পুরীর রথযাত্রা দেখতে যাওয়ার প্রস্তুতি করছেন একেবারে শেষ মুহূর্তে? হোটেল না পেলে কোথায় থাকতে পারেন? ছবি: শাটারস্টক
জগন্নাথের নামে জয়ধ্বনি দিতে দিতে রশিতে টান। কেউ হাতজোড় করছেন, কারও আবার চোখে জল। আকাশ-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে ‘জয় জগন্নাথ’।
রথযাত্রার এমন আবেগঘন মুহূর্ত দেখতেই ভক্তেরা ছোটেন পুরীতে। প্রতি বছর রথযাত্রা উপলক্ষে পুরীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় করেন। কেউ জগন্নাথদেবের ত্রিমূর্তি দর্শন করতে চান, কেউ চান রথের রশি ছুঁয়ে পুণ্য অর্জনের।
পুরীর রথযাত্রা। —ছবি: শাটারস্টক।
সেই আবেগের শরিক হতে যদি একবারে শেষ মুহূর্তে ঠিক করেন পুরী যাবেন, তা হলে ট্রেনের টিকিট না পেলেও, বাস বা ব্যক্তিগত গাড়িতে সেখানে পৌঁছোতে হয়তো বিশেষ বেগ পেতে হবে না। তবে এমনটা হতে পারে, সেখানে গিয়ে মন্দিরের কাছে বা সমুদ্রের ধারে হোটেলে ঘর পেলেন না। রথযাত্রা যেহেতু পুরীর বড় উৎসব, সে কারণে এই সময় সমস্ত হোটেলেই উপচে পড়া ভিড় থাকে। পর্যটক থাকতে পারেন যে আশ্রমগুলিতে, সেখানেও থাকে পুণ্যার্থীদের ঢল। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে কোথায় ঘর খুঁজবেন?
ফ্ল্যাট বা বাড়ি: ইদানীং পুরীতে কোনও আবাসনের এক বা দুই শয়নকক্ষ বিশিষ্ট ফ্ল্যাট বা বাড়ি ভাড়া দেওয়ার চল হয়েছে। এই সমস্ত বাড়িতে রান্না করার সরঞ্জাম, ফ্রিজও থাকে। সপরিবার বেড়াতে গেলে অনেকেই খরচ আয়ত্তে রাখতে বা নিজে রান্না করে খেতে এমন জায়গা নেন। মোবাইল অ্যাপ দিয়েই তা বুকিং করা যায়। অবস্থানও দেখে নেওয়া যায়। সাধ্যের মধ্যে হোটেল না পেলে বা হোটেলে জায়গা না পেলে এমন কোনও ফ্ল্যাট বা বাড়িতেও থাকতে পারেন।
কোনার্ক
কোনার্কের সূর্যমন্দির। —নিজস্ব চিত্র।
পুরী শহর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে ওড়িশার আর এক শহর কোনার্ক। এখানেই রয়েছে বিখ্যাত সূর্যমন্দির। পাথরের তৈরির মন্দিরটির স্থাপত্যশৈলী আজও বিস্ময় উদ্রেক করে। পুরীতে রথযাত্রা দেখে চলে যেতে পারেন কোনার্ক। যাওয়ার পথেই পড়বে চন্দ্রভাগা সৈকত। পুরীর স্বর্গদ্বারের কাছে সৈকতের মতো এই স্থান অতটা জমজমাট না হলেও, সৌন্দর্য মনোরম। বিভিন্ন রকম জলক্রীড়ার সুযোগও রয়েছে সেখানে। জায়গাটি ভুবনেশ্বর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে। ঘণ্টা দুয়েকেই পৌঁছোনো যায়। কেউ সরাসরি হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে পুরীর ট্রেন না পেলে ভুবনেশ্বরের ট্রেন ধরেও আসতে পারবেন। কোনার্কে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। ওড়িশা পর্যটন দফতরের যাত্রীনিবাসও রয়েছে এখানে।
ভুবনেশ্বর: পুরীর বাইপাসের রাস্তা ধরলে ভুবনেশ্বর পৌঁছোতে সময় লাগবে যানজট না থাকলে বড়জোর ঘণ্টা দুয়েক। খুব বেশি হলে আড়াই ঘণ্টা। দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটারের মতো। পুরীতে যদি থাকার ব্যবস্থা উপযুক্ত না মনে হয়, রথযাত্রা দেখে ফিরতে পারেন ভুবনেশ্বর। রাস্তা খুবই ভাল। ভুবনেশ্বর শুধু বড় শহর নয়, এর কাছাকাছি বেশ কিছু পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে । উদয়গিরি, খণ্ডগিরি, নন্দনকানন, লিঙ্গরাজ মন্দির-সহ অনেক ঘোরার জায়গা রয়েছে সেখানে। ভুবনেশ্বরে বিভিন্ন মানের হোটেল পেয়ে যাবেন। রয়েছে প্রচুর রেস্তরাঁও।
চিল্কা: পুরী থেকে সড়কপথে ঘণ্টা দুই আড়াই গেলে চিল্কা। এটি ঈষৎ নোনা জলের উপহ্রদ। ওড়িশার পুরী, খুরদা, গঞ্জাম জেলা জুড়ে বিস্তৃত উপহ্রদটি দেখলে সমুদ্র বলেই ভুল হয়। সাতপড়া নামে একটি জায়গা থেকে চিল্কায় বোটিং করার সুযোগ মেলে। গুগ্ল ম্যাপ বলছে, পুরী থেকে সাতপড়ার দূরত্ব ৪৮.৩ কিলোমিটার। জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র চিল্কার পাশেই রয়েছে ওড়িশা পর্যটন দফতরের আবাস। কাছেপিঠে বেসরকারি কয়েকটি থাকার জায়গা তৈরি হয়েছে।
কী ভাবে পুরী যাবেন?
ভারতের যে কোনও রাজ্যের সঙ্গেই সড়ক, রেলপথে ওড়িশার সৈকতশহর যুক্ত। ভুবনেশ্বরে রয়েছে বিমানবন্দর। কলকাতা থেকে পুরী যাওয়ার একাধিক উপায় রয়েছে। হাও়়ড়া, শিয়ালদহ, শালিমার, সাঁতরাগাছি থেকে ট্রেন আছে। বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠান উপলক্ষে সাপ্তাহিক বা বিশেষ কয়েক দিনের জন্য রেল বিশেষ ট্রেনও চালায়। অন্ধ্রপ্রদেশ বা দক্ষিণ ভারতের দিকে যায় এমন অনেক ট্রেন আছে, যেগুলি পুরী না গেলেও খুরদা রোড জংশনে দাঁড়ায়। খুরদা থেকে সড়কপথে পুরী ৫৪ কিলোমিটার। হাওড়া বা শালিমার থেকে সরাসরি ট্রেনের টিকিট না পেলে সে ভাবেও আসতে পারেন। ধর্মতলা থেকে এসি বাস ছাড়ে পুরীর। কলকাতা থেকে পুরীর দূরত্ব সড়কপথে ৫০০ কিলোমিটার। খড়্গপুর, বালেশ্বর, ভদ্রক হয়ে পুরী। গাড়িতে যেতে ১২ ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে। কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বর বিমানেও যাওয়া যায়।