কলকাতার অদূরেই রয়েছে অরণ্য। বর্ষার জল পেয়ে তা আরও সবুজ হয়ে উঠেছে। জেনে নিন ঠিকানা। ছবি: সংগৃহীত।
পাহাড়ের ঢালে জন্মানো গাছ উঠে গিয়েছে সোজা। ঘন সবুজ পাতা। মেঘ-কুয়াশার রাজত্বে পাইন-ওকের সদর্প উপস্থিতি যেন মায়া বুনে দেয়। দার্জিলিং, কার্শিয়াং বা কালিম্পঙের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানেই পর্যটকেরা ছুটে যান পাহাড়ে। ঠান্ডা হাওয়া, বরফাবৃত পাহাড় চূড়া— সব কিছুরই এক অদ্ভুত আকর্ষণ আছে। কিন্তু হুট বললেই তো কাজকর্ম ফেলে পাহাড়মুখী হওয়া যায় না। পাহাড় না থাক, অরণ্য আছে দক্ষিণবঙ্গেও। সবুজের সান্নিধ্য পেতে কলকাতা থেকে বহু দূরে যেতেও হবে না। একটা দিন মিললেই ঘুরে আসতে পারেন গাছগাছালির স্পর্শঘেরা জায়গা থেকে।
ভালকি মাচান
বর্ধমানে চলুন ভালকির জঙ্গলে। ছবি: সংগৃহীত।
পাইন, ওক নেই ঠিকই, তবে এখানে রয়েছে শালপিয়ালের হাতছানি। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অরণ্য। সবুজ বনানীর বুক চিরে গিয়েছে কালো পিচের মসৃণ রাস্তা। কলকাতা থেকে ঘণ্টা তিনেকের পথ। বর্ধমানের আউশগ্রামেই রয়েছে এমন ঠিকানা। আউশগ্রামের জঙ্গলে বর্ধমানের মহারাজারা একটি উঁচু মাচার মতো স্থাপত্য তৈরি করিয়েছিলেন। দেখতে খানিকটা ‘ওয়াচ টাওয়ার’-এর মতো। অনেকে বলেন, সেখানে গিয়ে ভালুক শিকার করতেন রাজা। সে কারণেই এলাকার নাম ‘ভালকি মাচান’। এখন এই অরণ্যই 'ভালকির জঙ্গল' নামে পরিচিত। এখান থেকে ঘুরে নেওয়া যায় যমুনা দিঘি। ২৫ হেক্টর জায়গা জুড়ে তৈরি জলাশয়। রাজ্য মৎস্য দফতর এখানে মাছ চাষ করে। কাছাকাছি টেরাকোটার মন্দিরও দেখতে পাবেন। গ্রামের চার-পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেই আছে ডোকরাপাড়া। সেখানে গিয়ে ডোকরা শিল্পকর্মও প্রত্যক্ষ করতে পারেন। থেকে যেতে পারেন অরণ্যের মধ্যেই অতিথি নিবাসেও।
কী ভাবে যাবেন?
