কফি গাছ , ফল থেকে বীজ তৈরি দেখা হবে, কফি খাওয়াও হবে, এমন কোন জায়গায় ভ্রমণ করা যায়? ছবি: সংগৃহীত।
শীতের দিনে ধূমায়িত এক কাপ কফি বড্ড ভাল লাগে। তবে সেই কফি যদি পান করা যায় কফি বাগানের কোনও ক্যাফেতে বসে, কফির ইতিহাস জানতে জানতে, তবে কেমন হয়?
ধূমায়িত এক কাপ কফি যদি কফি বাগিচার নিজস্ব ক্যাফেতেই খাওয়া যায়? ছবি: সংগৃহীত।
দার্জিলিং, মিরিক, ডুয়ার্স পরিচিত চা-বাগিচার জন্য। সেই তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ ভারতের মুন্নার থেকে উটি-ও। তবে ভারতে এমন স্থানও আছে যেখানে কফি বাগিচাকে ঘিরেই পর্যটনের প্রসার হয়েছে। আগামী শীতেই ঘুরে আসতে পারেন এমন তিন জায়গা থেকে।
চিকমগলুর, কর্নাটক
কফি গাছে ফল ধরেছে। ছবি: সংগৃহীত।
দক্ষিণ ভারতের চিকমগলুরকে বলা হয় ‘দ্য ল্যান্ড অফ কফি’ বা কফির দেশ। এ দেশে কফির জন্মস্থান হিসাবেও চিকমগলুর পরিচিত। ভারতের অন্যতম বৃহৎ কফি উৎপাদক অঞ্চল হল এটি। প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর জমিতে কফি চাষ হয়। আমরা যে কফি খাই সেটি নানা রকম প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বীজে পরিণত হয়। সেই বীজ গুঁড়ো অবস্থায় কৌটোজাত হয়ে বিক্রি হয়। কফি গাছ কেমন দেখতে, ফল থেকে বীজ কী ভাবে তৈরি হয় তা যাতে পর্যটকেরা দেখতে পারেন, সেই ব্যবস্থা রয়েছে চিকমগলুর-এ। বাগানের কফি যাতে পর্যটকেরা চেখে দেখত এবং কিনতে পারেন তেমন ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। কথিত আছে, ১৭ শতকে বাবা বুদান নামে এক সন্ন্যাসী ইয়েমেন থেকে এখানে কফির বীজ আনেন। সেই থেকেই চাষ শুরু। শুধু বিস্তীর্ণ কফি বাগিচা নয়, চিকমগলুর-এর সৌন্দর্য বাড়িয়েছে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা। শীতের দিনেও এই স্থানে ঠান্ডার বাড়াবাড়ি থাকে না। সবুজ ঢেউখেলানো পাহাড় ঘিরে রেখেছে জনপদ। এখানেই রয়েছে মুল্লায়নগিরি শৃঙ্গ। ঘুরে নিতে পারেন ঝারি ঝর্না। জঙ্গলের মধ্যে ঝর্না থেকে নেমে আসা জল জমে ছোট জলাশয় তৈরি হয়েছে। তবে সেখানে যেতে হলে হাঁটাপথই ভরসা। গাড়ি যেখানে নামাবে সেখান থেকে ২ কিলোমিটার হাঁটতে হবে। বাবা বুদানগিরি চিকমগলুরের আর একটি দ্রষ্টব্য স্থান। জায়গাটি সবুজ ঘাসের গালিচায় ঢাকা। এই স্থানও বেশ মনোরম। তবে পাহাড়ে ওঠার জন্য অনেক সিঁড়ি চড়তে হবে।পাহাড় শুধু নয়, রয়েছে জলাশয়ও।
কুর্গ
কুর্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কফির চাষ হয়। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও যে কোনও পর্যটন কেন্দ্রকে টেক্কা দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
কর্নাটকের আর এক পাহাড়ি জনপদও কফির জন্য বিখ্যাত। কুর্গকে ভারতের কফি রাজধানী বলা হয়। ‘অ্যারবিকা’ এবং ‘রোবাস্টা’ দুই ধরনের কফি বীজের চাষ হয় এখানে। কুর্গকেও কফি বাগান ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে। কফিপ্রেমীদের জন্য এই স্থানও স্বর্গরাজ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও এই পাহাড়ি শহর কম যায় না। কুর্গকে ভারতের স্কটল্যান্ড বলা হয়। ঢেউ খেলানো পাহাড়, চা-বাগান, কফি বাগিচা। ঝর্নায় ঘেরা কুর্গ দেখতে বছরভরই পর্যটকদের ভিড় থাকে। এখানে এলে ঘুরে নিতে পারেন মাদিকেরি দুর্গ, অ্যাবে জলপ্রপাত, ইরুপু ঝর্না, হোন্নামানা কেরে হ্রদ, মাল্লালি জলপ্রপাত।
মুন্নার
চা-বাগিচা, কফি বাগান, ঝর্না, ড্যাম সব নিয়েই মুন্নারের সৌন্দর্য। ছবি: সংগৃহীত।
কেরলের শৈল শহর মুন্নার জনপ্রিয় পর্যটন স্থল। এখানে চা এবং কফি উভয়ই উৎপাদন হয়। চা বাগানের পাশাপাশি একাধিক কফি বাগানও রয়েছে এখানে। ৫,২০০ ফুট উচ্চতার এই পর্যটন কেন্দ্রে সারা বছর হাল্কা শীত অনুভূত হয়। ঢেউখেলানো সবুজ চা বাগান, মশলা বাগান, ঘন জঙ্গল, উচ্ছ্বল ঝর্না, হ্রদ, পাহাড়ি নদী— এ সব নিয়েই মুন্নার অপরূপ। ভালারা জলপ্রপাত, মাট্টুপেট্টি জলাধার ঘুরে নেওয়া যায়। ঘুরে নিতে পারেন চা-কারখানা। এখানে এলেও স্থানীয় চকোলেটের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।