চিন্তার চাপে বেড়ানো মাটি! ছবি : সংগৃহীত।
ইন্ডিগোর বিমান বিভ্রাটে দেশজুড়ে বহু ভ্রমণার্থী উদ্বিগ্ন। এরই মধ্যে কর্ণ জোহর জানালেন সফর নিয়ে তাঁর উদ্বেগর কথা। কর্ণের বক্তব্য, যে কোনও জায়গায় সফরের আগে তাঁর অদ্ভুত সব দুর্ভাবনা হতে থাকে। অকারণেই নানা বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে থাকেন তিনি। যার ফলে অনেক সময় নানা রকম অস্বাভাবিক আচরণও করে ফেলেন, যা হয়তো ‘সুস্থ অবস্থায়’ বা দুশ্চিন্তামুক্ত অবস্থায় থাকলে করতেন না।
সমাজমাধ্যমে করা একটি পোস্টে কর্ণ এ বিষয়ে সবিস্তার জানিয়েছেন। বলিউডের বহু ব্লকবাস্টার হিট ছবির পরিচালক ও প্রযোজক লিখছেন, ‘‘...কোথাও যাওয়ার সময় আমাকে সময়ের অনেক আগে এয়ারপোর্টে পৌঁছতেই হবে। এই 'আগে'টা এতটাই আগে যে, মাঝেমধ্যে আমি গ্রাউন্ড স্টাফদের আগেই গিয়ে হাজির হই।’’
এয়ারপোর্টে বা ট্রেন ধরার জন্য স্টেশনে ট্রেনের সময়ের ৩-৪ ঘণ্টা আগে পৌঁছে অপেক্ষা করা মানুষ অবশ্য আশপাশে খুঁজলে অনেক পাওয়া যাবে। যাঁরা রাতের ট্রেন ধরার জন্য সন্ধ্যা থেকে প্ল্যাটফর্মে গিয়ে হাজির হন। কিংবা দুপুরের বিমান ধরার জন্য এয়ারপোর্টে পৌঁছে যান সকালবেলাতেই। তবে বলিউড পরিচালক শুধু সেখানেই থেমে থাকেন না। কর্ণ বলছেন, ‘‘লাউঞ্জে বসে আমি কম করে ৫০ বার চেক করি, আমার পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাস এবং অন্য জরুরি নথি সঙ্গে আছে কি না। প্লেনে উঠে আসনে বসে অপেক্ষা করতে থাকি কখন পাইলট জানাবেন, আবহাওয়া কেমন? যদি ভাল বলেন, তবে খানিক স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ি। যদি বলেন, খারাপ তবে সফরের পুরো সময়টাই আমি কাঁটা হয়ে বসে থাকি। কখন প্লেনে ঝাঁকুনি হবে, এই ভেবে।’’
তবে কর্ণের অদ্ভুত আচরণ আরও অদ্ভুত হয় বিমানসেবিকা বা কর্মীদের দেখলে। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি প্রত্যেকের সঙ্গে দারুণ মিষ্টি করে কথা বলি, মিষ্টি করে হাসি। কারণ আমি মনে মনে ভাবি, দুর্ঘটনা ঘটলে যে সবচেয়ে ভাল করে কথা বলেছিল, তাকেই আগে বাঁচাতে আসবেন ওঁরা।’’
কর্ণের মতো বেড়াতে বেড়িয়ে এমন উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। অনেকেরই এমন হতে পারে। এমনকি, বলিউডেরই অভিনেতা হৃতিক রোশন, পরিচালক-প্রযোজক একতা কপূর জানিয়েওছেন যে, তাঁরাও এমন আশঙ্কা, দুশ্চিন্তা বোধ করেন। আর এই দুশ্চিন্তার একটি নামও রয়েছে— ট্রাভেল অ্যাংজ়াইটি। বাংলায় বললে, সফর নিয়ে উদ্বেগ।
সফর নিয়ে উদ্বেগ আসলে কী?