স্থানটি মানকর স্টেশন থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে। হাওড়া-বর্ধমান লাইনের ট্রেনে চেপে মানকর নেমে, গাড়ি বা অটো ভাড়া করে চলে আসতে পারেন। সড়কপথে এলে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর পারাজ নামক জায়গাটি হয়েও আসতে পারেন। পারাজ থেকে ভালকির দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়েও আসা যায়।
গড় মান্দারন
গড় মান্দারনে গাছগাছালি ঘেরা সুসজ্জিত উদ্যান। ছবি:সংগৃহীত।
সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের পটভূমি ছিল যে স্থান, সেই গড় মান্দারনও ঘুরে আসতে পারেন এক বার। হুগলির আরামবাগে রয়েছে এই স্থান। গ্রামের নাম মান্দারন। সেখানেই রয়েছে গড়। এখন অবশ্য তার ধ্বংসাবেশষটুকুই উঁকি দেয়। পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হল এখানকার গাছগাছালি ঘেরা পিকনিক স্পট। মূলত শীতের দিনেই সেই ভিড় থাকে। বর্ষায় এই জায়গা হয়ে ওঠে ঘন সবুজ। অনেকখানি অঞ্চল জুড়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। কোথাও যত্নে সাজানো বাগান, কোথাও নিজের মতো বেড়ে ওঠা জঙ্গল। সব মিলিয়ে গড় মান্দারন হতে পারে এক দিনের ছুটির গন্তব্য।
কী ভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে আরামবাগ বা গোঘাট লোকাল ধরে আসতে পারেন। আরামবাগ বা গোঘাট দুই স্টেশন থেকেই গড় মান্দারন যাওয়া যায়। গোঘাট থেকে দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়িতেও আসতে পারেন।
বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্য
নদিয়ার বেথুয়াডহরিতে ঘন সবুজ বনানীর মাঝে দেখতে পাবেন হরিণও। ছবি:সংগৃহীত।
ইট, কাঠের জঙ্গলের পাশাপাশি রয়েছে প্রকৃতির সান্নিধ্যও। নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ৬৭ হেক্টর জায়গার উপর গড়ে উঠেছে বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্য। চিতল হরিণ, অজগর, গন্ধগোকুল, খটাশ-সহ অসংখ্য প্রাণীর নিশ্চিন্ত বিচরণক্ষেত্র এই স্থান। গাছাগাছালিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও। অরণ্য, তৃণভূমি, জলাশয় নিয়ে তার বিস্তৃতি। ১৯৮০ সালে এটি অভয়ারণ্যের স্বীকৃতি পায়।
কী ভাবে যাবেন?
শিয়ালদহ থেকে লালগোলা প্যাসেঞ্জার ধরে বেথুয়াডহরি স্টেশনে নেমে, এখানে আসতে পারেন। বহরমপুরের বাস ধরেও বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যের সামনে নামতে পারেন। থাকার জন্য বেসরকারি হোটেল রয়েছে।
বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য
কলকাতা থেকে ১১০ কিলোমিটার গেলেই পৌঁছে যাবেন এমন এক জায়গায়, যেখানে গাছগাছালি ঘেরা অরণ্যে দেখা মিলবে হরিণের। অসংখ্য পাখিও রয়েছে সেখানে। আর রয়েছে ইছামতী। অনেকে ভৌতিক রোমাঞ্চের স্বাদ নিতে ঘুরে আসেন নীলকুঠিও। উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁর পারমাদনে রয়েছে সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত অভয়ারণ্য। জঙ্গলের ভিতরে রয়েছে নজরমিনার। বর্ষায় অভয়ারণ্যের রূপ একেবারে বদলে যায়। নজরমিনার থেকে দেখা যায় অনেক দূর পর্যন্ত। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ইছামতী। তারই অন্য পাড়ে মঙ্গলগঞ্জে ইংরেজ আমলের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে নীলকুঠি। চাইলে নৌকা করে ভেসে পড়তে পারেন নদীতে। এখানে থাকার জায়গাও আছে।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে গাড়িতেই যাওয়া যায়। সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা লাগে। শিয়ালদহ থেকে বনগাঁ গিয়ে সেখান থেকেও যেতে পারেন। দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটার। রিকশায় মোতিগঞ্জ এসে দত্তফুলিয়ার বাস ধরে নামতে হবে নলডুগরি। সেখান থেকে টোটো বা রিকশা করে অভয়ারণ্য।
খিসমা
নদিয়ার রানাঘাটে খিসমার জঙ্গলও ঘুরে আসতে পারেন এক দিনে। মূলত পাখি দেখিয়েদের কাছে পরিচিত স্থানটি। এটিও ছোটখাটো একটি জঙ্গল। গাছাগাছালি ভরা সরু পথে হাঁটাহাটি করতে এই বর্ষায় মন্দ লাগবে না। পাখি, প্রজাপতি মিলবে অঢেল। লেসার হুইসলিং ডাক, রক পিজিয়ন, এশিয়ান ওপেন বিল-সহ অনেক রকম পাখির দেখা পাবেন এখানে।
কী ভাবে যাবেন?
শিয়ালদহ থেকে গেদে লোকাল ধরে নামুন আড়ংঘাটা। সেখান থেকে টোটো করে খিসমার জঙ্গল।