সপরিবার: স্ত্রী হাসিন ও মেয়ে বেবোর সঙ্গে শামি। —নিজস্ব চিত্র
বাবা যখন বল হাতে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের প্যাভিলিয়নে পাঠাচ্ছিলেন। তখন ক্লাব হাউসে মায়ের কোলে বসেই ‘ড্যা়ডি, ড্যাডি’ বলে নাচছিল তাঁর পুঁচকে মেয়ে।
সোমবার ইডেনে ম্যাচ শেষ হতেই সেই একরত্তি মেয়েকে নিয়ে তাঁর মা হাজির ভারতীয় ড্রেসিংরুমের সামনে। তার পরে বাবার কোলে চড়েই বিরাট কোহালিদের ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়ল সেই মেয়ে। ভারতীয় ক্রিকেটারদের আদর খেয়ে ফের মায়ের কোলে চলে এল সে।
বাবার নাম মহম্মদ শামি। আর তাঁর সেই মেয়ে— আইরা ওরফে বেবো।
আরও পড়ুন: ইডেন টেস্টে অনন্য রেকর্ড অশ্বিন-জাডেজার
মেয়েকে নিয়ে এ দিন দুপুরে ইডেনে এসেছিলেন শামির স্ত্রী হাসিন জাহান। বল হাতে শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে ইডেনে তখন আগুন ঝরাচ্ছেন শামি-ভুবনেশ্বর কুমার-রা। শামির স্ত্রী-র সঙ্গে ছিলেন তাঁদের পারিবারিক বন্ধু ইন্দ্রাণী লোধ। ইন্দ্রাণী দেবী বলছিলেন, ‘‘গত বছর শামি আর হাসিন আমাকে বলেছিল, ইডেনে ভারতীয় দলের ম্যাচ দেখাতে নিয়ে যাবে। এ দিন সকালে হোয়াটসঅ্যাপ করে শামিই আমন্ত্রণ জানাল প্রথম। তার পরে হাসিন আমাকে মাঠে নিয়ে এল। আর আমরা মাঠে আসতেই ভারত জয়ের দোরগড়ায় চলে গিয়েছিল। দারুণ অভিজ্ঞতা।’’
শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে শামির হুঙ্কার।
এ দিন দুপুরে মেয়ে ও পারিবারিক বন্ধুদের নিয়ে ইডেনে এসেই কর্পোরেট বক্সে চলে গিয়েছিলেন মহম্মদ শামির স্ত্রী হাসিন। তার কিছু আগেই শামির বলে প্লেড-অন হয়ে ফিরে গিয়েছেন শ্রীলঙ্কার ওপেনার দ্বিমুত করুণারত্নে। মাঠে শ্রীলঙ্কার একটা করে উইকেট পড়ছিল আর হাসিন লাফাচ্ছিলেন উত্তেজনায়। মায়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘ড্যাডি, ড্যাডি’ বলে হাত ছুড়ছিল শামির দু’বছরের মেয়ে বেবোও। ম্যাচ তখন নাটকীয় পরিস্থিতিতে। তৈরি হচ্ছে ভারতের জেতার মতো পরিস্থিতি।
হাসিন বলছিলেন, ‘‘কর্পোরেট বক্সে বেবোকে জিজ্ঞাসা করলাম তোর ড্যাডি কোথায়? ও সঙ্গে সঙ্গে বলল, ওই তো বল করছে। তার পর ভুবি বল করতে আসতেই বলল, এ বার ভুবি আঙ্কল এসেছে। আঙ্কলও আউট করবে। তার পরে ছোট্ট মেয়ে গাইতে শুরু করে দিল ‘চন্দা হে তু, মেরা সুরজ হ্যায় তু’...।’’
উমেশ যাদব ও ভুবনেশ্বর কুমার এর পরেই পটাপট আউট করলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ ও লাহিড়ু থিরিমান্নে-কে। আরও নাচ-লাফালাফি বাড়ল মা-মেয়ের। যা দেখছিলেন বক্সের আশপাশের দর্শকরা।
এর পরেই শামির সঙ্গে শ্রীলঙ্কার উইকেটকিপার নিরোশান ডিকওয়েলা-র উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু ইডেনের বাইশ গজে। যা দেখে শামির স্ত্রী হাসিন বললেন, ‘‘দেশের হয়ে খেলতে নামলে শামির ইনভলভমেন্ট খুব বেড়ে যায়। তখন দেশকে জেতাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তখন আর কোনও কিছুই মাথায় থাকে না। শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা সময় নষ্ট করছে বলে আগুনে মেজাজটা বেরিয়ে এসেছে ওর।’’ এর পরেই শামির বলে বোল্ড শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দীনেশ চণ্ডীমল। ফের লাফ-ঝাঁপ শুরু হাসিন ও বেবোর।
ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন হাসিন। তাঁর মেয়ে তখন ভারতীয় ড্রেসিংরুমে ক্রিকেটারদের কোলে কোলে ঘুরছে। কিছুক্ষণ পরেই মেয়েকে কোলে নিয়ে স্ত্রীর পাশে এসে দাঁড়ালেন শামি। হাসিন শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন, ‘‘কনগ্র্যাটস। কামাল কর দিয়া।’’
তার আগেই শামি মাঠে বলে এসেছেন, ‘‘সময় কম ছিল। তাই আগ্রাসী হয়েছিলাম ম্যাচটা জেতার জন্য। ইডেন আমার ঘরের মাঠ। তাই জানতাম, সূর্য উঠলেই উইকেট সহজ হয়ে যাবে। আমাদের ভাগ্যটা খারাপ আজ সূর্য তাড়াতাড়ি অস্ত গেল। দু’দিন বৃষ্টির মাশুল গুণতে হল আমাদের।’’
হাসিনের অবশ্য ড্র হওয়ায় কোনও আফসোস নেই। বলছেন,, ‘‘ভারত ম্যাচটা ড্র করলেও কোনও আক্ষেপ নেই। দারুণ বল করল শামি, ভুবিরা। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে।’’