সফরের আগে, সফরের সময়, এমনকি, তার পরিকল্পনা করার সময়ও অতিরিক্ত উদ্বেগ, ভয় বা উত্তেজনা, আতঙ্ক তৈরি হলে বুঝতে হবে, এটি এক ধরনের মানসিক সমস্যা। এই উদ্বেগ কারও কারও ক্ষেত্রে এতটাই তীব্র হতে পারে যে, বেড়ানোর মতো মন ভাল করা বিষয়কেও দুর্বিষহ মনে হতে পারে।
কী দেখলে বুঝবেন আপনি ওই উদ্বেগে ভুগছেন?
১। বেড়ানোর কথা ভাবলে শারীরিক অস্বস্তি হওয়া। যেমন— দ্রুত হৃৎস্পন্দন, ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্ট, পেট খারাপ ইত্যাদি হলে বুঝতে হবে, আপনি সফর নিয়ে উদ্বেগে ভুগছেন।
২। বেড়ানোর তারিখ যতই এগিয়ে আসে, ততই বাড়তে থাকে উদ্বেগ।
৩। অপরিচিত জায়গা বা অজানা পরিস্থিতির কথা ভেবে আগাম ভয়।
৪। বাড়ি থেকে দূরে থাকায় নিজের হাতে নিয়ন্ত্রণ না থাকার অনুভূতি। যা থেকে মনের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করে।
৫। অনেকে এই উদ্বেগ থেকে প্রতি মুহূর্তে সফর বাতিল করার কথা ভাবতে থাকেন।
ভ্রমণ নিয়ে উদ্বেগ কেন হয়?
এর কোনও নির্দিষ্ট কারণ না-ও থাকতে পারে, আবার ব্যক্তিভেদে কারণ বদলেও যেতে পারে। তবে ভ্রমণ নিয়ে উদ্বেগের কয়েকটি কারণ যা অনেক ক্ষেত্রেই মিলে যায়, তা হল—
১. নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয়
ভ্রমণ মানেই নতুন পরিবেশ, সারা দিনের রুটিনে বদল। যার উপর সাধারণত কারও কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। পরিস্থিতির সাপেক্ষে পুরোটাই বদলে যায়। এ ছাড়া বিমান বা ট্রেন বাতিল হওয়া, দুর্ঘটনা ঘটার ‘আশঙ্কাও করতে থাকেন ভ্রমণ-উদ্বেগে ভোগা মানুষজন।
২. অসুস্থ হয়ে পড়ার বা আঘাত পাওয়ার ভয়
বেড়াতে বেরিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয়ও পান অনেকে। বেড়াতে বেরিয়ে কোনো আপৎকালীন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা হলে কী করবেন, তা নিয়েই চিন্তায় রাতের ঘুম ওড়ে।
৩. কোনও নির্দিষ্ট ধরনের ভয় বা ফোবিয়া
অনেকের বিমানে সফর করার ভয় থাকে। একে বলে এয়ারোফোবিয়া। কারও কারও আবার বদ্ধ জায়গায় দীর্ঘ ক্ষণ আটকে থাকতে সমস্যা হয়। যাকে বলা হয় ক্লস্ট্রোফোবিয়া। এগোরোফোবিয়া থাকলে আবার কোনো জায়গা বা পরিস্থিতি থেকে পালাতে না পারার ভয় হয়। মনে হতে থাকে, বিপদে পড়লে সাহায্য পাবেন না।
৪. পুরনো অভিজ্ঞতা
বেড়াতে বেরিয়ে কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকলে, তা থেকেও সমস্যা হতে পারে। মালপত্রের ব্যাগ হারিয়ে যাওয়া, খারাপ আবহাওয়ার মুখে পড়া বা কোনও অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা ঘটে থাকলে তা মস্তিষ্কে গভীর ছাপ ফেলে। যা পরবর্তী কালে বেড়ানোর সময় নতুন করে পুরনো ট্রমা বা ভয়কে ফিরিয়ে আনতে পারে।
৫. মিশতে না পারার সমস্যা
অনেকেরই অপরিচিত মানুষের সঙ্গে কথা বলতে বা মিশতে অসুবিধা হয়। সে ক্ষেত্রে অপরিচিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে না পারার ভয় চেপে বসে।