পারবেন না। আরও ভাল খেলার প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলাম সে দিন,” লিখেছেন সচিন।